স্বাস্থ্য সংবাদ

কমিউনিটি ক্লিনিক চালাতে সাধারণের অংশগ্রহণ জরুরি

॥ ই-হেলথ২৪ প্রতিবেদক ॥  দেশের কমিউনিটি ক্লিনিককে কার্যকর করতে সাধারণ মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। দেখা যাচ্ছে, মানুষ সম্পৃক্ত হয়েছে, এমন জায়গাগুলোতে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো ভালো চলছে। গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকেরা এসব কথা বলেন। গোলটেবিল বৈঠকে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক বলেন, স্বাস্থ্যসেবাকে একেবারে গ্রামীণ পর্যায়ে নিয়ে […]

Published

on

॥ ই-হেলথ২৪ প্রতিবেদক ॥  দেশের কমিউনিটি ক্লিনিককে কার্যকর করতে সাধারণ মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। দেখা যাচ্ছে, মানুষ সম্পৃক্ত হয়েছে, এমন জায়গাগুলোতে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো ভালো চলছে। গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকেরা এসব কথা বলেন।

গোলটেবিল বৈঠকে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক বলেন, স্বাস্থ্যসেবাকে একেবারে গ্রামীণ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে কমিউনিটি ক্লিনিক তৈরি করা হয়। সারা দেশে সাড়ে ১০ হাজারের মতো ক্লিনিক চালু আছে। এর মধ্যে হয়তো শ খানেক ক্লিনিক ঠিকমতো চলছে না, কিছু অপূর্ণতা আছে। তবে অনেকাংশে সরকার সফল।

প্রথম আলো ‘কমিউনিটি ক্লিনিক ও গ্রামীণ স্বাস্থ্যব্যবস্থা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে। আয়োজনে সহযোগিতা করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্ল্যান বাংলাদেশ।
বৈঠকের শুরুতেই প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম প্রথম আলোর কয়েকজন প্রতিনিধির পাঠানো প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বলেন, বেশ কিছু কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে সেবাদাতাকে পাওয়া যায়নি। কোনো কোনো জায়গায় সেবাগ্রহীতারা সন্তুষ্ট নন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মুহম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, ক্লিনিকগুলো জনগণের অংশগ্রহণে পরিচালিত হবে এমন ধারণা থেকেই এগুলো তৈরি হয়েছে। সারা দেশে বিভিন্ন জায়গায় ক্লিনিকগুলোর অবস্থান। কেন্দ্রীয়ভাবে ক্লিনিকগুলোতে নজরদারি করা প্রায় অসম্ভব। স্থানীয় মানুষ যদি কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোকে নিজেদের বলে ভাবতে শেখে, তাহলে তারাই এগুলো চালু রাখবে ও সেবাদাতাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করবে।

এ মুহূর্তে একযোগে সব কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারের প্রশিক্ষণ চলছে বলে উপস্থিতির কিছু সমস্যা হয়ে থাকতে পারে—এমন মন্তব্য করেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্পের পরিচালক মাখদুমা নার্গিস। তিনি বলেন, ক্লিনিকগুলো ইতিমধ্যে এলাকায় জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। কিছু এলাকায় সকাল থেকে শত শত মাকে শিশু কোলে কমিউনিটি ক্লিনিকের সামনে সারিতে দাঁড়িয়ে থাকতেও দেখা যায়।

Advertisement

বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ওয়াটারএইডের এদেশীয় পরিচালক খায়রুল ইসলাম বলেন, প্রতিটি ক্লিনিক মেরামত করতে সরকার থেকে ৮০ হাজার করে টাকা দেওয়া হয়েছিল। ঠিকাদারেরা সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা খরচ করেন। তিনি বলেন, ক্লিনিক ব্যবস্থাপনা কমিটিকে আর্থিক ক্ষমতা দিলে তারা সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার করত।

প্রকল্পের উপ-কর্মসূচি ব্যবস্থাপক কে এম আজাদ জানান, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো মেরামতের কাজে কমিউনিটি গ্রুপকে সম্পৃক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
দাতা সংস্থা সিডার স্বাস্থ্য উপদেষ্টা মোমেনা খাতুন কমিউনিটির সম্পৃক্ততার সফল উদাহরণ হিসেবে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, স্থানীয় মানুষ প্রবাসীদের সহযোগিতা নিয়ে এবং জাকাতের অর্থ সংগ্রহ করে ৩০ লাখ টাকার তহবিল তৈরি করেছে।

