গ্রামে ডাক্তারদের উপস্থিতি কঠোরভাবে মনিটর করুন- সিভিল সার্জনদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী

■ ইহেলথ২৪ ডটকম ডটবিডি ডেস্ক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পলস্নী এলাকায় চিকিৎসকদের উপস্থিতি কঠোরভাবে মনিটর করার জন্য সিভিল সার্জনদের নির্দেশ দিয়েছেন। মঙ্গলবার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে সিভিল সার্জনদের গাড়ি এবং জেলা-উপজেলা হাসপাতালসমূহে এ্যাম্বুলেন্স বিতরণকালে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, যদি কোন চিকিৎসক তাঁর এলাকায় না থাকেন সিভিল সার্জনকেই তাঁর জবাব দিতে হবে। খবর বাসসর।
শেখ হাসিনা বলেন, এখন থেকে দেশের ৬৪টি জেলার সিভিল সার্জন উপজেলা এবং গ্রামপর্যায়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা প্রত্যৰভাবে পর্যবেৰণ করতে পারবেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এখন থেকে জনগণ জেলা-উপজেলা বা ইউনিয়নে চিকিৎসকরা উপস্থিত থাকেন না বলে আর অভিযোগ করবে না।
প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনাদের মনে রাখতে হবে জনগণের দেয়া ট্যাঙ্রে পয়সায় আপনারা ডাক্তার হয়েছেন। তাই জনগণকেও আপনাদের কিছু দেয়ার আছে।’ তিনি বলেন, এ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত কোন ডাক্তার গ্রামে থাকতে না চাইলে বুঝতে হবে তাঁর চাকরির প্রয়োজন নেই। সে ৰেত্রে নতুন নিয়োগ দেয়া হবে।
গ্রাম ও উপজেলা পর্যায়ে ডাক্তারদের সমস্যার ব্যাপারে সরকার সচেতন রয়েছে উলেস্নখ করে তিনি বলেন, রাজধানী ঢাকা থেকে শুরম্ন করে উপজেলা পর্যায় পর্যনত্ম সমান হারে বাড়ি ভাড়া কেটে নেয়া হয়। উপজেলা পর্যায়ে যেসব ডাক্তার থাকবেন তাদের নামমাত্র সার্ভিস চার্জের বিনিময়ে আবাসন ব্যবস্থার কথা সরকার সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে।
অনুষ্ঠানে ৫৭ জন সিভিল সার্জনকে গাড়ি ও উপজেলা পর্যায়ে ১৭৯টি এ্যাম্বুলেন্স প্রদান করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পেঁৗছে দেয়ার লৰ্যে সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদৰেপ তুলে ধরে বলেন, খুব শীঘ্রই আরও ৫শ’ ডাক্তার, ৫ হাজার নার্স ও ১৪ হাজার স্বাস্থ্য সহকারী নিয়োগ করা হবে। এছাড়া ২ হাজার ৬শ’ ৬৪টি নতুন পদও সৃষ্টির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর এ পর্যনত্ম ৫শ’ ডাক্তার, ১ হাজার ৭ শ’ ৪৭ জন নার্স এবং ৬ হাজার ৩শ’ ৯১ জন স্বাস্থ্যসহকারীকে নিয়োগ দিয়েছে। এছাড়া ৩ হাজার ৫শ’ চিকিৎসককে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। একাডেমিক পদে পদোন্নতি পদ্ধতি সহজ করা হয়েছে। ইন্টার্নি ডাক্তারদের চিকিৎসা ভাতা ৬ হাজার ৫শ’ টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা করা হয়েছে। ৩৩টি উপজেলায় মাতৃস্বাস্থ্য ভাউচারস স্কিম চালু হয়েছে। এতে দরিদ্র নারীদের নিরাপদ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘সেন্টার অব এঙ্েিলন্স’ হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। এ জন্য ৪৮৫ কোটি টাকা ব্যায়ে নতুন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। তিনি চিকিৎসার মান উন্নয়নে গবেষণার ওপর গুরম্নত্বারোপ করে বলেন, সরকার গবেষণা কাজে সকল প্রকার সহযোগিতা দেবে। যাঁরা গবেষণা করবেন তাঁদেরকে সুযোগ-সুবিধা প্রদানের বিষয়টিও সরকারের বিবেচনায় রয়েছে।
১৯৯৬ সালে দেশ পরিচালনায় দায়িত্ব নেয়ার পর স্বাস্থ্যখাতে উন্নয়নের জন্য তাঁর সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদৰেপের কথা উলেস্নখ করে বলেন, প্রতি ৬ হাজার মানুষের জন্য একটি করে মোট ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার সেন্টারগুলো বন্ধ করে দেয়। এবার দায়িত্ব নেয়ার পর পুনরায় কমিউনিটি ক্লিনিক চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ পর্যনত্ম প্রায় ১১ হাজার ক্লিনিক প্রায় চালু করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা স্বাধীনতার পর জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লৰ্যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিভিন্ন পদৰেপের কথাও