বিশ্বে প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন মানুষ আত্মহত্যা করে মারা যাচ্ছে। অর্থাৎ প্রতি ঘণ্টায় ৯০ জন। এ তথ্য জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। আত্মহত্যা প্রতিরোধ এখনো বিশ্বের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। পৃথিবীতে প্রতিবছর আট লাখ লোক আত্মহত্যা করে। তার মানে প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন আত্মহত্যা করে থাকে। ২০২০ সালে এ সংখ্যা হবে ১৫ লাখ।
মঙ্গলবার বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে এ সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
নতুন এই রিপোর্ট প্রতি ছয় মিনিটে নয়জন মানুষ আত্মহত্যা করে মারা যাচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে আগের চেয়ে আত্মহত্যার হার হ্রাস পেয়েছে ৯ দশমিক ৮ শতাংশ। ডব্লিউএইচও’র মহাপরিচালক ড. তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসাস বলেন, আত্মহত্যা করে যারা মারা যাচ্ছে তারা পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং সহকর্মীদের জন্য ট্র্যাজেডি। তাই আমরা প্রতিটি দেশকে টেকসই উপায়ে আত্মহত্যা প্রতিরোধে কৌশল অবলম্বনের আহ্বান জানাচ্ছি।
ডব্লিউএইচও এর তথ্য মতে, প্রতিবছর ৮ লাখ মানুষ মারা যান শুধু আত্মহত্যায়। সংস্থাটি বলছে, যা ম্যালেরিয়া, স্তন ক্যান্সার বা যুদ্ধ এমনকি হত্যাযজ্ঞের কারণে মারা যাওয়ার চেয়েও বেশি।
বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস ২০১৯
২০০৩ সালে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর সুইসাইড প্রিভেনশন (আইএএসপি) সংস্থাটি গঠন করা হয়। এ সংস্থার উদ্যোগে ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতায় প্রতিবছর ১০ সেপ্টেম্বর ‘বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ’ দিবস পালন করা হয়। এ বছর এর থিম হচ্ছে: ‘আত্মহত্যা প্রতিরোধে কাজ করি একসঙ্গে’।
https://www.youtube.com/watch?v=rUuKkGuAQWk
কাদের আত্মহত্যা প্রবনতা বেশি
১৫-২৯ বছরের মৃত্যুর মধ্যে আত্মহত্যাজনিত মৃত্যু হচ্ছে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কারণ।
পৃথিবীর সব মৃত্যুর ১ দশমিক ৪ শতাংশ হচ্ছে আত্মহত্যাজনিত।
এ ছাড়া যতজন আত্মহত্যা করে, তার ২৫ গুণ বেশি লোক আত্মহত্যার চেষ্টা করে এবং তার চেয়ে ও অনেক বেশি লোক আত্মহত্যা করার কথা চিন্তা করে।
খোঁজ নিলে আপনি আপনার আশপাশে তেমন কাউকে পেয়ে যাবেন।
প্রতিটি আত্মহত্যার কারণে প্রায় ১৩৫ জন মানুষ তীব্র শোকে ভোগে বা অন্য সমস্যায় ভোগে। তার মানে বছরে ১০৮ মিলিয়ন (১০ কোটি ৮০ লাখ) লোক আত্মহত্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
আত্মহত্যার কারণগুলোর মধ্যে আছে—
বংশধারার প্রবণতা
মনস্তাত্ত্বিক কারণ
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থা
ও অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ উপাদানের সম্মিলিত ফলাফল।
দারিদ্র্য, বেকারত্ব, প্রিয়জন হারানো, তর্ক-বিবাদ, আইনগত বা কর্মক্ষেত্রের সমস্যাসহ নানাবিধ সামাজিক, ব্যক্তিগত কারণও এর জন্য দায়ী।
ডিপ্রেশন, মাদকাসক্তিসহ অন্যান্য মানসিক রোগ হচ্ছে এর অন্যতম কারণ, যেগুলো চিকিৎসাযোগ্য।
এই দিবসের লক্ষ্য হচ্ছে—
১. আত্মহত্যা যে প্রতিরোধযোগ্য, সে ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি।
২. আত্মহত্যা বিষয়ে শিক্ষা কার্যক্রম বাড়ানো।
৩. আত্মহত্যা ও মানসিক রোগ নিয়ে সমাজে প্রচলিত অজ্ঞতা, কুসংস্কার ও লোকলজ্জা (স্টিগমা) কমানোর চেষ্টা গ্রহণ।
এটা কোনো অপরাধ নয়, এর জন্য কারও শাস্তি দেওয়া যাবে না (যদিও আমাদের দেশসহ অনেক দেশে আত্মহত্যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ)।
এবারের প্রতিপাদ্য বিষয়ে সবার যৌথ প্রচেষ্টার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে, কেননা আত্মহত্যা প্রতিরোধে প্রয়োজন বহুস্তরভিত্তিক, বহুমুখী কৌশলের সমন্বিত ব্যবস্থাপনা। মনে রাখবেন, এ প্রতিরোধে আপনিও একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। আত্মহত্যার আচরণ প্রতিরোধে আপনি প্রতিদিনই অনেক কিছু করতে পারেন।
এ বিষয়ে নিজকে ও অন্যদের আরও শিক্ষিত করে তুলতে পারেন;
আত্মহত্যার কারণ ও এর পূর্বসতর্কতা বার্তাগুলো কী তা জানতে পারেন;
যাঁরা মনোযাতনায় ভুগছেন, তাঁদের প্রতি সমবেদনা জানাতে পারেন,
আত্মহত্যা ও মানসিক রোগ নিয়ে প্রচলিত কুসংস্কার এবং লোকলজ্জা দূর করতে সহায়তা করতে পারেন;
ডিপ্রেশন, মাদকাসক্তিসহ অন্যান্য গুরুতর মানসিক সংকটে থাকা ব্যক্তিদের চিকিৎসা গ্রহণে ভূমিকা রাখতে পারেন।
আত্মহত্যার প্রতিরোধে যেগুলো কার্যকর বলে প্রমাণিত, সেগুলো নিয়ে কাজ করতে হবে এবং পৃথিবীর যে প্রান্তেই মানুষ জীবনসংগ্রামে লিপ্ত, সেখানে তা পৌঁছে দিতে হবে।
আত্মহত্যা প্রতিরোধে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে:
জরুরি সেবা, পরিবার, কমিউনিটি, পুলিশ, প্রশিক্ষক, মানসিক স্বাস্থ্যকর্মী, সামাজিক সেবাসমূহ, ধর্মীয় নেতা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, সরকার, মাদক চিকিৎসকসহ সামাজিক, ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক কৌশলের সম্মিলিত চেষ্টা।
সর্বোপরি যারা আত্মহত্যার চেষ্টা করে, তাদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে হবে। কেননা, যে জটিল মনঃসামাজিক কারণে আত্মহত্যার মনোভাব জাগে, তা বুঝতে তাদের মনোবিশ্লেষণ প্রয়োজন। তাদের চিন্তায় থাকে অভাবনীয় অন্তর্দৃষ্টি ও অনন্য ভাষ্য, (যদিও আমাদের ধারণা এর বিপরীত)। তাদের বোধের ক্রিয়ার কিছু অংশে অস্বাভাবিকতা দেখা যায়, কিন্তু তাদের রয়েছে মনোজগতের গভীর অন্তর্দৃষ্টি।
আসুন, এ দিবসে আমরা শপথ করি, আত্মহত্যা প্রতিরোধে কাজ করব একসঙ্গে।