প্যারাসিটামল কোনো অপরিচিত ওষুধ নয়। একে বলা হয় ওটিসি বা ওভার দ্য কাউন্টার ড্রাগ। প্রেসক্রিপশন লাগে না, ফার্মেসিতে গেলেই আপনি ইচ্ছেমতো প্যারাসিটামল কিনতে পারেন। আর এখানেই ঘটেছে বিপত্তি। কোন কোম্পানি, কতটুকু মানসম্মত ওষুধ যাচাই-বাছাই নেই, দেদার বিক্রি হচ্ছে। মুনাফার লোভে ভেজাল আর কম মানসম্পন্ন ওষুধ চলে যাচ্ছে ঘরে ঘরে। আমাদের দেশে স্বাস্থ্য সচেতনতাবোধ অপেক্ষাকৃত কম থাকায় একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী ভেজাল ওষুধের কারবার নির্বিবাদে করে যাচ্ছেন। তদারকির কেউ নেই।
গত কয়েকদিনে ভেজাল প্যারাসিটামলের বিষক্রিয়ায় বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু কিডনি বিভাগে ভর্তিকৃত পাঁচজন এবং ঢাকা শিশু হাসপাতালে ভর্তিকৃত ১৭ শিশুর মৃত্যু ঘটে। এই প্যারাসিটামল ট্র্যাজেডির ঘটনা কিন্তু নতুন কিছু নয়। ১৯৯২ সালে বিষাক্ত প্যারাসিটামল সেবনে এরকম ৩৩৯ শিশুর প্রাণ অকালে ঝরে গিয়েছিল সারাদেশে। তখন দেশে গ্যাস ক্রোমোটোগ্রাফির মতো কোনো আধুনিক মেশিন ছিল না। বিদেশি ল্যাবে ধরা পড়ে ভেজাল প্যারাসিটালের ঘটনা। প্যারাসিটামল তৈরির ক্ষেত্রে প্রকৃত দ্রাবক হলো প্রোপাইলিন গ্গ্নাইকোল।
অসাধু ব্যবসায়ীরা প্যারাসিটামল সিরাপটি স্বচ্ছ রাখতে কম দামের বিষাক্ত ডাই-ইথিলিন গ্লাইকোল ব্যবহার করে থাকেন। অথচ এই দ্রাবকটি শুধু প্লাস্টিক ও রাবার সামগ্রী তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আর এভাবেই মুনাফালোভীরা আমাদের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত কেড়ে নিচ্ছে বেশ কিছু মূল্যবান প্রাণ। ডাই-ইথিলিন গ্লাইকোল যুক্ত প্যারাসিটামল সেবনে যে কোনো ব্যক্তির কিডনির কার্যকারিতা আকস্মিকভাবে নষ্ট হয়ে যায়। প্রস্রাবের বেগ কমে আসে, রং গাঢ় লাল হয়ে যায়। একসময় প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যায়। শরীরে ইউরিয়ার পরিমাণ বেড়ে গেলে রোগী চেতনাহীন হয়ে পড়ে, অনেকক্ষেত্রে খিঁচুনিও দেখা দেয়। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু কিডনি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, প্রাথমিক অবস্থায় ডায়ালাইসিসের মাধ্যমে অনেকক্ষেত্রে রোগীদের বাঁচিয়ে তোলা সম্ভব হলেও বিষক্রিয়া মারাত্মক হলে অথবা বিলম্বে চিকিৎসা নিলে প্রাণ বাঁচানো কঠিন কাজ হয়ে পড়ে। ইদানীং ভেজাল প্যারাসিটামলের আতঙ্কে অনেক বাবা-মা শিশুর ভীষণ জ্বর হলেও প্যারাসিটামল সিরাপ আর দিচ্ছেন না। চট করে এধরনের ভুল সিদ্ধান্ত নেবেন না। শিশুর জ্বর ১০১ হলে তাকে ১০-১৫ মি. গ্রা./ কেজি এই মাত্রায় প্যারাসিটামল দিতে হবে। খেতে না পারলে ১০ মি. গ্রা./ কেজি মাত্রায় মলদ্বারে প্যারাসিটামল সাপোসিটরি দিতে হবে। মলদ্বারে ক্ষত অথবা ডায়রিয়া থাকলে প্যারাসিটামল সাপোসিটরি দেবেন না। সুতরাং আতঙ্কগ্রস্ত হওয়ার কিছু নেই, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ভালো কোনো ফার্মাসিউটিক্যালসের প্যারাসিটামল সিরাপ খেতে দিন। আপনার শিশু আশা করি সুস্থ থাকবে।
ডা. আবদুল্লাহ শাহরিয়ার
শিশু বিশেষজ্ঞ, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল