Home নির্বাচিতঅটিজম : যে রোগ আইনস্টাইনের ছিলো!

অটিজম : যে রোগ আইনস্টাইনের ছিলো!

by স্বাস্থ্য ডটটিভি কনটেন্ট কাউন্সিলর
অটিজমকে সাধারণভাবে শিশুর মনোবিকাশগত জটিলতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। অনেকেই হয়ত এই রোগের নাম শুনেন নি। তারপরও আশংকার কথা হলো, আধুনিক বিশ্বে অটিজম আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অটিজম নিয়ে বাংলাদেশের অটিজম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন ডা. রওনক হাফিজ আমাদের সাথে আলোচনা করেছেন। আলোচনাটি এখানে উপস্থাপন করা হলো :

অটিজম রোগ সম্পর্কে জনসম্মুখে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপিত হয় ১৯৪৩ সালে। প্রায় একই সাথে জন হপকিনস হাসপাতালের ডাঃ লিও কান্নের এবং জার্মান বিজ্ঞানী ডাঃ হ্যান্স এসপারজার এ রোগ নিয়ে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করেন। তার আগেও এ রোগ ছিলো তবে বিস্তারিত তথ্য কারো জানা ছিল না। আলোচনার শুরুতেই বলতে হবে অটিজম কোন সাধারণ রোগ নয়। এই রোগকে সাধারণভাবে শিশুর মনোবিকাশগত জটিলতা হিসেবে চিহ্নিত করে থাকেন। অটিজম কেন হয় তার সঠিক কারণ আজ পর্যন্ত উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি। তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা মনেবিকাশের প্রতিবন্ধকতার কারণ হিসাবে মস্তিস্কের অস্বাভাবিক জৈব রাসায়নিক কার্যকলাপ, মস্তিস্কের অস্বাভাবিক গঠন, বংশগতির অস্বাভাবিকতা প্রভৃতির কথা বলে থাকেন।

বাংলাদেশে অটিজম নিয়ে সঠিক তথ্য নেই। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য শুধু অটিজম নয় অনেক রোগ নিয়েই বাংলাদেশে কোনো সঠিক হিসেব পাওয়া যাবে না। পাওয়া যাবে না পরিসংখ্যান। পাওয়া যাবে না যথার্থ উপাত্ত বা তথ্য। সে যাই হোক তারপরও বাংলাদেশে গড়ে প্রতি হাজারে ১০ থেকে ২০টি শিশু এই রোগে আক্রান্ত বলে বিশেষজ্ঞগণ মনে করছেন।

অটিষ্টিক শিশুদেরকে কেউ কেউ মানসিক প্রতিবন্ধী বলে থাকেন। কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা এ ধরণের কথার সাথে একমত নন। তারা বলেন, অটিজমে আক্রান্ত কোনো কোনো শিশু বা অটিষ্টিক শিশু কখনো কখনো বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে অত্যন্ত পারদর্শীতা প্রদর্শন করতে পারে। তবে এই পারদর্শীতা প্রদর্শনের জন্য এই ধরনের শিশুদের বিশেষ ধরণের শিক্ষার একান্ত প্রয়োজন । আর এ কারণে অটিজমে আক্রান্ত শিশুকে বিশেষ প্রয়োজন সম্পন্ন শিশু বা বুদ্ধিবৃত্তিক চাহিদাসম্পন্ন বলা হয়। এ সব শিশুকে উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হলে তাদের অনেকেই স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে পারে। এ কারণে এই সব শিশুকে প্রতিবন্ধী আখ্যায়িত করা সঠিক নয় বলে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা মনে করেন। অটিজম বিশ্বে এতই ব্যাপক আকার ধারণ করেছে যে জাতিসংঘ প্রতিবছর ২ এপ্রিলকে বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস হিসেবে পালন করছে। অটিজমের লক্ষণগুলো একদম শৈশব থেকেই প্রকাশ পেতে থাকে। মা-বাবা একটু সতর্ক হলে তা সহজেই ধরতে পারেন। স্বাভাবিক একটি শিশু এক বছর বয়সে অর্থবহ অঙ্গভঙ্গী করতে পারে, ১৬ মাস বয়স থেকে একটি শব্দ বলতে পারে এবং ২ বছর বয়সে ২ শব্দের বাক্য বলতে পারে কিন্তু অটিজম আক্রান্ত শিশুর মধ্যে এ সব আচরণ দেখা যায় না। তার সমবয়সী শিশুদের সাথে বন্ধুত্ব পাতাতে চায় না। এই রোগে আক্রান্ত শিশু কারো সাথেই, সে সমবয়সী হোক কিংবা অন্য যে কোনো বয়সী হোক তার সাথে সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে না। নাম ধরে ডাকলে সাধারণ শিশু সাড়া দেয় কিন্তু অটিজমে আক্রান্ত শিশু নাম ধরে ডাকলেও সাড়া দেয় না। এ ধরণের শিশু আপন মনে থাকতে পছন্দ করে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, এরা কারো চোখের দিকে তাকায় না। কারো দিকে তাকিয়ে হাসে না কিংবা আদর করলেও ততটা সাড়া দেয় না। সাধারণভাবে অটিষ্টিক শিশুরা একই কথা বারবার বলে এবং একই কাজ বার বার করতে পছন্দ করে।

