ডা. জিয়াউল হক
‘পাওয়ার হাউস অব নিউট্রিসন’ নামে খ্যাত পালংশাকের প্রতি ১০০ গ্রামে রয়েছে জলীয় অংশ ৯০ দশমিক ৮০ গ্রাম, খনিজ পদার্থ ১ দশমিক ৮ গ্রাম, অঁাঁশ ০.৬ গ্রাম, খাদ্যশক্তি ৩০ কিলো ক্যালরি, প্রোটিন ৩ দশমিক ৩ গ্রাম, চর্বি ০.১ গ্রাম, শর্করা ৪.০ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১০০-৩০০ মিলিগ্রাম, আয়রন ১০ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ৮৪৭০ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন বি১ ০.০৩ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি২ ০.০৯ মিলিগ্রাম, ভিটামিন-সি ৯৭ মিলিগ্রাম। এ ছাড়া এতে ভিটামিন ই, কে, ফলিক এসিড, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, কপার, জিংক, ফসফরাস, নিয়াসিন, সেলেনিয়াম, ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড রয়েছে।
পালংশাকের ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট, ফ্ল্যাভোনয়েডস, ক্যারোটিনয়েডস (বিটা ক্যারোটিন, লিউটিন, জিয়াজ্যান্থিন), কপার, জিংক এবং ভিটামিন-এ, সি ইত্যাদি অ্যান্টি অঙ্েিডন্ট হিসেবে কাজ করে। ভিটামিন ও খনিজ লবণসহ বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানসমৃদ্ধ পালংশাক নিয়মিত খেলে_
বার্ধক্য জয়
পালং শাকের অ্যান্টি অঙ্েিডন্ট তারুণ্য ধরে রাখে। এ ছাড়া ভিটামিন ও খনিজ লবণ হাড়ের ক্ষয়রোধ করে এবং দৃঢ়তা বাড়ায়।
সতেজ মন-মস্তিষ্ক
পালংশাক অ্যান্টি মস্তিষ্কের কোষগুলোকে সতেজ রাখে এবং কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। অ্যালঝেইমার রোগীদের স্নায়ুর ক্ষতি কমায়। স্ট্রোক বা অঙ্গ অবশ, মাংসপেশির দুর্বলতা এমনকি মানসিক ভারসাম্য হারানোর আশঙ্কা হ্রাস করে।
ক্যান্সার প্রতিরোধ
বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার, যেমন_প্রোস্টেট, জরায়ু, স্তন এবং পাকস্থলীর ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করে।
হৃদরোগ, রক্ত ও রক্তনালি
হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, রক্তনালির অ্যাথেরোসেক্লরোসিস কমাতে সাহায্য করে। রক্তস্বল্পতা দূর করে, রক্তনালির শক্ত হয়ে যাওয়া কমিয়ে দেয়।
মা ও শিশু
ফলিক এসিড গর্ভাবস্থায় এবং স্তন্যদানকারী মায়েদের ম্যাগালোব্লাস্টিক এনিমিয়া প্রতিরোধ করে। গর্ভের শিশুর যথাযথ বৃদ্ধি এবং নিউরাল টিউব ত্রুটি থেকে রক্ষা করে। এ ছাড়া থ্রেটেন্ড অ্যাবরশন, রক্তক্ষরণ, ওজন হ্রাস, শ্বাসকষ্ট দূর করে।
ডায়াবেটিস
প্রতিদিন আধা কাপ পালংশাকের রস পান করলে তা ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
অ্যান্টি ইনফ্ল্যামাটারি
অ্যাজমা, অস্টিও-আর্থাইটিস, রিউমেটয়েড-আর্থাইটিস প্রতিরোধে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড অ্যান্টিইনফ্ল্যামাটারি ভূমিকা পালন করে।
অন্ধত্ব রোধ
আমেরিকার মেরিল্যান্ডের ন্যাশনাল আই ইনস্টিটিউটের গবেষকরা দেখেছেন, লুটিন এবং জিয়াঙ্ানথিন নামে দুটি ক্যারোটিলয়েড যৌগের কল্যাণে অন্ধত্ব রোধ করা যায়। শুধু তা-ই নয়, যেসব আলোকরশ্মি ম্যাকুলা ও রেটিনা তথা চোখের মণির পেছনের আলোক সংবেদি পর্দার ক্ষতি করে, সেসব ক্ষতি রোধের ক্ষমতা রয়েছে এদের। এ ছাড়া চোখের ছানি, রাতকানা প্রতিরোধ করে।
অন্যান্য
কোষ্ঠকাঠিন্য, এসিডোসিস, দাঁতের সমস্যা প্রতিরোধ করে।
সতর্কতা
> পালংশাকে অঙ্ালেট এবং পিউরিন আছে। কাজেই যাঁদের কিডনি এবং পিত্তথলিতে পাথর আছে বা গাউট রোগে আক্রান্ত তাঁদের পালংশাক অল্প খাওয়া উচিত।
> সর্বোচ্চ পুষ্টি পেতে ফ্রেস পালংশাক থেকে খেতে হবে। ফ্রিজে সাত দিন রাখলে এর পুষ্টিগুণ অর্ধেকে নেমে আসে।
তথ্য সহায়তা : তৃপ্তি চৌধুরী
পুষ্টিবিদ, বিএসএমএমইউ, ঢাকা