চিকিৎসার নামে জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আনিসুল করিমকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় আলোচিত রাজধানীর আদাবরের মাইন্ড এইড হাসপাতাল তালা লাগিয়ে দিয়েছে পুলিশ।
এদিকে ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আরও একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যিনি একজন চিকিৎসক এবং ওই হাসপাতালের অন্যতম মালিক। এ নিয়ে মোট ১১ জনকে এ ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হল। তাদের মধ্যে হাসপাতালের ১০ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত।
বরিশাল মহানগর ট্রাফিক পুলিশের সহকারী কমিশনার আনিসুল করিম (৩৫) মানসিক চিকিৎসার জন্য সোমবার আদাবরের ওই হাসপাতালে যান। কিন্তু চিকিৎসার বদলে সেখানে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় আনিসুলের বাবা ফাইজ্জুদ্দিন আহমেদ মোট ১৫ জনকে আসামি করে আদাবর থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন।
মামলার অন্যতম আসামি নিয়াজ মোর্শেদকে মঙ্গলবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “গ্রেপ্তার এই ডাক্তার মাইন্ড এইড হাসপাতালের একজন পরিচালক। অসুস্থতার কারণে বর্তমানে তিনি নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।”
এর আগে সকালে পুলিশের এক সংবাদ সম্মেলনে উপ কমিশনার হারুন ওই হাসপাতালের ১০ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানিয়ে বলেছিলেন, “এটি একটি হত্যাকাণ্ড। সরকারি মানসিক হাসপাতালে ভর্তির কিছু পরেই আনিসুলকে ওই নিরাময় কেন্দ্রে নেওয়া হয়।”
এর পেছনে ‘দালালদের’ সংশ্লিষ্টতার আভাস দিয়ে উপ কমিশনার হারুন বলেন, “ওই হাসপাতালের বৈধ কোনো কাগজপত্র নেই। অবৈধভাবে তারা বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে নেয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব বিষয় তদন্ত করা হচ্ছে।”
মঙ্গলবার বিকালে ঢাকার সিভিল সার্জেন ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ডা. আহসানুল হক আদাবরের মাইন্ড এইড সাইকিয়াট্রি অ্যান্ড ডি-অ্যাডিকটেড হাসপাতাল পরিদর্শন করেন। পরে পুলিশ ওই হাসপাতালে তালা লাগিয়ে দেয়।
ওই হাসপাতালে যে ১৬ জন রোগী ছিল, আনিসুলের মৃত্যুর ঘটনার পর সোমবারই তারা অন্য চিকিৎসা কেন্দ্রে চলে গিয়েছিলেন বলে উপ কমিশনার হারুন জানান।
হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, “এটি একটি অবৈধ হাসপাতাল। কোনো অনুমোদন নেই। তাছাড়া পুরো হাসপাতাল ঘুরে একটি জেলখানা মনে হয়েছে। যেখানে নির্যাতন করা হয়েছে, সেটি একটি বদ্ধ ঘর। বাতাস বের হওয়ারও রাস্তা নেই।”
সিভিল সার্জেন মঈনুল আহসান জানান, মাইন্ড এইড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গত ফেব্রুয়ারি মাসে অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছিল।
“কিন্তু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, ব্যবস্থা, জনবল, অন্যান্য সুযোগ সুবিধা না থাকায় তাদের অনুমোদন দেওয়া হয়নি।”
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যে ঘরে পুলিশ কর্মকর্তাকে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে, সেটি একটি ‘সাউন্ড প্রুফ’ কক্ষ। মানসিক রোগের চিকিৎসার জন্য এ ধরনের কক্ষের তো প্রয়োজন নেই। তারা কেন ওই বিশেষ কক্ষটি তৈরি করেছিল, তা তারাই ভালো বলতে পারবে।