অটিজম রোগটি কেন হয় তার সঠিক কারণ এখন বের করা সম্ভব হয়নি। একটি শিশুর মনোবিকাশের প্রতিবন্ধকতার কারণ হিসাবে মস্তিস্কের অস্বাভাবিক জৈব রাসায়নিক কার্যকলাপ, মস্তিস্কের অস্বাভাবিক গঠন, বংশগতির অস্বাভাবিকতা, সহ অনেক কিছুকে দায়ী করা হচ্ছে। তবে জন্ম পরবর্তীকালের কোন জটিলতা কিংবা শিশুর প্রতি মায়ের বা ঘনিষ্টজনের অমনোযোগিতার কারণে অটিজম দেখা দেয়া না বলে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করেন। কাজেই কোন শিশুর অটিজম হলে সে জন্য বাবা মা ও আত্মীয়-স্বজনকে দোষী ভাবা মোটেও ঠিক নয়। একই সাথে সন্তানের বাবা-মাকে দায়ী করারও কোন যুক্তিও নেই।

বিশ্বজুড়ে অটিজম বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রের এক হিসেবে বলা হয়েছে, আগে সেখানে প্রতি ৫০০টি শিশুর মধ্যে একজনের অটিজম পাওয়া যেতো এখন সেখানে প্রতি ১১৬ জন শিশুর মধ্যে একজন অটিজমের শিশু পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশে এ বিষয় সঠিক তথ্য নেই সে কথা আগেও একবার বলা হয়েছে। তারপরও বিশেষজ্ঞগণ মনে করছেন গড়ে প্রতি হাজারে ১০ থেকে ২০টি শিশু এই রোগে আক্রান্ত। উন্নত দেশগুলোতে এই সংখ্যা আরও বেশি বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশে অটিজম সম্পর্কে এখনো সচেতনতা গড়ে উঠেনি। এ কারণে হয়ত অটিজমের রোগী সঠিকভাবে চিহ্নিত হচ্ছে না। শিশুকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা যাদের আছে তাদের মধ্য থেকে মূলত অটিজমের রোগী চিহ্নিত হচ্ছে। এখনো বাংলাদেশের গ্রামে-গঞ্জে এ রোগ সম্পর্কে কোনো সচেতনতা সৃষ্টি হয় নি। অটিজমে আক্রান্ত শিশুকে প্রথম চিকিৎসাই হলো তার রোগক শনাক্ত করা। কোনো রকম ওষুধ দিয়ে অটিজমের শিশুকে সারিয়ে তোলা সম্ভব নয়। বরং তাকে বিশেষ শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। এই শিক্ষা ছাড়া তার চিকিৎসার আর কোনো বিকল্প নেই। এই শিক্ষার মাধ্যমে তাকে স্বাধীনভাবে চলার উপযোগী করা সম্ভব।

দুভার্গ্যজনক হলেও সত্য বর্তমানে ঢাকা ছাড়া বাংলাদেশের আর কোথাও এই অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের বিশেষ শিক্ষার ব্যবস্থা নেই। ডা. রওনক হাফিজ জানিয়েছেন, ভাল শিক্ষার মাধ্যমে অনেক অটিজম আক্রান্ত শিশু শেষ পর্যন্ত সমাজের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পেরেছেন। তাই অটিজম আক্রান্ত শিশুদের শিক্ষার সুযোগ করে দেয়া গেলে দেখা যাবে তারা সমাজের জন্য দায় হবে না বরং সম্পদ হয়ে উঠতে পারে। ডা. রওনক হাফিজ জানিয়েছেন, অটিজম এবং প্রতিভা একসাথে চলে বলে অনেকে মনে করেন।

কেউ কেউ এমন সন্দেহ করেন যে খ্যাতনামা বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের মধ্যে অটিজমের অনেক উপসর্গ ছিলো। অটিজমের শিশুদের মধ্যে এমন সব প্রতিভা থাকে যা ভাবা যায় না। যোগাযোগে অক্ষমতার আড়ালে তাদের মধ্যে অসাধারণ প্রতিভা রয়েছে এবং এ সব প্রতিভা কাজে লাগানোর জন্য মানুষকে অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে।

You may also like