ইহেলথ২৪ ডেস্ক রিপোর্ট
শিশু মৃত্যুর অভিযোগে ইবনে সিনা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। হাইকোর্টের দেয়া আদেশের মৌখিক ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ব্যবস্থা মানে হচ্ছে গ্রেফতার। বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ গতকাল বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেয়। আদালতের আদেশের ৩ ঘণ্টার মধ্যেই এক চিকিৎসক ও ৩ কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা হলেন_ চিকিৎসক সৈয়দ আনোয়ারুল আবেদিন, ট্রাস্টি বোর্ডের জেনারেল ম্যানেজার আমিনুল ইসলাম, প্রশাসনিক কর্মকর্তা কামরুল হাসান আখতার হোসেন।
আদালতের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা আগামী ১০ অক্টোবরের মধ্যে হাইকোর্টকে জানাতে বলা হয়েছে। ইবনে সিনা হাসপাতালের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরকারী নিহত শিশুর বাবা ইদ্রিস শিকদার এবং এ নিয়ে সংবাদ পরিবেশনকারী বেসরকারি বৈশাখী টেলিভিশন ও সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদক মাহবুবুল আলম লাভলুকেও নিরাপত্তা দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ইবনে সিনা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়ে হাইকোর্ট পুলিশকে উদ্দেশ করে বলেছে, আপনাদের বিরত্ব দেখানোর সময় এসেছে। তাদের (ইবনে সিনা কর্তৃপক্ষ) সবাইকে গ্রেফতার করে দেখিয়ে দেবেন আপনাদের ক্ষমতা সবার ঊধর্ে্ব। এর আগে গত মঙ্গলবার হাইকোর্ট এক আদেশে ধানমন্ডি জোনের এসি, ওসি এবং শিশুটির বাবা-মাকে হাজিরের নির্দেশ দিয়েছিল।
নির্দেশনা অনুযায়ী তারা গতকাল সকালে হাইকোর্টে হাজির হন। শিশুটির বাবা ইদ্রিস শিকদার এ সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলার বিষয়টি তুলে ধরেন। অন্যদিকে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আলতাফ হোসেন আদালতের
দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, শুধু চিকিৎসায় অবহেলা নয়, ওই হাসপাতালের সহকারী ম্যানেজার সুলতান মাহমুদ ধানমন্ডি থানায় একটি মিথ্যা সাধারণ ডায়রি (জিডি) করেছেন। তাতে বলা হয়েছে, হাসপাতালের ক্যাসবাক্স থেকে ২০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট হাসপাতালটির সহকারী ম্যানেজারকে আগামী ১৬ অক্টোবর আদালতে হাজির হয়ে তার বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দেয়। একইসঙ্গে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশের প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়।
জিডির বিষয়ে হাইকোর্ট বলেছে, ওই বক্তব্য কিছুতেই সত্য হতে পারে না। আদালতে উপস্থিত সিনিয়র আইনজীবী রোকন উদ্দিন মাহমুদ ও আনিসুল হকও এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেন। হাইকোর্টে উপস্থিত বৈশাখী টেলিভিশনের প্রতিবেদক লাভলু আদালতে বলেন, ওই সংবাদটি প্রচার না করতে ইবনে সিনা ট্রাস্টের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) তাজুল ইসলাম ঘুষ দিতে চেয়েছিলেন। ‘তিনি আমাকে বলেছিলেন, আজ তো শুক্রবার। চেক দিতে পারছি না। আপনাকে প্যাকেট পাঠিয়ে দেব।’ ওই বক্তব্যের একটি সিডিও তিনি আদালতে দাখিল করেন।
