জেনে রাখুন, সুস্থ থাকুন

স্লিপ প্যারালাইসিস কেন হয়?

Published

on

অনেকেই প্রায়ই গভীর ঘুম থেকে জেগে ওঠেন। অনুভব করেন যে তার শরীরের ওপর ভারী কিছু চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এই চাপ এতটাই ভারী যে তিনি শ্বাস নিতে পারেন না এবং পাশের কাউকেও ডাকতে পারেন না। ‘ঘুমটা হঠাৎ ভেঙে যায়।
মনে হয় যে আমার কোনো শক্তি নেই। হাত-পা নাড়ানোর মতো, মুখে আওয়াজ করার মতো শক্তি পাই না। অনেক চেষ্টা করলে কেবল গোঙানির মতো শব্দ হয়।
এই অভিজ্ঞতা, যা অনেকেই ‘বোবায় ধরা’ হিসেবে জানেন, আসলে একটি চিকিৎসাশাস্ত্রীয় সমস্যা যাকে স্লিপ প্যারালাইসিস বা ঘুমের মধ্যে পক্ষাঘাত বলা হয়।

স্লিপ প্যারালাইসিস হলে একজন ব্যক্তি কিছু সময়ের জন্য কথা বলা বা নাড়াচাড়া করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। এটি সাধারণত কয়েক সেকেন্ড থেকে এক মিনিট স্থায়ী হতে পারে, কিন্তু এই সময়ে ভয়ংকর অভিজ্ঞতা হয়।

স্লিপ প্যারালাইসিস কেন হয়?
স্লিপ প্যারালাইসিস একটি স্নায়ুজনিত সমস্যা যা গভীর ঘুম ও জাগরণের মাঝামাঝি সময়ে ঘটে। ঘুমের এই পর্যায়কে বলা হয় র‍্যাপিড আই মুভমেন্ট (রেম), যেখানে মস্তিষ্ক খুব সক্রিয় থাকে এবং স্বপ্ন দেখে।

এই সময়ে শরীরের পেশীগুলি অকার্যকর থাকে, ফলে মস্তিষ্ক সচল থাকলেও শরীর অবশ মনে হয়। এই সমস্যা কোন নির্দিষ্ট বয়সে হয় না, তরুণ-তরুণী এবং কিশোররা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়। ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা সংস্থার তথ্যানুসারে, কিছু কারণ স্লিপ প্যারালাইসিসের জন্য দায়ী হতে পারে:

Advertisement

পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব বা অসংগঠিত ঘুম।
মাদকাসক্তি, ধূমপান বা মদপান।
পরিবারের ইতিহাসে স্লিপ প্যারালাইসিস।
মানসিক সমস্যা যেমন সোশ্যাল অ্যাঙ্কজাইটি, প্যানিক ডিসঅর্ডার বা বাইপোলার ডিজঅর্ডার।

বোবায় ধরা কেমন হয়?
স্লিপ প্যারালাইসিসের সাধারণ লক্ষণগুলি হলো:
নিশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, বুকের মধ্যে চাপ অনুভূতি।
চোখ খুলতে বা নাড়াতে সমস্যা।
আশেপাশে অজানা কোনো ব্যক্তি বা বস্তু দেখার অনুভূতি।
ভয় এবং শরীর ঘেমে যাওয়া।
হৃৎস্পন্দন ও শ্বাসপ্রশ্বাসের গতি বেড়ে যাওয়া।
কিছু সেকেন্ড থেকে এক মিনিট পর্যন্ত প্রভাব স্থায়ী হতে পারে।
মুক্তির উপায়
স্লিপ প্যারালাইসিস সাধারণত গুরুতর কোনো রোগ নয় এবং নিজে থেকেই ভালো হয়ে যেতে পারে।

এই সমস্যা মোকাবিলা করার জন্য কিছু সাধারণ পরামর্শ:
রাতে ৬-৮ ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন এবং সেই ঘুম যেন গভীর হয়।
একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং সকালে নির্দিষ্ট সময়ে উঠার অভ্যাস করা।
শোবার ঘর আরামদায়ক রাখতে এবং কোলাহলমুক্ত রাখতে চেষ্টা করুন।
ঘুমানোর আগ মুহূর্তে ভারী খাবার, ধূমপান, মদপান এবং ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলুন।
ঘুমানোর অন্তত চার ঘণ্টা আগে ব্যায়াম করা।
ঘুমানোর সময় মোবাইল ফোন বা ল্যাপটপ ঘরের বাইরে রাখা।
দিনের বেলা দীর্ঘসময় ঘুম থেকে বিরত থাকা।
স্লিপ প্যারালাইসিসের সময় মনকে শান্ত রাখুন এবং শরীর নাড়াচাড়া করা থেকে বিরত থাকুন।

চিকিৎসকের পরামর্শ কখন নেবেন
যদি স্লিপ প্যারালাইসিস বারবার ঘটে বা গুরুতর হয়, তাহলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। চিকিৎসক রক্তচাপ ও অন্যান্য স্বাস্থ্যের পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবেন এবং প্রয়োজনে অ্যান্টি ডিপ্রেসেন্ট ওষুধ প্রদান করতে পারেন।

স্লিপ প্যারালাইসিসের সময় মস্তিষ্ক সচল থাকলেও শরীর শিথিল থাকে। এটি মূলত মস্তিষ্কে গ্লাইসিন এবং গ্যাবা নামক রাসায়নিকের নিঃসরণের কারণে ঘটে।

Advertisement

যদিও স্লিপ প্যারালাইসিস সাধারণত বিপজ্জনক নয়, এটি জীবনযাপনের মান প্রভাবিত করতে পারে। এই সমস্যা সম্পর্কে সচেতনতা এবং সঠিক ঘুমের অভ্যাস গড়ে তোলা গুরুত্বপূর্ণ।

Trending

Exit mobile version