বিশ্বখ্যাত লিভার ট্রান্সপস্নান্ট ও হেপাটোপ্যাক্রিয়েটোবিলিয়ারি সার্জন প্রফেসর মোহাম্মদ রেলা বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান লিভার এবং প্যানক্রিয়েটিক ডিজিসের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের প্রায় ৫ শতাংশ মানুষ এখন হেপাটাইটিস বি ও সি পজিটিভ ভাইরাসে আক্রান্ত। লিভার রোগের কারণে হূদরোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যাচ্ছে।
মূলত লিভার রোগে যাদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে তাদেরকেই লিভার ট্রান্সপস্নান্টের পরামর্শ দেয়া হয়। গতকাল রবিবার সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রফেসর মোহাম্মদ রেলার মতে, ‘পশ্চিমা বিশ্বে ১০ শতাংশই লিভার ট্রান্সপস্নান্ট করা হয় ডোনেশনের মাধ্যমে। বাংলাদেশ ও ভারতে এই ডোনেশনের পরিমাণ বাড়ছে। লিভার ট্রান্সফারের জন্য উদ্বুদ্ধ করতে হবে। ভারতে এটি করতে প্রায় ২০ থেকে ২২ লাখ রুপির প্রয়োজন। আর বাংলাদেশের টাকায় তার পরিমাণ ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা। এটা অবশ্য ব্যয়বহুল একটি চিকিৎসা। আমি যখনই লিভার ট্রান্সপস্নান্টের পরামর্শ দেই তখন রোগীর স্বাস্থ্য, পরবতর্ীতে তার ঝুঁকি, রোগের ভয়াবহতা ইত্যাদি বিবেচনা করেই এই পরামর্শ দিয়ে থাকি।
প্রফেসর রেলা আরো বলেন, ‘২০ বছর ধরে আমি লিভার ট্রান্সপস্নান্টের সাথে জড়িত আছি। আমি চেন্নাই থেকে ঢাকায় এসেছি লিভার ট্রান্সপস্নান্টের সুবিধা সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে। আমি দীর্ঘদিন যুক্তরাজ্যে লিভার ট্রান্সপস্নান্টের কাজ করেছি। কিন্তু সেখানে খরচ অনেক বেশি। এখন ভারতে এই চিকিৎসা সম্ভব হচ্ছে অনেক কম খরচে। যুক্তরাষ্ট্রে যে খরচ হয় তার এক-পঞ্চমাংশ দিয়ে ভারতে করা সম্ভব। লিভার রোগের অনেক সমস্যা রয়েছে। এটি লিভার ক্যান্সার, কিডনি নষ্টসহ বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নষ্ট করে দিতে পারে। ভারত ও বাংলাদেশে লিভার রোগের অধিকাংশই হচ্ছে হেপাটাইটিস বি’ ভাইরাসের মাধ্যম। বাংলাদেশ ও ভারতের প্রায় ৫ শতাংশ মানুষ হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসে আক্রান্ত। লিভার রোগের কারণে হূদরোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। তিনি বলেন, লিভার রোগে যাদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে তাদেরকেই লিভার ট্রান্সপস্নান্টের পরামর্শ দেয়া হয়।
গেস্নাবাল হসপিটালস লিভার ট্রান্সপস্নান্ট প্রোগ্রাম
প্রফেসর মোহাম্মদ রেলা বর্তমানে ভারতের গেস্নাবাল হসপিটালের ট্রান্সপস্নান্ট প্রোগ্রামের হেড এবং চীফ সার্জন হিসাবে নিযুক্ত আছেন। প্রায় এক যুগ আগে ভারতের হায়দ্রাবাদে এই গেস্নাবাল হসপিটাল গ্রুপ যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে ভারতের বিভিন্ন স্থানে অভিজ্ঞ ডাক্তারদের মাধ্যমে তারা চিকিৎসা সেবা প্রদান করে যাচ্ছে। ভারতের সবচেয়ে বড় লিভার প্রোগ্রাম নিয়ে গেস্নাবাল হসপিটাল এ পর্যন্ত প্রায় ২০০টি সফল লিভার ট্রান্সপস্নান্ট সম্পন্ন করেছে। লিভার ট্রান্সপস্নান্টের এই সেবা দক্ষিণ ভারতের হায়দ্রাবাদ, চেন্নাই এবং ব্যাঙ্গালোরে রয়েছে। মুম্বাইয়ে দ্রুত একটি শাখা খোলা হচ্ছে।
