খুলনায় অবাধে চলছে স্ক্রিনিংবিহীন দূষিত রক্তের রমরমা ব্যবসা

॥ ই-হেলথ২৪ প্রতিনিধি ॥  খুলনা মহানগরী ও জেলার বিভিন্ন স্থানে অবাধে চলছে স্ক্রিনিংবিহীন দূষিত রক্তের রমরমা ব্যবসা। বিভিন্ন বাসাবাড়ি ও ক্লিনিক প্যাথলজির অন্তরালে চলছে এ ব্যবসা। দীর্ঘদিন ধরে লাল রক্তের কালো ব্যবসা চললেও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারছে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মাঝেমধ্যে অভিযান চালালেও রক্ত ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট দমন করা সম্ভব হচ্ছে না।

অভিযোগ পাওয়া যায়, প্রশাসনকে ম্যানেজ করে একশ্রেণীর ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার নির্বিঘ্নে এ ব্যবসা চালিয়ে আসছে। ইতিপূর্বে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২-১টি অভিযানে কয়েকজন রক্ত বিক্রেতা ধরা পড়লেও এ চক্রের মূল হোতারা বরাবর রয়ে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে।

বেসরকারি সংস্থা সন্ধানীর এক পরিসংখ্যান মতে, নগরীতে প্রতিদিন স্বাভাবিকভাবে রক্তের চাহিদা রয়েছে ৪০ থেকে ৫০ ব্যাগ। বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে অবশ্য চাহিদার পরিমাণ বেড়ে যায়। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে অসংখ্য রোগীর অস্ত্রোপচার ও বিভিন্ন দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন হয় উল্লেখিত পরিমাণ রক্তের। এর শতকরা ৩০ ভাগ পূরণ হচ্ছে পেশাদার রক্তদাতার কাছ থেকে।

এছাড়া স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সন্ধানী ডোনার ক্লাব, রেড ক্রিসেন্ট, শুভেচ্ছা ও অন্যান্য ডোনার ক্লাব এবং রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে রক্তের বাকি চাহিদা পূরণ করা হয়ে থাকে। সূত্রমতে, প্রতি ব্যাগ রক্তের স্ক্রিনিং ফি সরকারিভাবে অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় নগরীর বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিক ও হাসপাতাল এবং বেসরকারি বস্নাড ব্যাংকগুলো অধিক মুনাফার লোভে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই রক্ত ক্রয়-বিক্রয় করে থাকে।

বিপজ্জনক এ রক্ত অন্য কোনো রোগে বা দুর্ঘটনায় আহত মানুষের দেহে প্রবেশের ফলে তাদের জীবন আরো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে বলে চিকিৎসকরা জানান। পেশাদার রক্তদাতাদের মধ্যে শতকরা ২০ থেকে ২৫ ভাগ যক্ষ্মা এবং সিফিলিস ও গনোরিয়ার মতো মারাত্মক যৌন ব্যাধিতে আক্রান্ত থাকে বলে অপর একটি সূত্র জানিয়েছে।

পেশাদার রক্তদাতাদের রক্তে হিমোগ্লোবিনের হার কোনোক্রমেই শতকরা ৩০ ভাগের ঊদ্ধ্যে থাকে না। এ ছাড়া তাদের একটি অংশ নিষিদ্ধ পল্লীতে যাতায়াত এবং মাদক সেবন ও ইনজেকশনের মাধ্যমে শরীরে বিভিন্ন ধরনের ড্রাগস গ্রহণ করে থাকে। ফলে তারা বিভিন্ন ধরনের সংক্রামক ব্যাধিতেও আক্রান্ত হয় বলেও জানান চিকিৎসকরা।

উল্লেখ্য, ২০১০-এর ৫ মে র‌্যাব সদস্যরা খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে অবস্থিত পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে ১৪ পাউন্ড দূষিত রক্তসহ এক জনকে গ্রেফতার করেছিল। ওই সময় ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারটিকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

গত বছর ৪ জানুয়ারি র‌্যাবের অভিযানে খুলনা জেনারেল হাসপাতালের কর্মচারী কোয়ার্টার থেকে ১৮ ব্যাগ রক্তসহ রুহুল আমীন গাজী নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়। সে ওই হাসপাতালের একজন সুইপার। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত রুহুল আমীন গাজী স্বীকার করে, সে প্রায় তিন মাস ধরে রক্তের অবৈধ এ ব্যবসা করছিল।

মাদকসেবী ও পেশাদার রক্তদাতাদের কাছ থেকে প্রতি ব্যাগ রক্ত মাত্র ১০০ টাকায় কিনে ৩ থেকে সাড়ে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হতো। সে নগরীর ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং জেনারেল হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে স্ক্রিনিংবিহীন এ রক্ত সরবরাহ করতো। ওই বছর ১৭ জানুয়ারি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে তুফান নামে একটি খাবার হোটেলে দূষিত রক্ত ব্যবসার সন্ধান পায় র‌্যাব। হোটেলের ফ্রিজ থেকে অন্যান্য খাবারের সঙ্গে রাখা অবস্থায় উদ্ধার করা হয় ৫ ব্যাগ রক্ত।

বিভিন্ন সময় এ ধরনের অভিযান পরিচালনা করা হলেও রক্ত ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট দমন করা সম্ভব হচ্ছে না। আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে এসব অপকর্মের মূলহোতারা পার পেয়ে যাচ্ছে। খুলনা সিভিল সার্জন গোলাম মোর্তজা শিকদার সাংবাদিকদের বলেন, অবৈধভাবে রক্তের ব্যবসা বন্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে স্বাস্থ্য বিভাগ অভিযান পরিচালনা করে থাকে। গত দেড় মাসে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলায় এবং নগরীর দৌলতপুরে এ ধরনের দুটি অভিযান পরিচালিত হয়েছে। আইন প্রয়োগের পাশাপাশি এ ব্যবসা বন্ধে জনসচেতনতা প্রয়োজন। এ জন্য স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে।

খুলনা সদর হাপসাতাল ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোনো পেশাদার রক্তদাতা নেই দাবি করে তিনি বলেন, এই দুই স্থানে কঠোর নজরদারির কারণে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।

Exit mobile version