রোগ ও সমস্যা

যেভাবে বুঝবেন ব্লাড ক্যান্সার হয়েছে

Published

on

ব্লাড ক্যান্সার লোহিত রক্তকণিকা থেকে হয়। এই রোগ যে কোনো বয়সে হতে পারে। এটা সাধারণত শিশুদের বেশি হয়ে থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে কোনো বয়সী মানুষের শরীরে রক্তে সমস্যা দেখা দিলে অথবা রক্তে সমস্যা আছে বলে মনে হলে, সময়ক্ষেপণ না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

শনাক্তের উপায়

রক্তে সমস্যা আছে বলে সন্দেহ হলে চিকিৎসকরা সাধারণ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে বলেন। যেমন-সিবিসি (সিবিসি একটি সামগ্রিক রক্ত পরীক্ষা)। এ পরীক্ষার মাধ্যমে একটি সাধারণ ধারণা পাওয়া যায়। রোগীর শরীরে কোনো সংক্রমণের রয়েছে কিনা, রক্তকণিকা স্বাভাবিক আছে কি না, হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কেমন এসব বুঝতে এই পরীক্ষাটি গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া আরও যেসব পরীক্ষা করতে বলেন, তার মধ্যে রয়েছে বোন ম্যারো পরীক্ষা। এ পরীক্ষার মাধ্যমে ব্লাড ক্যানসার শনাক্ত করা যায়। গ্ল্যান্ডের বায়োপসি পরীক্ষা (রোগ নির্ণয়ের জন্য শরীরের যেকোনো অংশ থেকে টিস্যু অপসারণ করে নেওয়া) ও বোন ম্যারো বায়োপসি পরীক্ষা করা হয়। রোগীটি নির্ণয়ে দেশে ও বিদেশে আরও কিছু পরীক্ষা করা হয়। এসব পরীক্ষার মাধ্যমে ব্লাড ক্যান্সারের ধরন শনাক্ত করা হয়। কোন ক্যান্সারের জন্য কোন ধরনের চিকিৎসা বা ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে এটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে বলে দেওয়া হয়।

চিকিৎসা

দেশের বিভাগীয় শহরের বেশিরভাগ মেডিকেল কলেজে হেমাটোলজি (রক্ত বিজ্ঞান) বিভাগ রয়েছে। এসব মেডিকেলে রোগীরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে পারেন। এ ছাড়া ক্যান্সার চিকিৎসায় দেশে বিশেষায়িত সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতাল আছে। বিশেষ করে রাজধানীর মহাখালীতে জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এ রোগের উন্নত চিকিৎসা রয়েছে। এ ছড়া বেশ কিছু প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানেও ক্যান্সারের চিকিৎসা করা হয়।

Advertisement

ফলোআপ চিকিৎসা

ব্লাড ক্যান্সারের রোগী প্রথম ধাপ চিকিৎসা সম্পন্ন করার পরে ক্যান্সারের ধরন বুঝে ফলোআপ চিকিৎসা নিতে হবে। এক এক রকমের ক্যান্সারের চিকিৎসা পদ্ধতি এক এক রকম। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, দুই তিন-মাস বা তিন-চার মাস চিকিৎসার পর হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এর কিছু দিন পর পর ফলোআপে ডে কেয়ারে এসে কেমো থেরাপী অথবা বর্হিবিভাগে এসে ওষুধের নিয়ম নতুনভাবে জেনে যাওয়া এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করে চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্রের আপডেট করে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন।

এ ধরেনর ফলোআপে প্রায় এক বছর বা দু’বছর পর্যন্ত থাকতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে এটা তিন বছরও হতে পারে। তবে পাঁচ বছর যদি কোনো রোগী ফলোআপে থাকে। সেক্ষেত্রে দুই থেকে তিন বছর ওষুধ ছাড়াই ফলোআপ করা হয়। এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করে দেখা হয়, যে রোগটা আবার ফিরে আসছে কিনা।

খরচ

প্রতিষ্ঠান অনুযায়ী এ রোগের চিকিৎসা ব্যয়ের পার্থক্য রয়েছে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে কিছুটা কম খরচে চিকিৎসা করা সম্ভব এবং সরকারি হাসপাতাল থেকে বিনামূল্যে কিছু ওষুধও দেওয়া হয়। তবে বেশ কিছু ওষুধ রোগীদের অর্থেই কিনতে হয়। আগের তুলনায় চিকিৎসা খরচ এখন কমে এসেছে। কারণ, দেশীয় ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিগুলো ওষুধ নিয়ে এসেছে। সঙ্গে বায়োলজিক্যাল এজেন্টগুলো দেশে পাওয়া যাচ্ছে। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম হওয়ার কারণে সহায়ক চিকিৎসার খরচ অনেক কমে গেছে।

Advertisement

দৈনিক দুইশ’থেকে তিনশ’টাকার ওষুধ ক্রয়ে ব্যয় করতে হয়। রোগীরা চাইলে এখন ঘরে বসে ওষুধ কিনতে পারছেন। ওষুধের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট সময় পর রোগী ভালো হয়ে যাচ্ছেন। প্রয়োজনীয় ওষুধ ও সচেতনতার মাধ্যমে ব্লাড ক্যান্সার জয় করা সম্ভব।

চিকিৎসার সীমাবদ্ধতা

দেশে ব্লাড ক্যান্সারের চিকিৎসা এখনও গ্রাম, জেলা ও উপজেলায় সম্প্রসারিত হয়নি। প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, জনবল ও প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়নি। প্রয়োজনীয় ওষুধের দাম অনেক বেশি। অর্থের অভাবে রোগীরা দীর্ঘ মেয়াদে এই রোগের চিকিৎসার ব্যয় বহন করতে পারেন না। ফলে বন্ধ হয়ে যায় চিকিৎসা।

এ রোগে আক্রান্ত রোগীদের বেশিভাগ ইনফেকশন (সংক্রমণ) হয় এবং ব্লাডের কম্পোনেন্টের (Bladder Component) প্রয়োজন হয়। অনেক ক্ষেত্রেই সহায়ক চিকিৎসার দরকার হয়। চিকিৎসা যাতে ব্যহত না হয়, এজন্য সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে এবং ব্লাড ক্যান্সার রেজিস্ট্রি পদ্ধতি বাংলাদেশে চালু করতে হবে। স্বাস্থ্য বিমা, দাতব্য সংস্থা ও সরকারকে গরীব রোগীদের সাহায্যে এগিয়ে আসতে হবে। এ ছাড়া ক্যান্সার সেন্টারগুলোতে নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ বিনামূল্যে অথবা স্বল্প মূল্যে রোগীদের দেওয়ার ব্যবস্থা করা হলে রোগীরা উপকৃত হতে পারেন।

Advertisement

Trending

Exit mobile version