স্বাস্থ্য সংবাদ

ম্যালেরিয়ার এক-তৃতীয়াংশ ওষুধেই ভেজাল ও নিম্নমানের : চিকিৎসা ব্যর্থ

॥ ই-হেলথ২৪ ডেস্ক ॥  দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাতটি দেশ থেকে সাত ধরনের ওষুধের এক হাজার ৪৩৭টি নমুনার ওপর পরীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে, এসব ওষুধের বেশির ভাগই ভেজাল ও নিম্নমানের। এমন ওষুধ ব্যবহার করায় ম্যালেরিয়া প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। চিকিৎসা ব্যর্থ হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের ফোগার্টি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারের একদল গবেষক ম্যালেরিয়া প্রতিরোধী ওষুধ-সংক্রান্ত গবেষণাটি করেছেন। […]

Published

on

॥ ই-হেলথ২৪ ডেস্ক ॥  দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাতটি দেশ থেকে সাত ধরনের ওষুধের এক হাজার ৪৩৭টি নমুনার ওপর পরীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে, এসব ওষুধের বেশির ভাগই ভেজাল ও নিম্নমানের। এমন ওষুধ ব্যবহার করায় ম্যালেরিয়া প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। চিকিৎসা ব্যর্থ হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের ফোগার্টি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারের একদল গবেষক ম্যালেরিয়া প্রতিরোধী ওষুধ-সংক্রান্ত গবেষণাটি করেছেন। গবেষণা শেষে তাঁরা এ বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য প্রকাশ করেন। গতকাল মঙ্গলবার দ্য ল্যানসেট সাময়িকীতে গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে।

গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন, ওষুধগুলোতে ভুল রাসায়নিক উপাদান মেশানোর কারণে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে সেগুলো কোনো কাজেই আসছে না। বরং ওষুধ গ্রহণকারীদের মধ্যে ম্যালেরিয়া চিকিৎসা প্রতিরোধী ব্যবস্থা গড়ে তুলছে। আফ্রিকার সাব-সাহারা অঞ্চলের ২১টি দেশের প্রায় আড়াই হাজার ওষুধের নমুনা পরীক্ষা করেও তাঁরা একই ফল দেখতে পেয়েছেন।

গবেষকরা জানান, উপাত্তে যতটুকু দেখা যাচ্ছে নকল ওষুধজনিত সমস্যার প্রকৃতি তারচেয়েও মারাত্মক। নিজেদের গবেষণাকে ‘জেগে ওঠার আহ্বান’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন গবেষকরা।

গবেষণায় আরও জানানো হয়, বিশ্বে বর্তমানে ৩৩০ কোটি মানুষ মশাবাহিত রোগ ম্যালেরিয়ার ঝুঁকিতে আছে। ১০৬টি দেশ ম্যালেরিয়ার ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের মধ্যে পড়েছে। প্রতিবছর ম্যালেরিয়ার কারণে সাড়ে ছয় লাখ থেকে ১২ লাখের মতো মানুষ মারা যায়। আফ্রিয়ায় ম্যালেরিয়ার কারণে মৃতদের বেশির ভাগই শিশু।

Advertisement

গবেষক দলের প্রধান গৌরবিকা নায়ার বলেন, ‘ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধগুলো কার্যকর হলে, সেগুলোর মান ভালো হলে এবং সঠিকভাবে ব্যবহার করা হলে এ রোগের কারণে অসুস্থতা ও এ-সংক্রান্ত মৃত্যুর হার অনেকাংশে কমানো সম্ভব।’

ম্যালেরিয়ার ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোতে প্রায়ই ম্যালেরিয়া প্রতিরোধী ওষুধ ব্যাপকহারে বিতরণ করা হয়। এ কাজ কখনো সঠিক এবং কখনো ভুলভাবে হয়। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই অনেক সময় সেবনবিধি নির্দেশ করা হয়। ম্যালেরিয়া প্রতিরোধী ওষুধের মান পরীক্ষা, সেগুলোর ব্যবহারবিধি নিয়ে মাঠপর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে জ্ঞান ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার অভাব রয়েছে বলেও গবেষণায় জানানো হয়েছে।

গবেষকরা বলেন, ‘ভেজাল ওষুধ ধরা পড়ার বেশির ভাগ ঘটনাই জানানো হয় না অথবা ভুল প্রতিষ্ঠানকে জানানো হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ওষুধ প্রস্তুতকারী কম্পানিগুলো এসব তথ্য গোপন রাখে।’

গবেষকরা ১৯৯৯ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়েছে এমন সাত ধরনের ওষুধের এক হাজার ৪৩৭টি নমুনা পরীক্ষা করেছেন। এর মধ্যে ৩৫ শতাংশ ওষুধই ছিল ভুল রাসায়নিক উপাদানে তৈরি। এক হাজার ২৬০টি নমুনার ৩৬ শতাংশ ছিল ভেজাল। পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ওষুধগুলোর প্রায় অর্ধেকই ঠিকমতো প্যাকেটজাত ছিল না। গবেষকরা সাব-সাহারান আফ্রিকার ২১টি দেশ থেকে ছয় ধরনের ওষুধের দুই হাজার ২৯৭টি নমুনা পরীক্ষা করেন, যার মধ্যে ৩৫ শতাংশ ওষুধই রাসায়নিক পরীক্ষায় উৎরে যেতে ব্যর্থ হয়েছে। আর ২০ শতাংশ ওষুধ সম্পূর্ণ ভুয়া প্রমাণিত হয়েছে। তবে বিশ্বের জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশের অধিকারী চীন ও ভারত এই গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি।

তবে ২০০০ সালের পর থেকে বিশ্বে ম্যালেরিয়াজনিত মৃত্যুর হার ২৫ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে বলে দাবি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও)। তবে এই হার যথেষ্ট নয় উল্লেখ করে ম্যালেরিয়ার পরীক্ষা, চিকিৎসা ও এ-সংক্রান্ত গবেষণা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
সূত্র : বিবিসি

Advertisement

Trending

Exit mobile version