এ সময় হাইকোর্ট ওই প্রতিবেদককে উদ্দেশ করে বলে, আপনি অনেক প্রশংসার দাবিদার। বর্তমানে এ ধরনের ঘটনা বিরল। হাইকোর্ট আগামী ১৬ অক্টোবর তাজুল ইসলামকেও আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেয়। পরে আদালত ধানমন্ডি থানার ওসি এবং এসির বক্তব্য শোনেন। ওসি মনিরুজ্জামান বলেন, আমাদের অনেক কাজ করতে হয়। অনেক সময় সাতদিনে একবার পত্রিকা দেখার সুযোগ হয় না। জিডি হওয়ার পর আমি বিষয়টি জানতে পারি। মোহাম্মদপুরে শিশুটির বাসায় গিয়ে দেখি বাসায় তালা। পরে শিশুটির বাবার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলি। তিনি ঢাকাতে আসার পর মামলা করার পরামর্শ দিই। বুধবার রাতে তিনি ঢাকায় এসে মামলা দায়ের করেন।
এ সময় হাইকোর্ট পুলিশকে লোভের কাছে বিক্রি না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলে, তাদের (ইবনে সিনা) টাকার কোনো অভাব নেই। তাদের একজন ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান। তাদের কোটি কোটি কোটি টাকা। বাংলাদেশ সরকারেরও এত টাকা নেই। পুলিশকে লক্ষ্য করে হাইকোর্ট বলে, ফৌজদারি কার্যবিধিতে আপনাদের যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সে অনুযায়ী কাজ করবেন। কতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে তা আদালতকে জানাবেন। দেরি করলে তারা হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে নেবেন। এ সময় ওসি জানতে চান কাদেরকে গ্রেফতার করা হবে। হাইকোর্ট বলে, মামলার এজাহারে কর্তৃপক্ষ বলা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ বলতে সবাইকে বোঝায়। তবে ইবনে সিনা ট্রাস্টের চেয়ারম্যান বয়স্ক মানুষ। তার বয়স ৯৫। তাকে আমরা মুক্তি দিয়েছি।
গত ১৫ অগাস্ট বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল বৈশাখীতে প্রচারিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, চিকিৎসায় অবহেলার কারণে ওই হাসপাতালে শিশুর মৃত্যু হয়েছে। প্রতিবেদনটি আদালতের নজরে এলে ১৭ অগাস্ট আদালত ইবনে সিনা হাসপাতালের ট্রাস্ট্রি বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ বোর্ডের সব সদস্য ছাড়াও দুই চিকিৎসককে তলব করে।
ল্যাবএইড
হাইকোর্টের ওই একই বেঞ্চ চিকিৎসায় অবহেলার কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মৃদুল কান্তির মৃত্যুর ঘটনায় বেসরকারি হাসপাতাল ল্যাবএইডের বিষয়ে পরবর্তী শুনানির দিন আগামী ১০ অক্টোবর নির্ধারণ করেছে। এ ছাড়া এ ঘটনায় কেন এফআইআর দায়ের করা হয়নি তা এ সময়ের মধ্যে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আলতাফ হোসেনকে জানাতে বলা হয়েছে। বিষয়টির তদন্ত করতেও সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ইতিপূর্বের নির্দেশনা অনুযায়ী গতকাল ল্যাবএইডের সংশ্লিষ্টরা আদালতে হাজির হন। তাদের পক্ষে অ্যাডভোকেট আনিসুল হক মৃদুল কান্তির পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেয়ার বিষয়টি আদালতকে জানান। তখন আদালত বলে, খুন করে পয়সা দিয়ে সমঝোতা করবেন তা হবে না। পরে আদালত পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করে।
স্কয়ার হাসপাতাল
স্কয়ার হাসপাতালে জীবিত ছেলের পরিবর্তে মৃত ছেলে দেয়ার ঘটনায় আগামী ২০ অক্টোবর পরবর্তী শুনানি দিন ধার্য করা হয়েছে। এ ছাড়া এ বিষয়ে ডিএনএ টেস্ট করারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য সচিব ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের এ নির্দেশ দেয়া হয়। গত ১৪ আগস্টের আদেশ অনুযায়ী গতকাল স্বয়ার হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা আদালতে হাজির হন।