(ক) টিকাদান পদ্ধতি
(খ) এ্যান্টিবায়োটিক দ্বারা জীবাণুনাশক পদ্ধতি
(গ) ওরস্যালাইনের ন্যায় রোগজনিত ক্ষয়পূরণ দ্বারা রোগমুক্ত করার পদ্ধতি
সংক্রামক রোগের কারণ : উপরোক্ত জীবাণু এবং ভাইরাস নামক পরজীবীরা নিজেরা বেঁচে থাকার এবং বংশবিস্তার করার জন্য মানুষের দেহে প্রবেশ করে। কিন্তু এর ফলে মানুষের দেহের আভ্যন্তরীণ পরিবেশ দূষিত হয়ে যায় এবং মানুষটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। যে মানুষের দেহের রোগপ্রতিরোধ বাহিনী সুস্থ এবং সবল, সে মানুষের দেহে কোন রকম পরজীবী প্রবেশ করতেই পারে না কিংবা প্রবেশ করলেও বেশীক্ষণ টিকে থাকতে পারে না। রোগপ্রতিরোধ বাহিনী এদেরকে ধবংস করে ফেলে । এ সকল পরজীবী দ্বারা সৃষ্ট রোগসমূহের মধ্যে কতিপয় রোগ হচ্ছে কলেরা, বসন্ত, হাম, পোলিও ইত্যাদি। এহেন সংক্রামক ব্যাধির জীবাণু এবং ভাইরাসকে বিজ্ঞানীরা অণূবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে সনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন বলে এদের প্রতিকারও সম্ভব হয়েছে। উপরোক্ত যে তিনটি উপায়ে এদের প্রতিকার করা সম্ভব হয়েছে সেগুলোর ব্যাখ্যা নিম্নরূপ,
(ক) টিকাদান পদ্ধতি : যে সকল রোগজীবাণুকে মানবদেহের বাইরে কৃত্রিমভাবে অন্য কোন মাধ্যমের ভিতর কালচার বা চাষ করা সম্ভব হয়েছে সে সকল রোগজীবাণুর মৃতদেহকে এ্যাটেনুয়েটেড বা ‘রোগ সৃষ্টিকারী ক্ষমতাবিহীন’ করে অতি অল্প পরিমাণে একটি সুস্থ মানুষের দেহে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে রোগপ্রতিরোধ বাহিনী রোগজীবাণুটিকে চিনে নিয়ে এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সক্ষম বাহিনীকে দেহের সকল প্রবেশদ্বারে মোতায়েন করে রাখে। ফলে অনুরূপ রোগজীবাণু মানুষের দেহে প্রবেশ করতে গেলে তাদেরকে ধবংস করা হয়। এরই নাম টিকাদান পদ্ধতি। কলেরা, বসন্ত, হাম, পোলিও, ধনুষ্টংকার ইত্যাদি মাত্র গুটিকয়েক সংক্রামক রোগকে এই পদ্ধতিতে বিশ্ব হতে নির্মূল করা সম্ভব হয়েছে । যদিও যক্ষ্মা রোগের টিকা আবিষ্কৃত হয়েছে কিন্তু কিছু জটিল কারণে একে সম্পূর্ণ নির্মূল করা সম্ভব হয়নি।
(খ) এ্যান্টিবায়োটিক দ্বারা জীবাণুনাশক পদ্ধতি : যে সকল জীবাণুকে দেহের বাইরে চাষ করে টিকা তৈরি করা যায় না, সেগুলোর ভিতর কতগুলো জীবাণুকে ধ্বংস করার জন্য এ্যান্টিবায়োটিক নামক জীবাণুনাশক ওষুধ ব্যবহার করা হয়। কিন্তু সব ধরনের জীবাণু এবং ভাইরাসকে এ্যান্টিবায়োটিক দ্বারা বিনাশ করা সম্ভব নয় । এ্যান্টিবায়োটিকের এই সীমাবদ্ধতার ফলে সংক্রামক ব্যাধিসমুহকে ষোলআনা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি ।
আধুনিক চিকিত্সায় সংক্রামক রোগের প্রধান ওষুধ হচ্ছে এ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধ যা উপরোক্ত সংক্রামক রোগজীবাণুকে ধ্বংস করতে গিয়ে ক্ষতিকর এবং উপকারী উভয়বিধ জীবাণুসমূহকে ধবংস করে ফেলে। দেহে বিদ্যমান উপকারী জীবাণুসমূহের ধ্বংসের কারণে ক্ষতিকর জীবাণু দ্বারা সৃষ্ট রোগবিষসমূহ দেহে সঞ্চিত হতে থাকে। এর ফলে দেহের আভ্যন্তরীন পরিবেশ বিষে ভারাক্রান্ত হওয়ার ফলে অধিকতর শক্তিশালী জীবাণুরা দেহে প্রবেশ করার সুযোগ পায়, যেগুলোকে পূর্বে ব্যবহৃত এ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ দ্বারা আর ধ্বংস করা সম্ভব হয়না। তখন অধিকতর শক্তিশালী এ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়ে, যা অধিক পরিমাণে বন্ধু ব্যাকটেরিয়াকে ধবংস করে আরো শক্তিশালী জীবাণুকে দেহে প্রবেশ করার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়। এভাবে একটি ভিশিয়াস সার্কল বা দুষ্টচক্র প্রতিষ্ঠিত হয়, যার পরিণামে বর্তমানে দৃশ্যমান একটির পর একটি এ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ অকার্যকর হতে দেখা যায় এবং পূর্বের চাইতে মানবদেহে শক্তিশালী রোগজীবাণূর বারবার আক্রমণের হারের বৃদ্ধি পরিলক্ষিত হয়। এজন্য মানুষ দেহের পুষ্টির অভাবকেই দায়ী বলে ভেবে থাকে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে জীবাণুধবংসকারী ওষুধের কথা মানুষের চিন্তায়ও আসে না। বিষয়টি ইতিপূর্বে ফ্লোচার্টের সাহায্যে প্রদর্শিত হয়েছে।
(গ) ওরস্যালাইনের ন্যায় রোগজনিত ক্ষয়পূরণ দ্বারা রোগমুক্ত করার পদ্ধতি : এ্যান্টিবায়োটিক কিংবা টিকা দ্বারা যে জীবাণুকে দমন করা যায় না, সে সকল ক্ষেত্রে অসুস্থ দেহের রোগকষ্টজনিত ক্ষয়পূরণ করে অপেক্ষা করতে হয় যতক্ষণ পর্যন্ত না রোগীর দেহের নিজস্ব রোগপ্রতিরোধ বাহিনী শক্তিসঞ্চয় করে বহিঃশত্রুকে ধ্বংস করতে সক্ষম হয়। উদাহরণস্বরূপ, ডায়ারিয়া রোগের বেলায় যেমন ওরস্যালাইন খাইয়ে পানিশূণ্যতাজনিত ক্ষয়পূরণ করা হয়। তেমনিভাবে বেদনা নাশক, পাতলা পায়খানা রোধক, বমি নাশক, জ্বর নাশক ইত্যাদি ওষুধের দ্বারা দেহের ক্ষতিকে সীমাবদ্ধ করে রাখা হয়, যাতে রোগকষ্ট রোগীর প্রাণনাশ করতে না পারে। এ যাবত যে সকল রোগের কথা বলা হল সেগুলো হচ্ছে সংক্রামক রোগ। এদের সৃষ্টির কারণকে বিজ্ঞানীরা সনাক্ত করতে পেরেছেন। তাই এদের কোন না কোন উপায়ে প্রতিকার করা সম্ভব হয়েছে।