উলেস্নখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকারের দুই বছরে স্বাস্থ্যখাতে অর্জন অনেক। এজন্য দেশ-বিদেশে সুনাম অর্জিত হয়েছে। আমরা গত বছর জাতিসংঘ এমডিজি এওয়ার্ড পেয়েছি। শিশু মৃতু্য হার হ্রাস সংক্রানত্ম এমডিজি-৪ অর্জন করায় এ পদক দেয়া হয়েছে । আমরা এমডিজি-৫ এবং এমডিজি-৬ অর্জনেও জাতিসংঘ পদক পেতাম। কারণ, আমরা মাতৃমৃতু্যর হার হ্রাসে এমডিজি-৫ এর লৰ্যের চেয়ে অনেক এগিয়ে আছি। অপরদিকে যা, কুষ্ঠ, ম্যালেরিয়া ও এইচআইভি-এইডস দমনে এমডিজি-৬ এর লৰ্যের চেয়ে এগিয়ে আছি। কিন্তু জাতিসংঘ একটার বেশি পদক কোন দেশকে দেয়নি। এখন আমাদের লৰ্য নবজাতক, শিশু ও মাতৃমৃতু্যর হার উন্নত দেশের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া। যা কুষ্ঠ ও ম্যালেরিয়া নিমর্ূল করা। এজন্য চিকিৎসক, নার্সসহ প্রতিটি স্বাস্থ্যকমর্ীকে নতুন উদ্যমে কাজ করতে হবে, যাতে করে রোগ বালাই দূর করা যায়।
আগামী জুলাই থেকে স্বাস্থ্যখাতের নতুন সেক্টর কর্মসূচী বাসত্মবায়ন শুরম্ন হচ্ছে। পাঁচ বছর মেয়াদী এই কর্মসূচীর আওতায় স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি উৎপাদনে সমন্বিত প্রকল্প বাসত্মবায়ন করা হবে। অপুষ্টি সমস্যা সমাধানে জাতীয় পুষ্টি কার্যক্রমকে ১২৩টি উপজেলায় সমপ্রসারিত করা হয়েছে। এছাড়া সরকার মিডওয়াইফারি সার্ভিস চালু করতে যাচ্ছে। এতে গ্রামাঞ্চলে মানসম্মত প্রসূতি সেবা নিশ্চিত হবে। ইতোমধ্যে ৩ হাজার মিডওয়াইফ তৈরির কার্যক্রম শুরম্ন হয়েছে।
শেখ হাসিনা মানসম্মত ওষুধ উৎপাদনের ওপর গুরম্নত্বারোপ করে বলেন, এ লৰ্যে ওষুধ প্রশাসনকে ঢেলে সাজানো হয়েছে। ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরিকে আনত্মর্জাতিক মানে উন্নীত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বাংলাদেশের উৎপাদিত ওষুধ প্রায় ৮০টি দেশে রফতানি হয় উলেস্নখ করেন ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্যসেবাকে অধিক কার্যকর ও টেকসই করার লৰ্যে শিৰা ও সামাজিক খাতগুলোর উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। শিৰা ৰেত্রে গুণগত পরিবর্তন আনার জন্য একটি বিজ্ঞানসম্মত, যুগোপযোগী শিৰানীতি প্রণয়ন করেছি। গ্রামপর্যায় পর্যনত্ম পানীয় জল ও স্যানিটেশন সুবিধা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিনামূল্যে চাল-গম বিতরণ করা হচ্ছে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে ভিজিডি ও ভিজিএফসহ ৮২টি খাতে সহায়তা দেয়া হচ্ছে। এসব কর্মসূচীর আওতায় সরকার উপকারভোগীর সংখ্যা এবং সাহায্যের পরিমাণ দুটোই বাড়িয়েছে। নিম্নআয়ভোগীদের সুবিধার্থে ওএমএস, ফেয়ার প্রাইস কার্ড ও রেশন পদ্ধতি চালু করা হয়েছে।
তিনি বলেন, দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে মঙ্গা বিতাড়ন করা হয়েছে। অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসৃজন কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ কর্মসূচীর বাসত্মবায়ন আবার শুরম্ন করা হয়েছে। এর লৰ্য প্রতি ইঞ্চি কৃষি জমি আবাদকে উৎসাহিত করা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সমালোচনা করে বলেন, তারা পাঁচ বছরে দুনর্ীতি, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ ছাড়া জাতিকে কিছুই দিতে পারেনি। বর্তমান সরকার উন্নয়নের স্বার্থে দুনর্ীতি, সন্ত্রাস এবং সুদখোর ও ঘুষখোরদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতে চায়। তিনি এ ব্যাপারে জনগণের সহযোগিতা কামনা করে বলেন, ৰুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার লৰ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে গড়ে তোলাই আমাদের লৰ্য। সেই লৰ্য নিয়েই সরকার কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যখন ৰমতায় আসে তখন দেশের জনগণ কিছু পায় কারণ আওয়ামী লীগ নিতে নয় দিতে আসে।’ তিনি আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অঙ্গীকার বাসত্মবায়নে সকলের সহযোগিতা কামনা করে বলেন, ২০২১ সালে সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়নত্মী পালনে তাঁর সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ।

Exit mobile version