প্রধান খবর

প্রাণঘাতী দেড় লাখ ফার্মেসি

Published

on

ওষুধ বিক্রির জন্য সরকারি হিসাবে প্রায় সোয়া দুই লাখ ফার্মেসি রয়েছে। তবে বেসরকারি হিসাবে ফার্মেসির সংখ্যা প্রায় সাত লাখ। বেশিরভাগ ফার্মেসিই নজরদারির বাইরে। এগুলোতে বিক্রি হয় অনুমোদনহীন ওষুধ। কিছু ওষুধ নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রাখার জন্য ফার্মেসিতে বিশেষ ধরনের রেফ্রিজারেটর থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু অনেক ফার্মেসিতেই তা নেই। ফলে জীবনরক্ষাকারী ওষুধের মান নষ্ট হয়। এ কারণে ওষুধ সেবনে রোগ নিরাময়ের বদলে রোগীর স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ে। ওষুধ বিক্রি করে মানুষের প্রাণ বাঁচানোর কথা ভুলে গিয়ে ফার্মেসিগুলো প্রাণঘাতী হয়ে ওঠে।

ওষুধের ব্যবসা করতে ১১টি শর্ত মানতে হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ফার্মেসি চালুর আগে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর থেকে ড্রাগ লাইসেন্স নেওয়া, ফার্মেসিতে রেজিস্টার্ড ফার্মাসিস্ট রাখা, ফার্মাসিস্টের অনুপস্থিতিতে ওষুধ বিক্রি না করা অন্যতম। এ ছাড়া মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ রাখা যাবে না; ওষুধ নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হবে; ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) ও প্রেসক্রিপশনের ওষুধ আলাদা শেলফে রাখতে হবে; ফার্মেসিতে নকল, আনরেজিস্ট্রার্ড, মিসব্র্যান্ড ওষুধ রাখা যাবে না; ফুড সাপ্লিমেট বিক্রি করা যাবে না ইত্যাদি। প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার ফার্মেসিতে থাকা ওষুধ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে এবং মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ থাকলে তা সরিয়ে ফেলতে হবে।

ফার্মেসিগুলোর এসব শর্ত মেনে চলার কথা থাকলেও তারা এসব নিয়মনীতির তোয়াক্কা করে না। জনবলের অভাবে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর থেকেও এদের তদারকি করা সম্ভব হচ্ছে না। এদের নিয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর উদ্বিগ্ন, তাই ফার্মেসিতে মাঝেমধ্যেই অভিযান চালায়।

ফার্মেসির মান নিয়ন্ত্রণে রাখতে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব), পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) যৌথ উদ্যোগে অভিযান চালিয়ে থাকে। অভিযানকালে কোটি কোটি টাকার আনরেজিস্টার্ড, ভেজাল, নকল ও নিম্নমানের ওষুধ ধরা পড়ে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ফার্মেসিতে অভিযান চালিয়ে ২ হাজার ৫৫৫টি মামলা করা হয়। এর মধ্যে মোবাইল কোর্টে ২ হাজার ২৮০টি, ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে ২৮০টি এবং ওষুধ আদালতে ৫টি মামলা করা হয়। ৬৮ কোটি ৬৪ লাখ ৩০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে এবং চারটি ফার্মেসি বন্ধ করে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে অভিযানকালে যেসব ওষুধ জব্দ করা হয়, সেগুলো ধ্বংস করে দেওয়া হয়। তারপরও অনৈতিক ব্যবসা বন্ধ হচ্ছে না।

পরিদর্শন করা ফার্মেসিগুলোতেও নানা ধরনের অনিয়ম পাওয়া গেছে। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অভিযানে দায়েরকৃত মামলা ও জরিমানার তথ্যই তা বলছে। এতকিছুর পরও বেশিরভাগ ফার্মেসি নজরদারির বাইরে থেকে যায়।

Advertisement

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক আক্তার হোসেন বলেন, ‘অধিদপ্তর নিয়মিত ফার্মেসি পরিদর্শন করে থাকে। তবে জনবলের ঘাটতির কারণে সব ফার্মেসি পরিদর্শন সম্ভব হয় না। এজন্য রোটেশন করে পরিদর্শন করা হয়ে থাকে।’ তিনি বলেন, ‘লাইসেন্সবিহীন ফার্মেসি রয়েছে। তবে তার নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান নেই। আমরা লাইসেন্সবিহীন ফার্মেসির তথ্য পেলে অভিযান চালাই। চেষ্টা করছি সব ফার্মেসি নজরদারিতে আনতে। এটি করা গেলে ওষুধ ব্যবস্থাপনাও ঠিক হবে।’

