প্রস্রাবের রং দেখে রোগ চেনা

আমাদের শরীর থেকে প্রতিদিন প্রায় ১-২ লিটার পানি প্রস্রাব আকারে বেরিয়ে যায়। প্রস্রাবের সঙ্গে শরীর থেকে বিষাক্ত ও অপ্রয়োজনীয় দ্রব্য বের করে দেওয়ার কাজটি করে আমাদের দুটি কিডনি। সাধারণভাবে প্রস্রাবের রং পানির মতো কিংবা হাল্কা বাদামি হতে পারে। এই রং নির্ভর করে পানি পানের পরিমাণ, খাদ্য কিংবা কোনো রোগ বা ওষুধের ওপর। তবে বিভিন্ন কারণে তা ঘোলাটে, লাল, গাঢ় হলুদ, সবুজ, কমলা, নীল কিংবা সবুজ রঙের হতে পারে। কাজেই শুধু প্রস্রাবের রং দেখেই শরীরের অবস্থা সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পাওয়া সম্ভব।
প্রস্রাবের রং অস্বাভাবিক মানেই রোগ নয়। যেমন পানি কম খেলে প্রস্রাব হলুদ হতে পারে। আবার গাজর বা ভিটামিন বি ও ভিটামিন সি বেশি খেলে প্রস্রাব কমলা রঙের হতে পারে। এমনকি যক্ষ্মার ওষুধ রিফামপিসিন কিংবা ফেনোপাইরাজিনের কারণেও প্রস্রাব কমলা রঙের হতে পারে। তবে হেপাটাইটিস হলে প্রস্রাব গাঢ় হলুদ বর্ণ ধারণ করে।

প্রচুর খাবার খেলে কিংবা ফসফেটসমৃদ্ধ খাবার যথা দুধ খেলে ঘোলাটে প্রস্রাব হতে পারে। তবে প্রচুর পানি পান করলে এই সমস্যা কেটে যাবে। কিন্তু এর পরও এটি না কমলে এবং প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া থাকলে ধরে নেয়া যায় ইনফেকশনের জন্য এমন হচ্ছে।

প্রচুর পানি খেলে প্রস্রাব বর্ণহীন হয়। মেলানোমার কারণে কালো বা ডার্ক কালার হয়। এসপারাগাস খেলে প্রস্রাব সবুজ হয়। প্রস্রাব সিউডোমোনাস ইনফেকশন বা উঁচু মাত্রার ক্যালসিয়াম থাকলে প্রস্রাব হালকা নীল হয়।
বিট, ব্লাকবেরি-জাতীয় খাবারে প্রস্রাব লাল হতে পারে। তবে প্রস্রাবের রং লাল হওয়ার অন্যতম কারণ রক্ত বা রক্তের উপাদান। রক্ত থাকলে একে হেমাচুরিয়া এবং হিমোগ্লোবিন থাকলে একে হিমোগ্লোবিনোরিয়া বলে। আঘাতজনিত কারণে বা কিডনি, মূত্রাশয়, মূত্রনালিতে ইনফেকশন, পাথর কিংবা ক্যান্সার হলে, বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এজিএন বা গ্লুমেরুলোনেফ্রাইটিস কারণে প্রস্রাব লালচে হয়।

রোগ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে শরীরে অন্য কোনো উপসর্গ যেমন জ্বর, চোখ-মুখ ফুলে যাওয়া, হাত-পায়ে পানি আসা ইত্যাদি লক্ষণ আছে কি না দেখতে হবে। কিন্তু খাবার, পানি বা কোনো ওষুধ গ্রহণ ব্যতিরেকেই যদি প্রস্রাবের বর্ণ পরিবর্তন হয় এবং উপরের লক্ষণ দেখা যায়, তবে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ডা. জিয়াউল হক
বিএসএমএমইউ, ঢাকা

Exit mobile version