অটিজম কী, এই রোগ সম্পর্কে যা জানা জরুরি // অটিজম সম্পর্কে জানুন // প্রথম পর্ব: ১ // Shastho TV
অটিজম বলতে শিশুর মস্তিষ্ক সঠিকভাবে বিকাশ হয় না। মানসিক বিকাশ জনিত সমস্যা , যা শিশুটির জন্মের প্রথম তিন বছরের মধ্যেই পরিলক্ষিত হয়। বয়সের সঙ্গে একজন মানুষের যা হওয়া দরকার এ ক্ষেত্রে তা হয় না। আমাদের দেশে এখনও এই বিষয়ে অনেকেই জানেন না। অটিজম কী, এই রোগ সম্পর্কে যা জানা জরুরি।
২৭ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল ২০২৩ পর্যন্ত পালিত হচ্ছে World Autism Acceptance Week। এই সপ্তাহ উপলক্ষে অটিজম বিষয়ে
সামাজিক সচেতনতা বাড়ানোর জন্যই স্বাস্থ্য টিভি সাত পর্বে অটিজম নিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো তুলে ধরার চেষ্টা করবে। সবাইকেই জানতে হবে, জানাতে হবে।
এনিয়ে কথা বলেছেন-
ডা. সেলিনা সুলতানা
শিশু নিউরোলজি ও অটিজম বিশেষজ্ঞ
কনসালটেন্ট, নিউরোডেভলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার এবং চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড পেডিয়াট্রিক ডিপার্টমেন্ট
বেটার লাইফ হসপিটাল এবং
প্রাক্তন অটিজম বিশেষজ্ঞ, ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ এন্ড হসপিটাল।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘সেন্টার টু ডিজিস কন্ট্রোল’ মনে করে, ১৯৭০ সালে প্রতি ১০ হাজার শিশুর মধ্যে একজন শিশু অটিজমে আক্রান্ত হলেও বর্তমানে প্রতি ৫০ জনের মধ্যে একজন শিশু অটিজমে আক্রান্ত হচ্ছে।
মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রায় চার গুণ বেশি। প্রতি ৫৪ জন ছেলের মধ্যে একজন এবং ২৫২ জন মেয়ের মধ্যে একজন অটিজমে আক্রান্ত। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক প্রকাশিত ইন্টারন্যাশনাল ক্লাসিফিকেশন অব ডিজিজেস (আইসিডি ১০) এবং আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশনের বিভিন্ন রোগ শনাক্তকরণের পদ্ধতিতে (ডিএসএম ৪) এ অটিজমকে একটি ব্যাপক বিকাশজনিত সমস্যা হিসেবে সুনির্দিষ্টভাবে শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে।
অটিজমের লক্ষণ
অটিজমের লক্ষণগুলো একদম শৈশব থেকেই প্রকাশ পেতে থাকে। মা-বাবা একটু সতর্ক হলে তা সহজেই ধরতে পারেন। স্বাভাবিক একটি শিশু এক বছর বয়সে অর্থবহ অঙ্গভঙ্গি করতে পারে, ১৬ মাস বয়স থেকে একটি শব্দ বলতে পারে এবং ২ বছর বয়সে ২ শব্দের বাক্য বলতে পারে কিন্তু অটিজম আক্রান্ত শিশুর মধ্যে এ সব আচরণ দেখা যায় না। তার সমবয়সী শিশুদের সাথে বন্ধুত্ব করতে চায় না।
এই রোগে আক্রান্ত শিশু কারো সাথেই, সে সমবয়সী হোক কিংবা অন্য যে কোনো বয়সী হোক তার সাথে সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে না। কিছু কিছু বাচ্চা আবার ১ থেকে ২ বছর বয়স পর্যন্ত খেলাধুলা কথাবার্তা সব ঠিক থাকে কিন্তু হঠাৎ করে কথা ও সামাজিক মেলামেশা বন্ধ করে দেয়। এটাকে বলা হয় রিগ্রেসিভ অটিজম।
নাম ধরে ডাকলে সাধারণ শিশু সাড়া দেয়, কিন্তু অটিজমে আক্রান্ত শিশু নাম ধরে ডাকলেও সাড়া দেয় না। এ ধরণের শিশু আপন মনে থাকতে পছন্দ করে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, এরা কারো চোখের দিকে তাকায় না। কারো দিকে তাকিয়ে হাসে না কিংবা আদর করলেও ততটা সাড়া দেয় না।
সাধারণভাবে অটিস্টিক শিশুরা একই কথা বারবার বলে এবং একই কাজ বারবার করতে পছন্দ করে।
চিকিৎসা
অনেক ক্ষেত্রে অটিস্টিক বাচ্চাদের চিকিৎসায় ভালো ফল পাওয়া যায়, যদি তা দ্রুত নির্ণয় করা যায়। এই চিকিৎসা হচ্ছে একটি সম্বন্নিত চিকিৎসা যা পেডিয়াট্রিক বিশেষজ্ঞ, নিউরো রিহ্যাবিলিটেশন বিশেষজ্ঞ, অকুপেশনাল থেরাপিস্ট, স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিস্ট এবং ক্ষেত্র বিশেষে ফিজিওথেরাপিস্টের সহযোগিতায় প্রতিটি অটিস্টিক বাচ্চার জন্য আলাদা আলাদাভাবে ডিজাইন করা হয়।
এ ধরনের বাচ্চাদের জন্য এখন বাংলাদেশেই বিশেষায়িত কয়েকটি স্কুল আছে, যেখানে তাদের জন্য বিশেষ পাঠদানের ব্যবস্থা করা হয়। তবে এটা নির্ভর করবে তার অকুপেশনাল থেরাপিস্ট এর পরামর্শের ওপর। তিনি বাচ্চার সক্ষমতা বুঝে সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত দেবেন কোন স্কুল তার জন্য ভালো হবে।
অনেক অটিস্টিক শিশুর কিছু মানসিক সমস্যা যেমন অতি চঞ্চলতা, অতিরিক্ত ভীতি, মনোযোগের সমস্যা, ঘন ঘন মনের অবস্থা পরিবর্তন হওয়া, ঘুমের সমস্যা ইত্যাদি থাকে। এসব ক্ষেত্রে অনেক সময় সাইকিয়াট্রিস্ট ওষুধের ব্যবহার করে থাকেন।
অটিস্টিক শিশুদের কোনো ‘মিরাকল চিকিৎসা’ নেই। পরিবার, আত্মীয়-পরিজন, সমাজ, শিক্ষক-শিক্ষিকা, চিকিৎসকসহ সকলের সাহায্য সহযোগিতায় একটি অটিস্টিক শিশুর জীবন হয়ে উঠতে পারে আনন্দময় ও অর্থবহুল।