করোনাভাইরাস মহামারির সংক্রমণ আবারও ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। একইসঙ্গে বাংলাদেশেও কোভিড আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। এমন প্রেক্ষাপটে উচ্চঝুঁকি সম্পন্ন কোভিড রোগীদের কার্যকর চিকিৎসায় সারা বিশ্বে ব্যবহৃত যুক্তরাজ্যের ওষুধ ও স্বাস্থ্যসেবা পণ্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা (এমএইচআরএ) ও জাপানের অনুমোদিত এবং যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) ও ইউরোপীয় মেডিসিন অ্যাজেন্সির (ইএমএ) জরুরি বাজারজাতকরণের অনুমোদনপ্রাপ্ত ওষুধ মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি।
সুইজারল্যান্ডের F. Hoffmann-La Roche Ltd-এর Casirivimab & Imdevimab মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি ইনজেকশনটি সম্প্রতি বাংলাদেশেও ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর উচ্চঝুঁকি সম্পন্ন করোনা রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহারে জরুরি বাজারজাতকরণ করার অনুমোদন দিয়েছে।
আজ বুধবার (১২ জানুয়ারি) মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি সংক্রান্ত একটি সায়েন্টিফিক সেমিনারের আয়োজন করে রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যাল্স লিমিটেড। রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত এ সেমিনারে দেশবরেণ্য কোভিড চিকিৎসকরা বর্তমান ও ভবিষ্যত চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন।
এই ওষুধের প্রয়োগে ও সঠিক চিকিৎসাসেবা দেওয়ায় অসংখ্য উচ্চঝুঁকি সম্পন্ন করোনা রোগীদের অবস্থা জটিল আকার ধারণ করার আগেই প্রশমিত হয়েছে এবং জীবননাশের ঝুঁকি হ্রাস পেয়েছে। এর ফলে ওই অ্যান্টিবডি ব্যবহারকারী কোভিড রোগীদের হাসপাতালে ভর্তির পরিমাণ প্রায় ৭০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
Casirivimab ও Imdevimab-এই দুইটি মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি করোনাভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনের সঙ্গে সংযুক্ত করে করোনা সংক্রমণকে প্রতিরোধ করে। যার ফলে করোনা ফুসফুসে আক্রমণ করতে পারে না এবং এই প্রক্রিয়ায় মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি দুইটি মানবদেহের ফুসফুসে ভাইরাসজনিত সংক্রমণ প্রতিহত করে।
ক্লিনিক্যাল সুবিধা
১. Casirivimab ও Imdevimab প্রয়োগের ফলে তিন থেকে পাঁচদিনের মধ্যে করোনাভাইরাসজনিত লক্ষণ ও ভাইরাসের সংক্রমণ হ্রাস পায়।
২. অতিরিক্ত কোনো সুরক্ষা নির্দেশনা ছাড়াই এই ওষুধ মানবদেহে সহনশীল। এটি সুনির্দিষ্টভাবে কাজ করে এবং এই অ্যান্টিবডি ব্যবহারে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সুযোগ কম।
৩. দুইটি ভিন্ন অ্যান্টিবডি করোনাভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনের রিসিপ্টরে একে অপরের সাথে কোনো বিরোধ ছাড়াই কাজ করে। ফলে অ্যান্টিবডি প্রদত্ত সুরক্ষার কারণে ভাইরাসটি অন্য কোনো পরিবর্তিত রূপ (Mutation/Variant) ধারণ করতে পারে না।
৪. এই অ্যান্টিবডি প্রয়োগের ফলে symptomatic কোভিড রোগীদের ঝুঁকি প্রায় ৮১% এবং মৃত্যুঝুঁকি প্রায় ৭০% হ্রাস পেয়ে থাকে।