প্ল্যান বাংলাদেশের এদেশীয় উপপরিচালক আনোয়ার হোসেন সিকদার বলেন, দিনাজপুর জেলার একটি উপজেলা পরিষদ ২৪টি ক্লিনিকে বিনা মূল্যে আসবাব দিয়েছে। তিনি বলেন, এভাবেই ক্লিনিকের সঙ্গে স্থানীয় সরকারের সম্পৃক্ততা বাড়ানো যায়। একই প্রতিষ্ঠানের কান্ট্রি প্রজেক্টস ম্যানেজার সেলিনা আমিন বলেন, স্থানীয় জনগণ যেন কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোকে নিজেদের বলে মনে করতে পারে, সে জন্য তাদের প্রশিক্ষণ প্রয়োজন।

যুক্তরাজ্যের দাতা সংস্থা ডিএফআইডির স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক উপদেষ্টা শেহলীনা আহমেদ বলেন, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার মৌলিক ধারণার সঙ্গে কমিউনিটি ক্লিনিক সংগতিপূর্ণ। তিনি কমিউনিটি ক্লিনিকের পরিবর্তে বাংলা শব্দ ব্যবহার করার আহ্বান জানান।
ওষুধ বিতরণ বিতর্ক: কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডাররা মানুষকে ২৮ ধরনের ওষুধ দিচ্ছেন। চিকিৎসক না হয়েও ওষুধ দেওয়ায় সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে কি না, তা নিয়ে বিতর্ক হয় বৈঠকে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খন্দকার মো. সিফায়েতউল্লাহ বলেন, বাংলাদেশের মানুষ ওষুধের প্রতি অত্যন্ত দুর্বল। ক্লিনিক থেকে মানুষ ২৮ ধরনের ওষুধ পাচ্ছে। এর মধ্যে ১০৯ কোটি টাকার ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছে।

Advertisement

বাড়ি ঘোরা কমেছে: সর্বশেষ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপে দেখা গেছে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে পরিবার পরিকল্পনা সেবা দেওয়া কমেছে। কমিউনিটি ক্লিনিক পুরো চালু হলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেবা দেওয়া আরও কমবে—এমন আশঙ্কার ব্যাপারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী রুহুল হক বলেন, পরিবার পরিকল্পনা সহকারীকে সপ্তাহে তিন দিন কমিউনিটি ক্লিনিকে বসতে হবে বলে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তার অর্থ, বাকি দিনগুলোতে তাঁকে বাড়ি বাড়ি গিয়েই সেবা দিতে হবে।

এ প্রসঙ্গে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) গণেশ চন্দ্র সরকার বলেন, তিন দিন কমিউনিটি ক্লিনিকে বসার কারণে মাঠকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেবা দেওয়া কমবে—এটাই স্বাভাবিক।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা বিভাগের পরিচালক সৈয়দ আবু জাফর মো. মুসা বলেন, মাঠকর্মীদের বাড়ি বাড়ি যাওয়া কমলেও জন্মনিরোধকসামগ্রী ব্যবহারের হার কমেনি। তার অর্থ, মানুষের মধ্যে সেবা গ্রহণের পদ্ধতি বদলেছে।

চাই সমন্বিত উদ্যোগ: প্ল্যানের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মো. রাজ্জাকুল আলম বলেন, স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবারকল্যাণ সহকারী ১৬তম গ্রেডের কর্মী। কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডাররা ১৪তম গ্রেডের কর্মী। নতুন নিয়োগ পাওয়া কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডাররা কর্তৃত্ব করলে মাঠপর্যায়ের কাজে অসুবিধা হতে পারে।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিচালক (এমসিএইচ সার্ভিসেস) মোহাম্মদ শরীফ বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিক পরিচালনার ক্ষেত্রে দুই অধিদপ্তরের কর্মীরা একসঙ্গে কাজ করছেন। মাঠপর্যায়ে কোনো দ্বন্দ্ব নেই।

Advertisement

আরও সমৃদ্ধ হতে পারে: কমিউনিটি ক্লিনিকে সাধারণ প্রসবের ব্যবস্থা থাকার কথা নয়। কিন্তু প্রায় ১০০ ক্লিনিক এই সেবা দিচ্ছে। প্ল্যান বাংলাদেশের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা মো. ইফতেখার হাসান খান বলেন, এই ক্লিনিকগুলোয় টেলিমেডিসিন-ব্যবস্থা চালু করা যায়। এ ছাড়া ক্লিনিকগুলোয় ইন্টারনেট সংযোগ দিলে রেফারেল-ব্যবস্থা কার্যকর করা সম্ভব।
একাধিক আলোচক বলেন, ক্লিনিকগুলো থেকে পুষ্টিসেবাও দেওয়া হবে।

Trending

Exit mobile version