বাঁচার আর আশা নেই_চিকিৎসকের এমন পূর্বাভাসে অনেক রোগীকেই স্বজনরা হাসপাতাল থেকে সজল নয়নে বাড়ি নিয়ে যান। এরপর অনেক রোগীর জীবনের শেষ দিনগুলো কাটে নিদারুণ কষ্ট-যন্ত্রণায়। বাড়ি-ঘরে উপযুক্ত পরিবেশ না থাকায় নূ্যনতম সেবাটুকুও জোটে না অনেকের। যন্ত্রণা লাঘবের প্রয়োজনীয় চিকিৎসাটুকু থেকেও বঞ্চিত থাকতে হয় তাদের। রোগীকে যদি হাসপাতালেও রাখা হয় দিন কাটে সাধারণ কেবিনে বা ওয়ার্ডে। এসব বিষয় মাথায় রেখেই দেশে প্রথমবারের মতো চালু করা হলো প্যালিয়াটিভ কেয়ার সার্ভিস ইউনিট। রোগীর জীবনের শেষ দিনগুলো যাতে যন্ত্রণাবিহীন কাটে এ জন্য খোলা হয়েছে ইউনিটটি।
গতকাল শনিবার ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে এই ইউনিট চালু হয়। ইতিমধ্যে এ ইউনিটে সাতজন রোগী ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে পাঁচজন পুরুষ, দুজন মহিলা। অনিরাময় ক্যান্সারসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত এই রোগীদের সবাই এখন মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। কিছু দিনের মধ্যেই তাঁদের নিশ্চিত মৃত্যু হবে বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।
বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত এই কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনকালে ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, নিরাময় অযোগ্য রোগে আক্রান্ত রোগীদের ভালোবাসা দিয়ে বিদায় দেওয়ার জন্যই এ ইউনিট চালু করা হয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রোটারি ক্লাব অব মেট্রোপলিটন ঢাকার সঙ্গে বিএসএমএমইউর পাঁচ বছর মেয়াদি একটি সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়। বিএসএমএমইউর উপাচার্য এবং মেট্রোপলিটন রোটারি ক্লাবের সভাপতি ওয়াকার এ চৌধুরী এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
চুক্তি অনুসারে মেট্রোপলিটন রোটারি ক্লাব ১৫ শয্যার প্যালিয়াটিভ কেয়ার সার্ভিস ইউনিট, রোগীর ওয়ার্ড, ক্লাসরুম ও পাঠাগার আধুনিকায়নে সহযোগিতা করবে। এ ছাড়া তারা আগামী পাঁচ বছর এই ইউনিটের ৬০ শতাংশ বিছানার ভাড়া এবং রোগীর ওষুধপত্রের ব্যয়ভার বহন করবে। প্রাথমিকভাবে ইউনিটে ৯ শয্যার ভাড়া এবং ওষুধপত্রের ব্যয় বহন করবে রোটারি ক্লাব। জটিল ও নিরাময় অযোগ্য রোগে আক্রান্ত রোগীরা এখানে ১২০ টাকা দিয়ে ভর্তি হতে পারবেন।
এই সার্ভিস প্রকল্পের সমন্বয়কারী অধ্যাপক ডা. নিজাম উদ্দিন বলেছেন, শুধু চিকিৎসাই নয়, রোগীদের শেষ ইচ্ছাও যথাসাধ্য পূরণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
নতুন চালু হওয়া প্যালিয়াটিভ কেয়ার সার্ভিস ইউনিটে ঠাঁই হয়েছে ময়মনসিংহ কেবি কলেজ থেকে এইচএসসিতে এ প্লাস পাওয়া প্রাচুর্য পুরকায়স্থের (১৯)। প্রাচুর্য না জানলেও তাঁর স্বজনরা ঠিকই জেনে গেছেন, প্রাচুর্যের সময় শেষ হয়ে এসেছে।
প্রাচুর্যের মা নমিতা রানী সাংবাদিকদের বলেন, প্রথমে পায়ে ক্যান্সার হওয়ায় পা কেটে ফেলতে হয়েছে। সেই ক্যান্সার এখন মেরুদণ্ডসহ সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়েছে। যন্ত্রণা লাঘবেই তাঁকে এখানে নিয়ে আসা। নতুন এই ইউনিটে শেষ সময় প্রাচুর্য অনেকটা ভালো আছে।
শুধু চিকিৎসাই নয়, এখানে চিকিৎসাধীন রোগীদের শেষ ইচ্ছা পূরণেও নেওয়া হবে নানা পদক্ষেপ। যেমনটা হয়েছে ক্যান্সারে আক্রান্ত শুক্কুর আলীর ক্ষেত্রে। শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী শুক্কুর আলী তাঁর স্ত্রীকে একটি সেলাই মেশিন কিনে দেওয়ার আগ্রহের কথা জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, একটি সেলাই মেশিন হলে তাঁর স্ত্রীর না খেয়ে থাকতে হবে না। মেশিনের ব্যবস্থা হলে তিনি মানসিক শান্তি নিয়ে মরতে পারবেন। এরপর উদ্যোক্তা রোটারি ক্লাব সেলাই মেশিনের ব্যবস্থা করেছে। তবে এই ইউনিটের মেডিক্যাল অফিসার ফারজানা খান ও রোগীর আত্মীয়স্বজন বলেন, এ ধরনের রোগীদের জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় ওষুধ মরফিন ট্যাবলেট সময়মতো পাওয়া যায় না। ১০ টাকা মূল্যের ওষুধ কিনতে হয় ৩০০ টাকা দিয়ে। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের আরো নজর দেওয়া উচিত।