আজ ২৮ মে, বিশ্ব ব্লাড ক্যানসার দিবস। প্রতি ৩৫ সেকেন্ডে পৃথিবীর কোথাও না কোথাও কারও না কারও ব্লাড ক্যান্সার ধরা পড়ছে।রক্ত ক্যান্সারের সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যেই এই দিবসটি পালিত হয়। রক্তের ক্য্যন্সার সংক্রামক বা ছোঁয়াচে নয়। নয় কোন অভিশাপ।
রক্তের ক্যানসার হলো রক্ত কোষের ক্যানসার, বিশেষত শ্বেত রক্তকনিকার। রক্তকোষ তৈরী হয় অস্হিমজ্জায়; স্টেম সেলের মিউটেশন ও অন্যান্য জটিল প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অতিমাত্রায় ও অস্বাভাবিকভাবে এই রক্তকোষ বৃদ্ধি পেয়ে সেগুলো অপরিপক্ক ও কার্যক্ষমতাহীন হয়ে পড়ে।
সঠিক কারন এখনো অস্পষ্ট। নানা তেজস্ক্রিয়তার প্রভাব, রাসায়নিক বর্জ্য, ধূমপান, কৃত্রিম রং, কীটনাশক, ভাইরাস, ভেজাল খাবার, হেয়ার ডাই, কিছু বংশগত রোগকে দায়ী করা হয়।
ব্লাড ক্যান্সারের সাধারণ উপসর্গ হলো ঘন ঘন জ্বর, দীর্ঘদিনের জ্বর, দূর্বলতা, অবসাদ, ক্ষুধামন্দা, ওজন কমা, ফ্যাকাশে হওয়া, ত্বকে লাল লাল দাগ, দাতের মাড়িফোলা, মাড়ি বা অন্যান্য স্হান দিয়ে রক্তপাত, হাড়ে ব্যাথা, গ্রন্হি ফোলা, পেটে চাকা, ঘনঘন সংক্রমণ।
সাধারণত রক্তের ক্যান্সার তিন ধরনের: ১.লিউকেমিয়া ২. লিম্ফোমা ৩ মায়োলমা। লিউকেমিয়া হলে শ্বেত রক্তকনিকার ক্যান্সার, লিম্ফোমা লিম্ফোসাইটের ক্যান্সার। মায়োলমা প্লাজমা সেলের ক্যান্সার।
এছাড়াও লিউকেমিয়াকে দুইভাগে ভাগ করা হয়:
একিউট ও ক্রোনিক লিউকেমিয়া।
বোন ম্যারো এসপিরেশন এন্ড বাইওপসি, ইমিউনোফেনোটাইপিং, সাইটোজেনেটিকস টেস্টিং র মাধ্যমে ব্লাড ক্যান্সার নির্নয় করা হয়।
লিম্ফোমা ডায়াগনোসিসের জন্য লিম্ফনোড / টিস্যু বাইয়োপসি ও ইমিউনোহিস্টোকেমেস্টি টেস্টিং অত্যাবশ্যক।
ক্যান্সার নিয়ে নানা অবৈজ্ঞানিক এবং কাল্পনিক তথ্য প্রচলিত আছে। এতে করে লোকজন বিভ্রান্ত হচ্ছে।
প্রাথমিক অবস্হায় নির্ভূলভাবে রোগ নির্ণয করা গেলে অনেক রক্ত ক্যান্সারের রোগ সারানোর সম্ভাবনা অনেকাংশে বেড়ে যায়।
বর্তমানে আমাদের দেশেই এসব রক্তরোগের আধুনিক চিকিৎসা কেমোথেরাপী ও কিছু কিছুক্ষেত্রে রেডিওথেরাপী ব্যবস্হা চালু আছে। এমনকি রক্তরোগের সম্পুর্ন নিরাময়কারী চিকিৎসা অস্হিমজ্জা প্রতিস্হাপনও এখন আমাদের দেশে অত্যন্ত দক্ষতা ও সফলতার সাথে হচ্ছে। চিকিৎসার এই অগ্রগতি ক্যান্সারকে জয় করে বেঁচে থাকার হারকে অনেক বাড়িয়েছে।
ডা. মুজাহিদা রহমান
রক্তরোগ ও ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ
সহকারী অধ্যাপক, হেমাটোলজি বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়