Home নির্বাচিতকরোনায় স্বজনহারাদের শোক কাটাতে বিনামূল্যে মিলবে চিকিৎসা

করোনায় স্বজনহারাদের শোক কাটাতে বিনামূল্যে মিলবে চিকিৎসা

by স্বাস্থ্য ডটটিভি কনটেন্ট কাউন্সিলর

দেশে নভেল করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ২৭ হাজার ৯০১ জন। অনেক পরিবারই হারিয়েছে একাধিক স্বজন। করোনা মহামারিতে স্বজন হারিয়ে যারা ভেঙে পড়েছেন, তাদের মনের ক্ষত সারাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) শুরু হয়েছে নতুন এক কর্মসূচি। করোনায় স্বজনহারাদের মনের ক্ষত সারাতে মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রতিষ্ঠান মনের খবর ও অধীর ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে চালু হয়েছে ‘কথা বলো, কথা বলি’ কার্যক্রম।

এই কার্যক্রমের আওতায় সেবা প্রত্যাশীদের টেলিফোনে পরামর্শ দেবেন বিএসএমএমইউর মনোরোগবিদ্যা বিভাগের চিকিৎসকরা। এজন্য ফোন করতে হবে ০১৪০৭৪৯৭৬৯৬ নম্বরে, শুক্রবার ছাড়া যে কোনো দিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টার মধ্যে।

সোমবার (৮ নভেম্বর) সকাল ১১টায় বিএসএমএমইউ অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। বিএসএমএমইউর মনোরোগ চিকিৎসকরা এই কার্যক্রমে সেবা দেবেন সেবাপ্রত্যাশীদের।

কোভিড-১৯ এ মৃত ব্যক্তির পরিবারের সদস্য, নিকটাত্মীয়, বন্ধুবান্ধব ও মৃত ব্যক্তির সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তি, স্বজনের অস্বাভাবিক মৃত্যু শোক ও কষ্ট বয়ে বেড়াচ্ছেন, স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে কষ্ট হচ্ছে বা ফিরতে পারছেন না, এমন ব্যক্তিরা বিনামূল্যে এই চিকিৎসা সেবা নিতে পারবেন।

এই সেবা টেলিফোনে দেওয়া হলেও যদি চিকিৎসকের মনে হয়, তবে কাউন্সেলিংয়ের জন্য রোগীকে হাসপাতালে ডাকা হবে বলেও জানানো হয়েছে।

‘কথা বল, কথা বলি’র সমন্বয়ক এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নাহিদ মাহজাবিন মোর্শেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মোহিত কামাল, বিএসএমএমইউর পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নজরুল ইসলাম খানসহ চিকিৎসকরা উপস্থিত ছিলেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তিদের স্বজনরা দীর্ঘমেয়াদি নানা মানসিক সমস্যায় ভুগতে পারেন। মানসিক সমস্যা থেকে শারীরিক নানা জটিলতাও দেখা দিতে পারে। এই কার্যক্রম তাদের অনেকটা উজ্জীবিত করতে পারবে।

অধ্যাপক শারফুদ্দিন বলেন, “করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তিদের স্বজনরা দীর্ঘমেয়াদী নানা মানসিক সমস্যায় ভুগতে পারেন। মানসিক সমস্যা থেকে শারীরিক নানা জটিলতায়ও ভুগতে পারেন তারা। এই কার্যক্রম তাদের অনেকটা উজ্জীবিত করতে পারবে।”

করোনাভাইরাসে মৃতের স্বজনরা কেন এই সেবা নেবেন- এর ব্যাখ্যায় বিএসএমএমইউর মনোরোগবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সেলিনা ফাতেমা বিনতে শহীদ বলেন, কারও স্বজন মারা গেলে তাৎক্ষণিক এবং দীর্ঘমেয়াদী- এই দুটো মানসিক প্রভাব।

“প্রাথমিক প্রভাব চলার সময় তার সাহায্য চাওয়ার ক্ষমতা থাকে না। আবেগে এতটাই বেশি থাকে যে কোনো যুক্তি থাকে না। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব মোকাবেলায় মানসিক স্বাস্থ্য সেবা প্রয়োজন। অনেকে কাজে যোগ দেবেন। কিন্তু আগের মতো কাজে মনোযোগ নাই। এক্ষেত্রে আমরা তাদের সহায়তা করতে পারব।”

তিনি বলেন, “কোভিড সংক্রমণ শেষের দিকে, এখনই স্বজন হারা মানুষের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য সেবা নেওয়া জরুরি।

“কারও কাছে মানুষ যখন হারায় তখন তার বুকের ভেতর একটা কষ্ট জমাট বাঁধে। জমাট এই বরফ গলাতে আমাদের এই কার্যক্রম সহায়তা করবে।”

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্ট অধ্যাপক ডা. মো. ওয়াজিউল আলম চৌধুরী বলেন, কারও স্বজন মারা গেলে মানুষ ‘অধিক শোকে পাথর’ হয়ে যায়। এই পাথরটা ভাঙতে হবে।

You may also like