৫. ভ্যাকসিনের দুইটি ডোজ পাওয়ার পরেও প্রায় ১৬% রোগী পুনরায় করোনা আক্রান্ত হয়ে থাকেন, যারা মুমূর্ষু অবস্থায় যাবার ক্ষেত্রে অন্যদের চেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। এরূপ রোগীদের ক্ষেত্রে Casirivimab ও Imdevimab প্রয়োগে ভালো ফলাফল পাওয়া গেছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর উচ্চঝুঁকি সম্পন্ন করোনা রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহারে ও জরুরি বাজারজাতকরণের জন্য Casirivimab ও Imdevimab অনুমোদন দিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যাল্স লিমিটেড বাংলাদেশে এই ওষুধের গুণগত মান নিশ্চিত করতে কোল্ড চেইন ব্যবস্থায় আমদানি করে, প্রেসক্রিপশন প্রদর্শন সাপেক্ষে বিশেষ ‘কোল্ড প্যাকে’ সরাসরি রোগীদের কাছে সরবরাহ কার্যক্রম সাফল্যের সাথে পরিচালনা করে আসছে।
এই উদ্যোগ করোনা মহামারি মোকাবিলায় চিকিৎসকদের মাঝে পৌঁছে দিয়েছে এক নতুন উপায়, যার ব্যবহারে চিকিৎসা সেবার মান উল্লেখযোগ্য হারে উন্নত হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপের ফলেই আজ কোভিড মহামারি বাংলাদেশে অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত।
রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যাল্স লিমিটেড এই উদ্যোগের অংশীদার হতে পেরে গর্বিত। রেডিয়েন্টের সব কর্মীর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলেই আজ এই অর্জন সক্ষম হয়েছে। রেডিয়েন্ট ভবিষ্যতেও বাংলাদেশ সরকারের এ ধরনের মহৎ উদ্যোগে ও মহামারির সম্মুখসারির সব যোদ্ধাদের সঙ্গে একযোগে কাজ করার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জরুরি বাজারজাতকরণের অনুমোদন
১) হালকা থেকে মাঝারি ধরনের লক্ষণ থাকা কোভিড রোগীদের চিকিৎসায় ২০২১ সালের ২০ জুলাই প্রথম দেশ হিসেবে জাপানে Casirivimab ও Imdevimab-এর পূর্ণ রেজিস্ট্রেশন ও ব্যবহারের অনুমোদন দেয় ফার্মাসিউটিক্যালস অ্যান্ড মেডিকেল ডিভাইসেস অ্যাজেন্সি (পিএমডিএ)।
২) ২০২১ সালের ২০ আগস্ট ইউকে এমএইচআরএ ওষুধ দুইটির সম্ভাবনা বিবেচনায় Ronapreve (Casirivimab এবং Imdevimab)-এর পূর্ণ ব্যবহার এবং বাজারজাতকরণের অনুমোদন দেয়।
৩) ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ইউএসএফডিএ) ২০২০ সালের ২১ নভেম্বর ইমার্জেন্সি ইউজ অথরাইজেশন (ইইউএ)-এর অধীনে মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি সলুশন ব্যবহারের অনুমোদন দেয়।
৪) ইউরোপিয়ান মেডিসিনস অ্যাজেন্সি (ইএমএ) ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশে ইমার্জেন্সি ইউজ অথরাইজেশন (ইইউএ)-এর অধীনে Casirivimab এবং Imdevimab ব্যবহারের অনুমোদন দেয়।
৫) সুইসমেডিক ২০২১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি সুইজারল্যান্ডে ইমার্জেন্সি ইউজ অথরাইজেশন (ইইউএ)-এর অধীনে Casirivimab এবং Imdevimab ব্যবহারের অনুমোদন দেয়।
৬) ডিরেক্টরেট জেনারেল অব হেলথ সার্ভিসেস (ডিজিএইচএস) ইন্ডিয়ার সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন (সিডিএসসিও) ২০২১ সালের ৫ মে উপমহাদেশের প্রথম দেশ হিসেবে ভারতে কোভিড রোগীদের জরুরি চিকিৎসায় মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি কম্বিনেশন ব্যবহারের অনুমোদন দেয়।
৭) মৃদু থেকে মাঝারি লক্ষণ থাকা কোভিড রোগীদের চিকিৎসায় ২০২১ সালের ১০ জুলাই কানাডায় Casirivimab এবং Imdevimab ব্যবহারের অনুমতি দেয় হেলথ কানাডা।
৮) ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ডিজিডিএ) ২০২১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে ইমার্জেন্সি ইউজ অথরাইজেশন (ইইউএ)-এর অধীনে মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি সলুশন ব্যবহারের অনুমোদন দেয়।
৯) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ২০২১ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর লিভিং গাইডলাইনে থেরাপিউটিকস অ্যান্ড কোভিড-১৯ শিরোনামে নন-সিভিয়ার রোগীদের ক্ষেত্রে Casirivimab এবং Imdevimab ব্যবহারে মত দেয়।