Home নির্বাচিতবুকের হাড় ও পা না কেটে হার্টের সফল বাইপাস সার্জারী

বুকের হাড় ও পা না কেটে হার্টের সফল বাইপাস সার্জারী

by স্বাস্থ্য ডটটিভি কনটেন্ট কাউন্সিলর

জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে পা ও বুকের হাড় না কেটেই এক রোগীর সফল বাইপাস সার্জারি সম্পন্ন করা হয়েছে। হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. আশ্রাফুল হক সিয়ামের নেতৃত্বে একদল তরুণ চিকিৎসক গত ১২ সেপ্টেম্বর এ সার্জারি করেন। দেশে এ ধরনের সার্জারি এটিই প্রথম।

সার্জারির পর ৫০ বছর বয়সী আল-আমিন নামের ওই রোগী এখন সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তারা বলেন, আল-আমিন স্বাভাবিকভাবে খাবার গ্রহণ করছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী শনিবার তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হবে।

এর আগে এই চিকিৎসক দলের তত্ত্বাবধানে গত ২৫ আগস্ট বুকের হাড় না কেটে ওপেন হার্ট সার্জারি করা হয়। দেশের সরকারি ব্যবস্থাপনায় সেটিও ছিল প্রথমবারের মতো ওপেন হার্ট সার্জারি। এরই ধারাবাহিকতায় এবার বুকের হাড় ও পা না কেটে বাইপাস সার্জারি করা হলো।

ওই চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাধারণত বাইপাস সার্জারির জন্য রোগীর পা কেটে শিরা নেওয়া হয়। পাশাপাশি বুক কেটে হার্টে গ্রাফট দেওয়া হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে বুকের হাড় ও পা না কেটেই সার্জারি করা হয়েছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এটি MICS-CABG ও EVH পদ্ধতি নামে পরিচিত।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. আশ্রাফুল হক সিয়াম বলেন, MICS-CABG ও EVH দু’টি পৃথক পদ্ধতি। সাধারণত বাইপাস সার্জারির ক্ষেত্রে পায়ের গোড়ালি থেকে থাই পর্যন্ত পা কেটে শিরা নিয়ে বাইপাস করা হয়। কিন্তু EVH পদ্ধতির মাধ্যমে পা না কেটে ছোট একটা ছিদ্র করে এন্ডোসকপির মাধ্যমে এই শিরা তোলা হয়। নতুন এ পদ্ধতি প্রয়োগের কারণে পায়ের কাটাছেঁড়া কম হয়। একই সঙ্গে ব্যথা কম থাকে, ক্ষত স্থানে কোনো দাগ থাকে না, ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে এবং রোগী অল্প সময়ের মধ্যেই হাঁটচলা করতে পারেন।

ডা. সিয়াম আরও বলেন, MICS-CABG পদ্ধতির মাধ্যমে বুকের হাড় না কেটে বাইপাস সার্জারি করা হলে রোগীর হাড় জোড়া লাগার কোনো ব্যাপার থাকে না। পাশাপাশি রোগীর রক্তক্ষরণ ও ব্যথা কম হয়, ইনফেকশন কম থাকে। আইসিইউ ও হাসপাতালে রোগীর দীর্ঘদিন অবস্থানও করতে হয় না। রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে পারে। এতে করে চিকিৎসা ব্যয় কম হয়।

ডা. সিয়াম জানান, এর আগেও MICS-CABG পদ্ধতিতে তিনি বুকের হাড় না কেটে বাইপাস সার্জারি করেছেন। কিন্তু পা কাটতে হয়েছিল। এবার বুক ও পা দুটির কোনোটিই না কেটে কেবলমাত্র ছোট ছিদ্র করে বাইপাস সম্পন্ন করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী অন্যান্য খাতের মতো স্বাস্থ্যখাতকেও সমান গুরুত্ব দেন। তার দেওয়ার বিশেষ বরাদ্দের মাধ্যমে হাসপাতালে এ ধরনের সার্জারি করার যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে। এতে করে দরিদ্র মানুষের সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে। এজন্য একজন চিকিৎসক হিসেবে তাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।

এ বিষয়ে হাসপাতালের কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. রামপদ সরকার বলেন, সরকারি ব্যবস্থাপনায় দেশে প্রথমবারের মতো এ ধরনের সার্জারি সম্পন্ন হলো। এর ফলে কার্ডিয়াক সার্জারি চিকিৎসায় দেশ আরেক ধাপ এগিয়ে গেল। এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত সুসংবাদ। যেসব রোগীর কার্ডিয়াক সার্জারি প্রয়োজন হবে তারা উপকৃত হবেন। একই সঙ্গে রোগীদের বিদেশ যাওয়ার প্রবনতাও কমে যাবে বলে মনে করেন এই চিকিৎসক।

You may also like