এই শিশুরা কানে শুনত না এবং কথাও বলতে পারত না। তারা এখন কানে শুনতে পারছে, কথাও বলতে পারছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্টের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ৭ শতাধিক শিশু স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেয়েছে। ফলে সমাজ ও পরিবারের বোঝা থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছে এসব শিশুরা। আরও ১০০ শিশুর কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্টের কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে।
সোমবার (২৯ মে) রাজধানীর একটি হোটেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট প্রকল্পের উদ্যোগে ২ দিনব্যাপী ‘নবম কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট সার্জারি’ বিষয়ক কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সানুগ্রহে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় সম্পূর্ণ শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য অত্যন্ত ব্যয়বহুল কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট অধিকাংশ বিনামূল্যে ও কিছু সংখ্যক স্বল্পমূল্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৭১৮ জনের কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট সম্পন্ন করা হয়েছে, যাদের অধিকাংশই শিশু। এর ফলে যেসব মা-বাবা তার প্রিয় সন্তানের মুখে কোনোদিন মা-বাবা ডাক শুনতে পায়নি, তারা তাদের জীবনে মা-বাবা ডাক শুনতে পেয়েছেন।
বক্তারা বলেন, কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট চিকিৎসা পদ্ধতি যেমন জটিল তেমন ব্যয়বহুল। শুধু কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট ডিভাইসের দাম হল ৬ থেকে ১৪ লাখ টাকা। ২০১০ সালে যখন কর্মসূচি চালু হয়, তখন ডিভাইসসহ চিকিৎসার ব্যয় ছিল প্রায় অর্ধকোটি টাকা। তবে বিএসএমএমইউয়ের অটোল্যারিংগোলজি হেড নেক সার্জারি বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ, অডিওলজিস্ট, স্পিচ থেরাপিস্টসহ সুদক্ষ টিম বর্তমান আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের সহায়তায় সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এই মহতী সেবাটি দিয়ে আসছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আছেন বলেই টয়োটা গাড়ির সমানমূল্যের একটি ডিভাইস বিনামূল্যে প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন এমনভাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়কে গড়ে তুলছে যাতে সব ধরনের আধুনিক চিকিৎসা এখানেই দেওয়া সম্ভব হয় এবং রোগীদের চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যেতে হবে না।
কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট কার্যক্রম বিএসএমএমইউয়ের কর্মসূচি পরিচালক ও অটোল্যারিংগোলজি-হেড অ্যান্ড নেক সার্জারি বিভাগের অটোলজি ডিভিশনের ডিভিশন প্রধান অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম জহুরুল হক সাচ্চুসহ মোট ৭ জন চিকিৎসক ১০০টি করে কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট সার্জারি সম্পন্ন করেছেন। এটা একজন চিকিৎসকের জন্য বিরাট অর্জন। এ উপলক্ষ্যে উপাচার্য সকলকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট প্রকল্পের পরিচালক ও অটোল্যারিংগোলজি হেড অ্যান্ড নেক সার্জারি বিভাগের অটোলজি ডিভিশনের ডিভিশন প্রধান অধ্যাপক ডা. এএইচএম জহুরুল হক সাচ্চু। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ডা. এ আল্লাম চৌধুরী, অধ্যাপক ডা. মো. দেলোয়ার হোসেন, সহযোগী অধ্যাপক ডা. কানু লাল সাহাসহ উক্ত বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থীবৃন্দ।