নিজস্ব প্রতিবেদক: শনিবার বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘যতদিন বাঁচবো, যক্ষ্মাকে রুখবো’। দেশে সরকারিভাবে দিবসটি পালিত না হলেও আলোচনা সভা, শোভাযাত্রাসহ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালন করবে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা।
প্রতি বছর দেশে গড়ে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হচ্ছে দেড় লক্ষাধিক রোগী। গত তিন বছরে দেশে দেড় হাজার মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্স (এমডিআর) বা ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মারোগী সনাক্ত হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি (এনটিপি) ও ব্রাক স্বাস্থ্য কর্মসূচি থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, বিশ্বে প্রতি বছর ৮ দশমিক ৮ মিলিয়নের বেশি লোক যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে ১ দশমিক ৪ মিলিয়ন লোক মারা যায়। ২২ দেশে বিশ্বের মোট যক্ষ্মারোগীর শতকরা ৮০ ভাগ বাস করে। মোট যক্ষ্মারোগীর শতকরা ৪০ ভাগ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে বাস করে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর পরিচালক ও লাইন ডিরেক্টর (টিবি অ্যান্ড লেপ্রোসি) ডা. মো. নুরুজ্জামান হক বলেন, ‘এদেশে যক্ষ্মা একটি মারাত্মক জনস্বাস্থ্য সমস্যা। ২০১১ সালে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির মাধ্যমে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৫শ’ ৬৪ যক্ষ্মারোগী সনাক্ত হয়েছে। কফে জীবাণুযুক্ত রোগী সনাক্ত হয়েছে ৯৮ হাজার ৯শ’ ৪৮ জন। ২০১০ সালে সনাক্তকৃত রোগীর মধ্যে ৯৬ হাজার ৮শ’ ৭ জন আরোগ্য লাভ করেছে, যার শতকরা হার ৯২ ভাগ।’
তিনি বলেন, ‘জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লক্ষ্য হলো- কফে জীবাণুযুক্ত রোগীর কমপক্ষে শতকরা ৭০ ভাগ সনাক্তকরণ ও শতকরা ৮৫ ভাগকে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করা। সে লক্ষ্য অনেক আগেই পূরণ হয়েছে বলে তিনি জানান। ডটস্ পদ্ধতি অর্থাৎ প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর্মীরা রোগীকে নিয়মিত ওষুধ সেবনের মাধ্যমে ভালো করে তুলছেন।’
দিবসটি উপলক্ষে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বাস্তবায়নকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় বিভিন্ন হাসপাতালে পোস্টার ও লিফলেট লাগানো হয়েছে এবং অনেক স্থানে ব্যানার টানানো হয়েছে।
এছাড়া ব্র্যাকের উদ্যোগে সকাল সাড়ে ৭টায় শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে শোভাযাত্রা বের হবে। দেশের ৪২ জেলায় শোভাযাত্রা ও সেমিনারের আয়োজন করেছে ব্র্যাক।
বিশেষজ্ঞরা জানান, যক্ষা এক ধরনের জীবাণু দ্বারা হয়ে থাকে। দুই ধরনের যক্ষ্মা আছে, এর একটি ফুসফুসের, আরেকটি ফুসফুসবহির্ভূত। বাংলাদেশে যক্ষ্মারোগ একটি মারাত্মক জনস্বাস্থ্য সমস্যা।
জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. আশেক হোসেন জানান, ১৮৮২ সালে রবার্ট কচ প্রথমে টিবি জীবাণু আবিষ্কারের ঘোষণা করেন। ঠিক এর ১৮০ বছর পর বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা এ দিনকে বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস হিসেবে ঠিক করে, যার মূল বিষয় জনগণকে সচেতন করা। যক্ষ্মা অধ্যুষিত ২২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৬ নম্বরে।
জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি (এনটিপি) ও ব্র্যাক স্বাস্থ্য কর্মসূচির দেয়া তথ্য মতে, ১৯৯৫ সালে ডটস্ কাভারেজ ছিল ৪১ শতাংশ, এখন ২০১০ সালে ডটস কাভারেজ হচ্ছে শতভাগ। সুতরাং আমরা এখানে বিশাল একটা অর্জন করেছি। ১৯৯৫ সালে সনাক্তকরণ রোগী ছিল ১৬ শতাংশ, এখন সনাক্তকরণ রোগী হচ্ছে ৭৪ শতাংশ। ১৯৯৫ সালে আরোগ্য ছিল ৭০ শতাংশ, এখন আরোগ্য ৯২ শতাংশ।
২০১০ সালে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির মাধ্যমে এক লাখ ৫৮ হাজার ২৩৭ জন যক্ষ্মা রোগী সনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে কফে আক্রান্ত যক্ষ্মা রোগী সনাক্ত হয়েছে এক লাখ পাঁচ হাজার ৬২৩ জন, যা শতকরা ৭০ ভাগ। ২০০৯ সালে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের মাধ্যমে শতকরা ৯২ জন রোগী আরোগ্য লাভ করেছে।
জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লক্ষ্য হচ্ছে, কফে যক্ষ্মা জীবাণুযুক্ত রোগী কমপক্ষে শতকরা ৭০ সনাক্তকরণ এবং সনাক্তকৃত রোগীদের মধ্যে কমপক্ষে শতকরা ৮৫ ভাগ রোগীর আরোগ্য লাভ করা।
সারাদেশে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, ৪৪টি বক্ষব্যাধি ক্লিনিক, আটটি বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, চারটি বিভাগীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, বিভিন্ন আরবান ক্লিনিক, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সামরিক হাসপাতাল, জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট হাসপাতাল, জেলা সদর হাসপাতাল এবং ওয়ার্কপ্লেস যেমন, ইপিজেড, গার্মেন্টস এবং অন্যান্য শিল্পপ্রতিষ্ঠান, জেলখানা এসব স্থানে বিনামূল্যে যক্ষা রোগের চিকিৎসা ও কফ পরীক্ষা করা হয়।
১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ প্রথম ডটস পদ্ধতি গ্রহণ করে। ১৯৮৪ সালে ব্র্যাক প্রথম একটি উপজেলায় এই যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি শুরু করে এবং পরে ১০টি উপজেলায় সম্প্রসারণ করা হয় ১৯৯২ সালে।
বর্তমানে ব্র্যাক ৪২টি জেলায় ২৯৫টি উপজেলায় কাজ করছে। ৩৭টি জেলা শহরে, পাঁচটি বিভাগীয় শহরে, ২৪টি ইনস্টিটিউশনে, ইপিজেডসহ বিভিন্ন শিল্পকারখানা চট্টগ্রাম ও খুলনায়। মোট জনসংখ্যা কাভার করেছে নয় কোটি ১০ লাখ। একজন রোগী যদি নিয়মিত যক্ষ্মার চিকিৎসা নেয় এবং ওষুধ সেবন করে, তাহলে সম্পূর্ণ সুস্থ হতে পারবে এবং স্বাভাবিক কাজকর্ম চালিয়ে যেতে পারবে।