সাংবাদিক সম্মেলনে ভারতের গেস্নাবাল হসপিটালস গ্রুপের চেয়ারম্যান ডা. কে রবীন্দ্রনাথ বলেন, ‘আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে গেস্নাবাল হসপিটাল শুধু ভারতেই নয় পুরো বিশ্বেই শাখা-প্রশাখা বিস্তর করবে। এটা শুধু হাসপাতাল নয়, একটি গবেষণা কেন্দ্র। আমরা অন্যদের চেয়ে ভালো সেবা দিতে বদ্ধপরিকর। আমাদের ডাক্তাররাও সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছে।’
ঢাকায় লিভার ট্রান্সপস্নান্ট প্রোগ্রাম
ভারতের গেস্নাবাল হসপিটাল গ্রুপ এখন ঢাকায় দু’টি ইনফরমেশন এবং অ্যাসিস্টেন্ট সেন্টার স্থাপন করেছে। এই সেন্টারের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের কাছে যুগোপযোগী ও সর্বাধুনিক চিকিৎসা সেবা পেঁৗছে দেয়া যাবে। যেসব রোগী ভারতের গেস্নাবাল হসপিটালের বিভিন্ন স্থানে অবস্থানরত সুপার স্পেশালিস্টদের সাথে যোগাযোগ করার সুযোগ পান না তাদের জন্য এই টেলিকনসাল্ট সার্ভিস সেন্টারে বিশ্বের সর্বাধুনিক তথ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থা রাখা হবে, যার মাধ্যমে তারা স্পেশালিস্টদের সাথে যোগাযোগ করতে পারবেন। এছাড়াও এই টেলিকনসাল্ট সার্ভিসের মাধ্যমে গেস্নাবাল হসপিটালসের স্পেশালিস্টগণ রোগীদের ভিডিও কনফারেন্সিং এবং তথ্য প্রদানের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা সম্পর্কে অবহিত করবেন এবং প্রয়োজন হলে ক্লিনিং সম্পর্কেও অবহিত করবেন। এই সার্ভিসের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বখ্যাত সুপার স্পেশালিস্টদের সংস্পর্শে এসে কনসাল্ট করতে পারবেন। এই ইনফরমেশন ও অ্যাসিস্টেন্ট সেন্টার শুধুমাত্র রোগীদের জন্য সুবিধা বয়ে আনবে না, এই সেন্টারটি বাংলাদেশের সকল ডাক্তারদের খুলে দেবে চিকিৎসা সেবার নতুন দুয়ার। যার মাধ্যমে তারা তাদের রোগীদের সুপার স্পেশালিস্টদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে দিতে পারে। যে সকল রোগী ভারতের গেস্নাবাল হসপিটালের বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করতে চান, তাদের নিরাপদ ভ্রমণের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সকল তথ্য প্রদান করবে এই ইনফরমেশন সেন্টার।
সম্প্রতি ইন্ডিয়ার ওয়ার্ল্ড ক্লাস টার্শিয়ারি কেয়ার চেইন অব মাল্টি স্পেশালিটি হসপিটাল থেকে বিশ্বখ্যাত লিভার ট্রান্সপস্নান্ট সার্জন মোহাম্মদ রেলা এবং গেস্নাবাল হসপিটালস গ্রুপের চেয়ারম্যান ডা. কে রবীন্দ্রনাথ বাংলাদেশ সফরে আসেন। সফরে তারা লিভার বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন।
উল্লেখ্য, প্রফেসর রেলার এইচপিবি সার্জারির ক্ষেত্রে সবচেয়ে ইনোভেটিভ সার্জন হিসাবে রয়েছে আন্তর্জাতিক খ্যাতি। মাত্র ৫ দিন বয়সের একটি বাচ্চার লিভার নিরাপদে ট্রান্সপস্নান্ট করার মাধ্যমে তিনি ২০০০ সালে গ্রিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ডে নাম লেখান। সম্প্রতি লন্ডনের একটি হসপিটাল তাকে সম্মান সূচক ডিগ্রী প্রদান করে।