টিকা নেয়ার সময় ও আগে-পরে কী করবেন

করোনার টিকা দেওয়া নিয়ে অযথা দুশ্চিন্তার কিছু নেই। প্রথম টিকা দেওয়ার পর দুয়েকটি বিচ্ছিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়া বড় কিছু তো হয়নি। আর যেকোনো প্রতিষেধকের কোনো না কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া শরীরে হবেই হবে। কোভিডের টিকাও ব্যতিক্রম নয়। এই টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো অত্যন্ত স্বাভাবিক এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে খুব জরুরি। টিকা নিলে একদিকে যেমন নিজে সুস্থ থাকা যায় তেমনি নিরাপদ রাখা যায় প্রিয়জনকেও।

করোনার এই মহামারি পরিস্থিতিতে আপনার নিজের, পরিবার, সমাজ তথা বিশ্বের জন্য টিকা নেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এটি অনেকের জন্য এক ধরনের মানসিক চাপ হতে পারে, বিশেষ করে যারা দীর্ঘদিন ধরে ঘরে আছেন অথবা করোনার টিকা নিয়ে দুশ্চিন্তা করছেন। কিন্তু কখনো কি ভেবেছেন, টিকা নেয়ার পর শুধুমাত্র করোনা থেকেই নয়, প্রিয়জনের কাছেও আপনি সুরক্ষিত।

দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে ইউনিসেফ করোনার টিকা নেওয়ার আগে, টিকা নেওয়াার সময় ও টিকা নেওয়ার পর করণীয় সম্পর্কিত কিছু পরামর্শ দিয়েছে।

টিকা নেয়ার আগে যা করবেন
করোনার বিভিন্ন ধরনের টিকা ও সেগুলো কীভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে জানুন। দক্ষিণ এশিয়ায় কীভাবে টিকা দেওয়া হচ্ছে সে বিষয়েও জানা থাকা ভালো।
আপনি যে টিকা নিচ্ছেন তা বিশ্বস্ত কোন উৎস যেমন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বা ইউনিসেফ থেকে এসেছে কিনা তা নিশ্চিত হোন। কোন সন্দেহ থাকলে নিকটস্ত স্বাস্থ্য সেবা অথবা স্বাস্থ্য কর্মীদের সঙ্গে কথা বলুন।
টিকা নিতে যাওয়ার আগে অবশ্যই কিছু বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে হবে। যেমন, নাক, মুখ ভালোভাবে ঢেকে রাখে এমন মাস্ক ব্যবহার করুন। সঙ্গে স্যানিটাইজার নিন। যে মোবাইল নম্বরে টিকা গ্রহণের তথ্য সম্মলিত বার্তা এসেছে এবং আপনার পরিচয়পত্র অবশ্যই সাথে নিতে হবে।
ঢিলেঢালা কাপড় পড়ুন যাতে করে স্বাস্থ্যকর্মীরা খুব সহজেই আপনার বাহুতে টিকা দিতে পারেন।
আপনার কোন ধরনের শারীরিক জটিলতা বা সে সময়ে কোন ওষুধ সেবন করে থাকলে অবশ্যই স্বাস্থ্যকর্মীকে তা জানান।
টিকা নেয়ার দিন বা তার আগে যদি করোনার কোন লক্ষণ আপনার শরীরে প্রকাশ পায় তাহলে টিকা নিতে যাবেন না। কারণ করোনা আক্রান্ত হলে আপনি টিকাকেন্দ্রে এই ভাইরাস ছড়াতে পারেন। সেক্ষেত্রে টিকাকেন্দ্রে ফোন দিয়ে আপনার করোনার লক্ষণের বিষয়ে জানাতে পারেন। করোনার লক্ষণ শেষ হওয়ার ১৪ দিন পর আপনি টিকা নিতে পারেন।

টিকাকেন্দ্রে যা করবেন
সবসময় মাস্ক পরে থাকুন। এসময় অবশ্যই মাস্কে বা মুখে হাত দিবেন না।
অন্যদের কাছ থেকে অন্তত ১ মিটার দুরত্ব বজায় রাখুন।
টিকাকেন্দ্রের দরজা, টেবিল, চেয়ার বা যেকোন কিছু ধরার পর অবশ্যই হাত ভালোভাবে স্যানিটাইজ করুন।

যখন টিকা নেবেন

করোনার টিকা হাতের ওপরের অংশে মাংসপেশীতে দেওয়া হয়। এটি দিতে মাত্র কয়েক সেকেন্ড সময় লাগে এবং হাল্কা ব্যাথা হতে পারে। টিকা দেওয়ার সময়টাতে আপনি অবশ্যই মুখে মাস্ক রাখবেন এবং স্বাস্থ্যকর্মী থেকে আপনার মাথা অন্যদিকে ঘুরিয়ে রাখবেন। এতে আপনারা দুজনই নিরাপদ থাকবেন। এসময় যদি আপনি ভয় পান বা দুশ্চিন্তায় থাকেন, তাহলে….

মনে রাখুন এটি খুবই ছোট একটি সুঁইয়ের খোচা যা আপনার জীবন বাঁচাতে পারে।
বড় করে নিঃশ্বাস নিন।
সিরিঞ্জের দিকে তাকাবেন না।

টিকা নেওয়ার পর

করোনার টিকা নেওয়ার পর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুবই স্বাভাবিক। এ থেকে বোঝা যায় যে টিকা আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করা শুরু করেছে। টিকা নেওয়ার পর সাধারণ যেসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে সেগুলো হলো,

যে হাতে টিকা নিয়েছেন সেখানে ব্যাথা, ফুলে যাওয়া এবং লালচে ভাব।
সর্দি ও হাল্কা জ্বর
ক্লান্তি
মাথাব্যাথা
জয়েন্ট অথবা পেশীতে ব্যাথা
এসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কয়েকদিনের মধ্যেই ভালো হয়ে যায়।

পর্যবেক্ষণের জন্য টিকাকেন্দ্রে থাকুন
টিকা নেয়ার পর ১৫-৩০ মিনিট টিকাকেন্দ্রেই অবস্থান করুন। টিকার দেয়ার পর বড় ধরনের কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় কি না সেটা পর্যবেক্ষণের জন্য এটি অবশ্যই করতে হবে। করোনার টিকায় বড় ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুবই কম দেখা যায়, যার মধ্যে আছে চুলকানি, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, বমি হওয়া, বড় ধরনের অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া, শ্বাসকষ্ট বা নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া ইত্যাদি।

এ ধরনের সমস্যা হলে অবশ্যই তাৎক্ষণিকভাবে স্বাস্থ্যকর্মীকে তা জানান। এ ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুব কম দেখা যায় এবং টিকা নেওয়ার প্রথম ৩০ মিনিটেই এসব লক্ষণ প্রকাশ পায়। তাই এই সময়টাতে টিকাকেন্দ্রে থাকলে যেকোন সমস্যায় আপনি প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যসেবা পেতে পারবেন।

টিকার দ্বিতীয় ডোজের তারিখ জেনে নিন
প্রথম টিকা নেওয়ার ৪ থেকে ১২ সপ্তাহের মধ্যে অবশ্যই আপনাকে করোনার দ্বিতীয় ডোজ নিতে হবে। তাই প্রথম ডোজ গ্রহণের পর টিকাকেন্দ্র ত্যাগ করার পূর্বে অবশ্যই দ্বিতীয় ডোজের তারিখ জেনে নিন।

করোনার টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি প্রথম ডোজে আপনার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলেও দ্বিতীয় ডোজ নিতেই হবে যদি না স্বাস্থ্যকর্মী বা আপনার চিকিৎসক না নেওয়ার পরামর্শ দেন।

বাড়িতে আসার পর

টিকা নেয়ার পর যদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় তাহলে কয়েকদিন দৈনন্দিক কাজে এর প্রভাব পড়তে পারে। তাই পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন। এসময় বেশি করে তরল খাবার খান। কোন ধরনের ব্যাথা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্যারাসিটামল খেতে পারেন।

অনেক বেশি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে এবং তা যদি এক সপ্তাহের বেশি সময় স্থায়ী হয়, তাহলে যে স্বাস্থ্যকর্মী আপনাকে টিকা দিয়েছে তাকে বিষয়টি জানান।

টিকা দেওয়ার স্থানে ব্যাথা হলে একটি পরিস্কার ঠান্ডা বা ভেজা কাপড় দিয়ে ব্যাথা কমাতে পারেন।

দ্বিতীয় ডোজের টিকার তারিখ রিমাইন্ডার দিয়ে রাখুন
করোনার দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার দুই সপ্তাহ পর থেকে বলা যায় যে আপনি ভাইরাস থেকে নিরাপদ। তাই কোনভাবেই যাতে দ্বিতীয় ডোজের তারিখ ভুলে না যান সেজন্য ক্যালেন্ডারে সে তারিখটি চিহ্নিত করে রাখুন। সেইসাথে দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার কাগজটি নিরাপদে রাখুন।

করোনার প্রতিরোধ ব্যবস্থা মেনে চলুন
টিকা নেওয়ার পরও করোনার প্রতিরোধ ব্যবস্থাগুলো মেনে চলুন। করোনার টিকা মানুষের মধ্যে এই ভাইরাসের বিস্তাররোধে কার্যকর বলে এরইমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে, কিন্তু আমরা এখনো জানি না যে এটি অন্যকে সংক্রমিত হওয়া আটকাচ্ছে কি না। তাই নিজেকে ও অন্যকে নিরাপদ রাখতে যা করবেন…

২০ সেকেন্ড ধরে সাবান ও পানি বা স্যানিটাইজার দিয়ে ভালোভাবে হাত পরিস্কার করুন।
অন্যের কাছ থেকে অন্তত ১ মিটার দুরত্বে অবস্থান করুন।
ভালোভাবে বাতাস চলাচল করে বা বাইরে খোলা পরিবেশে মানুষের সঙ্গে দেখা করুন।
জনাসমাগম বা যেখানে আপনি অন্যদের কাছ থেকে দুরত্ব মানতে পারছেন না তখন অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করুন।
করোনা ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার দুই সপ্তাহ পর্যন্ত এ বিষয়গুলো মেনে চলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এসময়টাতে আপনার শরীর এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে।

সূত্র: ইউনিসেফ

Exit mobile version