২০২৪ সালের জুলাই মাসে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সবশেষ প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে লাইসেন্সধারী ২ লাখ ১৬ হাজার ৭৯১টি ফার্মেসি রয়েছে। এসবের মধ্যে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ঔষধ প্রশাসনের কর্মকর্তারা মাত্র ৬৩ হাজার ৭৯১টি ফার্মেসি পরিদর্শন করেছেন। ১ লাখ ৫৩ হাজার ফার্মেসিই অপরিদর্শিত ছিল। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৫৪ হাজার ৮৩৯টি, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩৬ হাজার ৪৪১টি, ২০২০-১৯ অর্থবছরে ৫৫ হাজার ২০০টি এবং ২০১৯-১৮ অর্থবছরে ৫৯ হাজার ৮৮৩টি, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৫৭ হাজার ১৭৫টি ফার্মেসি পরিদর্শন করা হয়েছে। এর আগে ২০১৬ সালে ৬১ হাজার ৯৪৫টি, ২০১৫ সালে ৫৭ হাজার ৭৩৪টি, ২০১৪ সালে ৪৯ হাজার ৮১৪টি এবং ২০১৩ সালে ৩৪ হাজার ৪৭৩টি ফার্মেসি পরিদর্শন করা হয়েছে। কোনো বছরই অর্ধেক ফার্মেসিও পরিদর্শন করা সম্ভব হয়নি। বেসরকারি হিসাবের ফার্মেসিগুলো ধরলে প্রতি বছর প্রায় সাড়ে ছয় লাখ ফার্মেসি পরিদর্শনের বাইরে থেকে যায়। এক কথায় দেশের ৯১ শতাংশ ফার্মেসি ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের নজরে নেই।

ড্রাগ লাইসেন্সের শর্তানুযায়ী, সাধারণত কম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াসম্পন্ন ওষুধ চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া বিক্রি করতে পারে ফার্মেসিগুলো। অন্য কোনো ওষুধ চিকিৎকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া বিক্রি করা যাবে না। কিন্তু এ নিয়মের তোয়াক্কাই করা হয় না। চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই বিক্রি করা হচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক, প্যাথেডিন ও মরফিন ইনজেকশনসহ অনেক ধরনের ওষুধ। মাদকসেবীরা ফার্মেসি থেকে প্যাথেডিন ইনজেশন, স্নায়ু শিথিল করার ওষুধ কিনে নিয়ে নেশা করছে। একই সিরিঞ্জের মাধ্যমে শিরায় প্রবেশ করাচ্ছে। এতে অনেকে হেপাটাইটিস ও এইচআইভিসহ নানা ধরনের রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে।

চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিকসহ নানা ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ওষুধ সেবনে রোগীরা নানা সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষ করে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের কোর্স শেষ না করায় এর কার্যকারিতা নষ্ট হচ্ছে। ফলে ওই ব্যক্তি পরে জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হলে অ্যান্টিবায়োটিক আর কাজ করছে না। অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহারে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।

গত বছর ২৩ নভেম্বর এক বৈজ্ঞানিক সেমিনারে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মাহবুবা চৌধুরী এক বৈজ্ঞানিক সেমিনারে বলেন, যথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে অকার্যকর হয়ে পড়েছে অধিকাংশ অ্যান্টিবায়োটিক। প্রধান চারটি জীবাণুর ক্ষেত্রে মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্সের হার এখন ৯১-৯৮ শতাংশ। অর্থাৎ, অধিকাংশ অ্যান্টিবায়োটিকই এসব জীবাণুকে নিয়ন্ত্রণ করতে অক্ষম। এক বছর সময় ধরে ২৫ হাজার ৫৬২টি নমুনা বিশ্লেষণ করে এমন ভয়াবহ তথ্য পেয়েছেন তিনি। রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) সহায়তায় এ গবেষণা করা হয়।

Advertisement

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেছেন, ফার্মেসিগুলোতে লাইসেন্সের শর্ত ভেঙে ফুড সাপ্লিমেন্ট বিক্রি করা হচ্ছে। বেশি মুনাফা হয় বলে ফার্মেসিগুলো এ কাজ করছে।

বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) মেডিসিন বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, নিম্নমানের ওষুধ জনস্বাস্থ্যের জন মারাত্মক হুমকি। যে রোগের জন্য ওষুধ দেওয়া হয়, অনেক সময় দেখা যায় তা কাজ করে না। নিম্নমানের ওষুধে রোগ তো ভালো হয়ই না, উল্টো ক্ষতি হয়।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেছেন, ফার্মেসি চালুর সময় ফার্মাসিস্ট নিয়োগ দেওয়া হলেও অনেকেই পরে ফার্মাসিস্ট বিদায় করে দেয়। কারণ, ফার্মাসিস্টকে বেশি বেতন দিতে হয়। আবার অনেক ফার্মেসি সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত খোলা থাকে, একজন ফার্মাসিস্ট তো এত সময় ডিউটি করতে পারবেন না। ফার্মাসিস্ট না থাকায় রোগীদের কাউন্সেলিং হচ্ছে না। মডেল ফার্মেসিগুলোতে রোগীরা যেন ঠিকমতো কাউন্সেলিং পায়, সেটি নিশ্চিত করা হয়।

জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, ‘দেশের সব ফার্মেসি নজরদারিতে রাখতে হবে। তাহলে ফার্মেসিতে নকল, আনরেজিস্টার্ড, মিসব্র্যান্ড ওষুধ বিক্রি হবে না। ঔষধ প্রশাসনের জনবলের ঘাটতি আছে বলে জনগণকে এ কাজে সম্পৃক্ত করা যেতে পারে। স্থানীয় স্কুল ও কলেজের শিক্ষকদের সমন্বয়ে থানাভিত্তিক কমিটি গঠন করে পরিদর্শনের দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে। প্রতিটি কমিটি নির্ধারিত ফির বিনিময়ে পরিদর্শন করে রিপোর্ট দেবে। সেই রিপোর্ট অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। এতে দেশের মানুষ উপকৃত হবে।’

জানা গেছে, ফার্মেসি ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতে যে জনবল ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের থাকা দরকার, তা নেই। জনবল সংকটের কারণে দেশের সব ফার্মেসি মনিটরিং করতে পারে না প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানটির অনুমোদিত পদ আছে ৭২০টি। ২৯৬টি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে।

Advertisement

অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘দেশে ফার্মাসিউটিক্যালস ইন্ডাস্ট্রি অনেক এগিয়েছে। নতুন নতুন প্রোডাক্ট বাজারে আসছে। কাজের পরিধিও ব্যাপক বেড়েছে। তুলনায় জনবল বাড়েনি। ফলে কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটছে। জেলা পর্যায়ে মাত্র একজন কর্মকর্তা রয়েছেন। অথচ এক উপজেলাতেই ৪০০ থেকে ৫০০ ফার্মেসি রয়েছে। পুরো জেলায় এ সংখ্যা দুই থেকে তিন হাজার। অল্পসংখ্যক পরিদর্শক দিয়ে সারা দেশের ফার্মেসি মনিটরিং করা সম্ভব হয় না। যেসব ফার্মেসি নজরদারির বাইরে, তারাই দেদার মানহীন ওষুধ বিক্রি করে; তা প্রাণক্ষয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।’

বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিলের তথ্যমতে, দেশের মোট ফার্মাসিস্ট আছেন ২ লাখ ৩১২ জন। এর মধ্যে সরকারি-বেসরকারি ৪৮টি ইউনিভার্সিটি থেকে গ্র্যাজুয়েশন করা এ-গ্রেডের ফার্মাসিস্টের সংখ্যা ২৩ হাজার ৪৭৭, ৫৯টি ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি (আইএইচটি) থেকে ডিপ্লোমাধারী বি-গ্রেডের ফার্মাসিস্টের সংখ্যা ৬ হাজার ৩০৫ এবং ট্রেনিং সেন্টার থেকে তিন মাসের কোর্স করা সি-গ্রেডের ফার্মাসিস্টের সংখ্যা ১ লাখ ৭০ হাজার ১৩০ জন।

বাংলাদেশ ফার্মসিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, এ-গ্রেডের ফার্মাসিস্ট ফার্মেসিতে চাকরি করতে চায় না। কারণ, এখন ফার্মেসিতে ১৫-২০ হাজার টাকা বেতন দেওয়া হয়। আগে ১০-১৫ হাজার টাকা দেওয়া হতো। এ কারণে গ্র্যাজুয়েশন করার ফার্মাসিস্টরা সাধারণত বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় চাকরি করেন অথবা বিদেশে চলে যান। আর বি-গ্রেডের ফার্মাসিস্টরা দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিতে প্রবেশকালে ১১তম গ্রেড পান। তারা বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে চাকরি করেন। তারাও ১০-১৫ হাজার টাকা বেতন হওয়ায় তারা ফার্মাসিতে চাকরি করতে চান না। ফার্মেসিগুলো চলে সাধারণত সি-গ্রেডের ফার্মাসিস্ট দিয়ে। আবার সব ট্রেনিং করা ফার্মাসিস্ট চাকরি পানও না। কারণ অনেক ফার্মেসি চলে ফার্মাসিস্ট ছাড়াই।

তিনি আরও বলেন, কয়েক বছর আগে সরকার মডেল ফার্মেসি চালু করে। তখন শর্ত ছিল মডেল ফার্মেসিতে এ-গ্রেডের ফার্মাসিস্ট রাখা বাধ্যতামূলক। এ কারণে অনেক মডেল ফার্মেসির মালিক এ-গ্রেডের ফার্মাসিস্টের সঙ্গে চুক্তিনামা দিয়ে ব্যবসা করছেন। তাছাড়া হাসপাতাল ও ক্লিনিকে একজন করে এ-গ্রেডের ফার্মাসিস্টকে ইনচার্জ এবং বি-গ্রেডের ফার্মাসিস্ট রাখার বিধান রয়েছে। কিন্তু সেখানেও সি-গ্রেডের ফার্মাসিস্ট দিয়ে কাজ চালানো হয়।

সুত্র: দেশ রুপান্তর

Advertisement

Trending

Exit mobile version