কোরবানি ঈদ মানেই গরুর মাংসের নানা পদ এবং এর সাথে নানান রকমের মুখরোচক খাবার; কাচ্চি বিরিয়ানি বিরিয়ানি পোলাও গরুর মাংসের কালো ভুনা মেজবানি মাংস কাবাব ইত্যাদি নানান রকমের মুখরোচক খাবার। এইসব মুখরোচক খাবার রান্নায় বিশেষ একটি স্থান দখল করে আছে গরম মশল্লা। সেই আদি যুগ থেকেই স্বাদ ও সুঘ্রানের জন্য এসব মসলার ব্যবহার হয়ে আসছে। গরম মসলার ব্যবহারে খাবারের স্বাদ ও সুগন্ধি শুধু বাড়ে না বাড়ে খাবারের পুষ্টিগুণ। গরম মসলা এমন একটি খাদ্য উপাদান যা ছাড়া আমরা মজাদার ও মুখরোচক এই জাতীয় খাবার রান্না করার কথা চিন্তাও করতে পারিনা। অল্প একটু গরম মসলার ছোঁয়া রান্নায় স্বাদ ও সুঘ্রান বাড়িয়ে দেয় বহুগুণে এবং সেই সাথে বেড়ে যায় খাবারের পুষ্টিগুণও।
গরম মসলা একেকটি মশলা নয় বরং পুষ্টিগুণে ভরপুর অনেকগুলো মসলার সমন্বয় যেমন ছোট এলাচ, বড় এলাচ, দারচিনি, লবঙ্গ, গোলমরিচ, মৌরি, শাহি জিরা, তেজপাতা ইত্যাদি মিলে গরম মসলা তৈরি করা হয়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে ছোট এই মসল্লার বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান রয়েছে যেমন কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ফাইবার, ইথার, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম আয়রন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট anti-inflammatory ইত্যাদি পুষ্টি উপাদানগুলো রয়েছে এছাড়াও তারপিনল, তাপি নিল, লিমোনিন, স্যাবিনিন ইত্যাদি জাতীয় তেল সুগন্ধ ছড়ানোর পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যকর ভূমিকা পালন করে দেহকে সুস্থ ও কর্মক্ষম রাখে।
গরম মসলার পুষ্টিকর দিকগুলো হলোঃ
১. গরম মসলা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।তাই এ করোনাকালীন সময়ে এসব পুষ্টি উপাদান সমন্বয়ে খাদ্য গ্রহণ করলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং আমরা সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে পারব।
২. গরম মসলা অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান রয়েছে যা আমাদের শরীরে ব্যথা কমায় এবং শরীর সুস্থ রাখে।
৩.গরম মসলা রক্তের শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে তাই যাদের ডায়াবেটিস আছে তারা গরম মসলা দিয়ে রং চা খেতে পারেন প্রতিদিন অন্তত এক কাপ করে।
৪. এতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম যা আমাদের হাড়ের ক্ষয় রোধ করে হাড়কে মজবুত রাখে।
৫. গরম মসলা আমাদের রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। দৈনিক খাদ্য তালিকা পর্যাপ্ত পরিমাণে গরম মসলা থাকলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যেতে পারে।
৬. গরম মসলা তে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন যা রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। তাই যারা এনিমিয়া বা রক্ত স্বল্পতায় ভুগছেন তারা গরম মসলা যুক্ত খাবার খেলে অনেকটা উপকৃত হবেন।
৭. গরম মসলাতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফসফরাস ও ওমেগা ফ্যাটি এসিড, যা দাঁতের ক্ষয় রোধ করে এবং দাত ও মাড়ির ব্যথা কমায়। তাই দাঁত ব্যথায় চিকিৎসায় লবঙ্গ সেই প্রাচীনকাল থেকেই ব্যবহার হয়ে আসছে।
৮. এন্টিঅক্সিডেন্টের উপাদানের জন্য গরম মসলা বিশেষ কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
৯. গরম মসলা আমাদের শরীরের কোষে উৎপাদিত টক্সিন পদার্থ নিঃসরণ কমিয়ে দেয়। এতে করে শরীর টক্সিন মুক্ত থাকতে পারে।
১০.গরম মসলা হজমে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। ডায়েটারি ফাইবারের উপস্থিতির কারণে কনস্টিপেশন কমায় এবং পাচনক্রিয়া তরান্বিত রাখে। এতে করে শরীর সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন-যাপনে অভ্যস্ত হয়।
তাই আসুন খাবারকে জেনে বুঝে এবং সুস্বাদু ও পুষ্টিকর উপায় গ্রহণ করি এবং সুস্থ ও কর্মক্ষম জীবন যাপন করি।
সামসুন নাহার স্মৃতি
ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিষ্ট এন্ড ডায়েটিশিয়ান
উত্তরা ক্রিসেন্ট হসপিটাল, উত্তরা, ঢাকা