আগামী জুন মাসের ভেতরে বাংলাদেশ সাড়ে পাঁচ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে অথবা ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিকে বাংলাদেশ অক্সফোর্ড–অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করোনার টিকা পাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছে মন্ত্রী। তিনি জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যখনই এ টিকার অনুমোদন দেবে বাংলাদেশ তখনই টিকা পাবে। একইসঙ্গে মে অথবা জুন মাসের ভেতরে কো-ভ্যাক্সের আওতায় ভ্যাকসিন পাবে। যেখান থেকে দেশের জনগোষ্ঠীর ২০ শতাংশ মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশব্যাপী সবারই মনের মধ্যে প্রশ্ন সবাই কী ভ্যাকসিন নিতে পারবেন? এই অবস্থা নিরসনে সঠিক ও কার্যকরভাবে টিকা প্রদানের লক্ষ্যে কাজ করছে কোভিড-১৯ টিকা ব্যবস্থাপনার জন্য জাতীয় পর্যায়ে তিনটি কমিটি। প্রাথমিকভাবে ২০ শতাংশ যারা টিকা নেবেন তাদের নির্ধারণ করার জন্য দেশে ইতিমধ্যে কোভিড-১৯ টিকা ব্যবস্থাপনার জন্য জাতীয় পর্যায়ে তিনটি কমিটি গঠিত হয়েছে। জাতীয় কোভিড-১৯ টিকা বিতরণ ও প্রস্তুতি পরিকল্পনার প্রাথমিক খসড়া ইতিমধ্যে জমা দেওয়া হয়েছে অনুমোদনের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে।
কাদের দেওয়া হবে? কিভাবে দেওয়া হবে
খসড়া পরিকল্পনা অনুসারে মোট চারটি পর্যায়ে বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়া হবে। বাকি ২০ শতাংশকে হার্ড ইমিউনিটির (গণরোগ প্রতিরোধক্ষমতা) কারণে টিকা দেওয়ার প্রয়োজন পড়বে না।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন ২০ বছরের নিচে কাউকেই ভ্যাকসিন দেওয়া হবে না। এছাড়া দেশের এক কোটি মানুষ আছেন দেশের বাইরে। বছরে গর্ভবতী নারীর সংখ্যা প্রায় ৩৫ লাখ। এবং আরও কিছু অসুখ রয়েছে যাদেরকে এই ভ্যাকসিন দেওয়া যাবে না। তাতে করে প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি মানুষ এই মুহূর্তে ভ্যাকসিনের টিকার প্রয়োজন হবে না অর্থ্যাৎ তারা কোভিড ভ্যাকসিন কার্যক্রমের বাইরে থাকেবন।
আর ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি। কাজেই ভ্যাকসিন পাওয়া এবং না পাওয়ার মধ্যে খুব বেশি গ্যাপ থাকবে না। যেটুকু গ্যাপও থাকছে, সেটাও পর্যায়ক্রমে পূরণ করে ফেলা হবে।
বেশিরভাগ মানুষকে ভ্যাকসিন দিতে কতদিন লাগতে পারে জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানালেন, অ্যাস্ট্রাজেনেকার দিতেই ছয়মাস লাগবে। কোভ্যাক্সের ভ্যাকসিনও একবারে পাওয়া যাবে না। সবমিলিয়ে একবছর বা তারও বেশি লাগতে পারে।
গর্ভবতী নারী এবং ১৮ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে করোনার ভ্যাকসিনের ট্রায়াল হয়নি জানিয়ে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন কার্যক্রমের বাইরে জানতে চাইলে জাতীয় কোভিড-১৯ টিকা বিতরণ কমিটির প্রধান ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, তাদের সর্ম্পকে পরিস্কার কোনও রিকমেন্ডেশন নাই। যতক্ষণ পর্যন্ত না তাদের বিষয়ে সেফটি ইস্যু না জানবো ততক্ষণ পর্যন্ত ভ্যাকসিন দেওয়া হবে না। এখন পর্যন্ত তাই তারা এ কার্যক্রমের আওতার বাইরে।
তিনি বলেন, সাধারণত অন্য সময়ে গর্ভবতী নারী এবং শিশুদের বরং প্রাধান্য দেই, এখানে এটা ভিন্ন হচ্ছে। কারণ, এগুলো সবই ইমার্জেন্সি অ্যাপ্রুভাল পাওয়া ভ্যাকসিন। বাচ্চাদের ওপর যতক্ষণ ট্রায়াল হয়ে সেফটি রেজাল্ট না পাওয়া যাচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা সেটা দিতে পারি না। আপাতত তাই এই গ্রুপটা ভ্যাকসিনের বাইরে থাকছে।
অপরদিকে, যারা বয়স্ক এবং অন্যান্য রোগে আক্রান্তদের ‘প্রায়োরিটি’ দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, যাদের কোমরবিডিটি রয়েছে, যাদের কমপ্লিকেশন হলে মৃত্যুহার বেশি থাকে তাদেরকে দেওয়া হবে। কারন তাদের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনও নিষেধাজ্ঞা নাই। আমাদের তালিকাতে ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কারদের বাদ দিয়ে যাদের মধ্যে হলে মৃত্যু হারের আশঙ্কা বেশি তাদেরকে প্রায়োরিটি তালিকাতে ধরেছি, এই তালিকাতে বয়স্ক, অন্যান্য রোগে আক্রান্ত তারা রয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক অতিরিক্ত পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, শিশু ও গর্ভবতীদের ওপর ট্রায়াল হয়নি বলেই আমরা তাদের ভ্যাকসিনের তালিকার বাইরে রাখছি।
আর যেহেতু ভ্যাকসিনই করোনার সমাধান নয় জানিয়ে অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, আমাদেরকে অবশ্যই সংক্রমণ কমিয়ে আনতে হবে। ট্রেসিং-টেস্টিং-আইসোলেশন-কোয়ারেন্টিন, এগুলো যদি আমরা বাড়িয়ে ফেলি তাহলে সংক্রমণ কমবে। তখন এই ভ্যাকসিন কার্যক্রমের আওতার বাইরে থাকলেও তাদের ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম হবে।