পানির সাতটি বিস্ময়কর গুণ

পানি পিপাসা মেটায়। শরীরের বেশির ভাগ অংশই পানি। কিন্তু পানির কাজ এতটুকুই নয়। কয়েকটি অবাক হওয়ার মতো কাজও করে পানি।

১. স্লিম রাখে
ওজন কমাতে চাচ্ছেন? বেশি করে পানি খান। পানি অন্যান্য খাদ্যের পরিপাক ও শ্বসন (মেটাবলিজম) ত্বরান্বিত করে। একই সঙ্গে পানি খেলে পেট ভরে যায় বলে খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ কমে যায়।
ওজন কমানোর জন্য ঠাণ্ডা পানি বেশি কাজে আসে। বরফঠাণ্ডা পানি খেলে মেটাবলিজম বাড়ে। কারণ, এ ঠাণ্ডা পানিকে শরীরের তাপমাত্রায় আনতে শরীরকে বাড়তি কাজ করতে হয়। এতে ক্যালরি ক্ষয় হয়, ওজন কমাতে যা বেশি দরকার।

২. শক্তি জোগায়
শরীরে যখন ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা হয়, তখন কোষগুলো পর্যাপ্ত পানি পায় না। ফলে দুর্বল হয়ে পড়ে পুরো শরীরটাই। পানি পেলে যেমন বাগানের গাছগুলো সজীব হয়, তেমনি সজীব হয় শরীরও।
পানি কমে গেলে শরীরে রক্তের পরিমাণও কমে যায়। ফলে কোষে কোষে অক্সিজেন ও খনিজ লবণ (মিনারেল) কম যায়। পানির পরিমাণ ঠিক থাকলে অক্সিজেন ও মিনারেল পেতে কোষের কোনো সমস্যা হয় না।
রক্তের পরিমাণ কমলে তা পাম্প করে পুরো শরীরে পাঠাতে হার্টকে বাড়তি কষ্ট করতে হয়, যা জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তাই পরিমিত পানি পান করলে হার্টের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।

৩. মানসিক চাপ কমায়
শুনলে অবাক হবেন, কিন্তু ব্রেইনের ৮৫ শতাংশই পানি ছাড়া কিছু নয়। যখন ব্রেইনে পানিশূন্যতা হয়_স্বাভাবিক কারণেই ব্রেইনের সব কর্মকাণ্ডে ভীষণ চাপ পড়ে।
যখনই পিপাসা পাবে, বুঝতে হবে এরই মধ্যে ব্রেইনে পানির ঘাটতি পড়েছে। কথায় বলে না, ভয়ে গলা শুকিয়ে যায়। মানে হলো, ভয় পেলে ব্রেইন তার স্বাভাবিক কাজ করতে পারে না। পিপাসার মাধ্যমে শরীরকে জানান দেয়, তার কাজের জন্য পানি দরকার।
যখনই কোনো চাপের মধ্যে থাকবেন, তা পরীক্ষা হোক বা ব্যবসা-চাকরির টেনশনই হোক_পানি পান করতে হবে বেশি করে। দেখবেন চাপ কমে গেছে। ব্রেইন কাজ করতে পারছে স্বাভাবিকভাবে।

৪. শরীর গঠনে কাজ করে
পানি থাকে জয়েন্টেও। মাংসপেশি কাজ করে পানি ঠিকমতো পেলেই। অতএব ক্রীড়াবিদ হোন আর ব্যায়ামবীর, মাংসপেশি সুগঠিত করতে চাইলে পানি পান করতে হবে প্রচুর।

৫. ত্বক সুস্থ রাখে
কসমেটিক কম্পানিগুলো ব্যবসা করে যাচ্ছে এ চিন্তাকে দূর করার কৌশল নিয়েই। বয়সের বলিরেখা কমানো থেকে শুরু করে ত্বকের খসখসে ভাব দূর করা, রং ফর্সা করা থেকে শুরু করে সারা দিন ফ্রেশ রাখা_কত কি!
কিন্তু পানি কাজ করতে পারে এদের যে কারো থেকে বেশি। ত্বকের কোষ সুস্থ থাকলে এমনিতেই আপনাকে দেখাবে ফ্রেশ, সজীব।
পানি ত্বকের পানিশূন্যতা কমায়। ত্বকের কোষকে পরিপূর্ণ রাখে। এতে মুখমণ্ডল থাকে তরুণ।

৬. হজমে সাহায্য করে
শাকসবজি আর আঁশযুক্ত খাবারের সঙ্গে প্রচুর পানি পান করুন, দেখবেন কোষ্ঠকাঠিন্য কমে গেছে।
প্রচুর পানি খেলে হজমের পর খাদ্যের বর্জ্য অংশ সহজেই পানির সঙ্গে মিশে পায়খানা হিসেবে বের হয়ে যায়।
যখন শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়, শরীর অন্ত্রের মাধ্যমে পায়খানার সঙ্গে থাকা পানি শুষে নেয়, ফলে তৈরি হয় কোষ্ঠকাঠিন্য।

৭. কিডনির পাথর প্রতিরোধ করে
পানি পরিমাণমতো পান করলে কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি অনেক কমে যায়। বিশ্বজুড়ে কোল্ডড্রিংকসের ব্যাপক বিস্তারের কারণে কিডনিতে পাথর হওয়ার হার বেড়েছে পানি কম খাবার কারণে।
কিডনির পাথর আসলে একধরনের লবণ ও মিনারেল, যা ক্রিস্টাল আকারে জমে পাথরের মতো হয়। প্রচুর পানি পান করলে এ লবণ ও মিনারেল জমে গিয়ে ক্রিস্টাল তৈরি করতে পারে না।
কিন্তু কতটা পানি পান করবেন

সাধারণত ডাক্তাররা বলেন, দিনে একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের অন্তত আট গ্লাস পানি পান করা উচিত। কিন্তু যাঁরা ব্যায়াম করেন বা শারীরিক পরিশ্রমের কাজ করেন বা বেশি ঘামেন, তাঁদের আরো বেশি পানি পান করতে হবে। আর যাঁরা চা, কপি, জুস ও অন্যান্য তরল বেশি খান, তাঁরা আট গ্রাসের কম পানি পান করলেও চলবে।

ডা. সাঈদা ফাতেমা

Exit mobile version