প্রতিটি উপজেলায় ক্ষুদ্র ডায়াবেটিক কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে

– ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান

আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই দেশের প্রতিটি উপজেলায় ক্ষুদ্র ডায়াবেটিক কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। এমন আশা জাগানিয়া সংবাদসহ ডায়াবেটিস রোগ প্রসঙ্গে নানা প্রশ্নে দেহঘড়ির মুখোমুখি হয়েছেন অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান।

কোনো লক্ষণ ছাড়া কি ডায়াবেটিস হতে পারে?
■ হ্যাঁ, হতে পারে। বিশেষ করে টাইপ-২ ডায়াবেটিস লক্ষণ ছাড়াই হঠাৎ কোনো জটিলতা নিয়ে ধরা পড়তে পারে। তাই ৪৫ বছরের ঊধর্ে্ব সব মানুষের বিশেষ করে যাদের পরিবারের কারও ডায়াবেটিস আছে তাদের উচিত ৬ মাস থেকে ১ বছর পরপর ডায়াবেটিসের পরীক্ষা করানো।

এ রোগের চিকিৎসা কী?
■ আসল কথা হলো সুশৃঙ্খল জীবনযাপন, পরিমিত আহার, পরিমিত ব্যায়াম আর ধরন অনুযায়ী মুখে খাওয়ার ট্যাবলেট ও ইনসুলিন নিতে হবে।

ইনসুলিননির্ভর ডায়াবেটিসের আধুনিক চিকিৎসা কী?
■ ইনহেলারের মাধ্যমে ইনসুলিন নেওয়ার জন্য ডিভাইস বাজারে এলেও এটি তেমন জনপ্রিয়তা না পাওয়ায় বাজার থেকে উঠিয়ে নেওয়া হয়। আজকাল ইনসুলিন পাম্প বেশ জনপ্রিয়। বিদেশে মুখে খাওয়ার ইনসুলিন নিয়ে ব্যাপক তোড়জোড় শুরু হয়েছে। আশা করা যায়, অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশে এটি সহজলভ্য হবে।

বাংলাদেশের ডায়াবেটিস পরিস্থিতি সম্পর্কে বলুন?
■ সবচেয়ে উদ্বেগের ব্যাপার হলো, বাংলাদেশে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে দেখা দিয়েছে গ্রামের মানুষের মধ্যে প্রি-ডায়াবেটিস কন্ডিশনের হার বেশি আর শহরের লোকের মধ্যে ডায়াবেটিস বেশি।

বাংলাদেশে ডায়াবেটিসের ব্যাপকতার কারণ কী?
■ আমাদের জীবনযাত্রার পরিবর্তন এ জন্য দায়ী। শারীরিক পরিশ্রম কমিয়ে দিয়েছে মানুষ। অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে খোলা মাঠ কমে গেছে, নগরায়নের বিপক্ষে নই আমি; কিন্তু নগরায়ন করতে হলে যে তাতে পর্যাপ্ত খোলা জায়গা রাখা যাবে না তা তো নয়। স্কুলগুলোতে আজ খেলার মাঠ নেই। তাই শিশুরাও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে। প্রত্যেক স্কুলে খেলার মাঠ থাকবে এটা ভাবা আজকাল বিলাসিতাই বলব; কিন্তু দু’তিনটি স্কুল মিলে তো একটি খেলার মাঠ থাকতে পারে। একেক দিন একেক স্কুল তাতে খেলল, খেলাধুলার অভাব ছাড়াও অতিরিক্ত চর্বি ও শর্করা জাতীয় খাবার গ্রহণ করার ফলেও ডায়াবেটিসের জটিলতা বাড়ছে।

এ থেকে পরিত্রাণের উপায় কী?
■ পর্যাপ্ত খেলাধুলার ব্যবস্থা করা, নিয়মিত ব্যায়াম করা ও খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন। বিশেষ করে ফাস্টফুড খাওয়া কমিয়ে দিতে হবে। সরকারের উচিত, ফাস্টফুড কোম্পানিগুলোকে আইন করে বাধ্য করা তারা যেন ফাস্টফুডে কতটুকু ক্যালোরি আছে তার লেবেল লাগিয়ে দেয়।

বাংলাদেশে ডায়াবেটিস চিকিৎসায় ডায়াবেটিক সমিতি কীভাবে ভূমিকা রাখছে?
■ আমরা দেশের সর্ববৃহৎ ডায়াবেটিক হাসপাতাল চালাই। দেশের বিভিন্ন স্থানে এভাবে সমিতির আরও হাসপাতাল আছে। আমরা নিয়মিত চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণও দিয়ে থাকি। এ তো গেল চিকিৎসার দিক; কিন্তু আসল হলো সচেতনতা। এ লক্ষ্যে প্রতি বছর ডায়াবেটিস দিবসে আমরা ব্যাপক আয়োজন করি। ২৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় ডায়াবেটিস সচেতনতা দিবস পালন করি। এছাড়া আমরা একটি কার্যক্রম হাতে নিয়েছি, যাতে ইমামরা খুতবার সময় ডায়াবেটিস সম্পর্কে বলেন। এ লক্ষ্যে ইসলামী চিন্তাবিদদের সঙ্গে নিয়ে একটি পুস্তিকাও ছেপেছি। এছাড়া সরকারকেও বলেছি, দেশের বিভিন্ন স্থানে যে ক্লাবগুলো আছে তাতে যেন সুইমিংপুল বা অন্যান্য ব্যবস্থা থাকে।

ডায়াবেটিক সমিতির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
■ আমাদের মূল লক্ষ্যই হলো কোনো ডায়াবেটিস রোগী যেন বিনা চিকিৎসায় না থাকে। এ জন্য আমরা সারাদেশে ডায়াবেটিসের চিকিৎসা ছড়িয়ে দিতে চাই। আমরা ইতিমধ্যে একটি কার্যক্রম হাতে নিতে যাচ্ছি, যার মাধ্যমে আগামী আড়াই বছরের মধ্যে বাংলাদেশের প্রতিটি উপজেলায় একজন প্রশিক্ষিত ডায়াবেটিস ডাক্তার থাকবেন। তার চেম্বার ও প্রশিক্ষণের সহায়তা আমরা দেব। এই চেম্বারই হবে ডায়াবেটিস চিকিৎসার কেন্দ্র। তাতে অনেক আগেই ডায়াবেটিস রোগ ধরা পড়বে। কমবে জটিলতা, আমাদের আরেকটি লক্ষ্য হলো, শিশুদের পাঠ্যপুস্তকে যেন ডায়াবেটিস সম্পর্কে সামান্য হলেও কিছু তথ্য থাকে। তাতে করে শিশুরা ছোট বয়স থেকেই এ রোগ সম্পর্কে জানতে পারবে। এ লক্ষ্যে ইতিমধ্যে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের কথাও হয়েছে। সবার সহযোগিতা পেলে এ ব্যাপারেও আমরা সফল হবো। মোটকথা ডায়াবেটিক রোগের চিকিৎসা ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে যা করা দরকার ভবিষ্যতে তাই করবে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি।

Exit mobile version