সংক্রমণের শুরু থেকে দেশে করোনায় পুরুষের চেয়ে নারীদের মৃত্যু কম। এখনো সে ধারা অব্যাহত আছে। তবে ক্রমেই নারীর মৃত্যু তুলনামূলক বেড়ে চলেছে। গতকাল সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দেশে মোট ১৭৪ জনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে, এর মধ্যে ৮৪ জনই নারী।
গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনার সংক্রমণ শনাক্তের খবর জানানো হয়। গত মার্চে এসে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ দেখা দেয়। ওই সময় থেকে মূলত নারীদের মধ্যে সংক্রমণ ও মৃত্যু আগের তুলনায় বাড়তে শুরু করে। আর গত জুন থেকে করোনার ডেলটা ধরন (ভারতে উৎপত্তি) ছড়িয়ে পড়লে সংক্রমণ ও মৃত্যু ভয়াবহ আকার ধারণ করে। এ সময় এসে নারী মৃত্যু আরও বেড়ে যায়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত ১ মার্চ পর্যন্ত দেশে করোনায় মোট মৃত্যুর ২৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ ছিলেন নারী। আর গতকালের হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এখন মারা যাওয়া ব্যক্তিদের ৩৪ দশমিক ১৪ শতাংশ নারী।
চলতি মাসে গতকাল পর্যন্ত মোট ৩ হাজার ৪০০ জনের মৃত্যু হয় করোনায় সংক্রমিত হয়ে। এর মধ্যে নারী ছিলেন ১ হাজার ৫৪২ জন। অর্থাৎ চলতি মাসের ১৬ দিনে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের ৪৫ দশমিক ৩৫ শতাংশই ছিলেন নারী।
দেশে করোনার ডেলটা ধরনের সংক্রমণ শুরুর পর থেকে মৃত্যুর ক্ষেত্রে কিছু বৈশিষ্ট্যে পরিবর্তন দেখা দেয়। শুরু থেকে ষাটোর্ধ্ব মানুষের মৃত্যু বেশি ছিল। এখনো বেশি মৃত্যু হচ্ছে ষাটোর্ধ্বদের। তবে জুন থেকে অপেক্ষাকৃত কম বয়সীদের মৃত্যু বাড়তে দেখা যাচ্ছে। একইভাবে নারীর মৃত্যুও এ সময়ে এসে আগের চেয়ে বেড়ে যায়। তবে এই পরিবর্তনের সঙ্গে করোনার ডেলটা ধরনের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, তা নিয়ে সরকারি পর্যায়ে কোনো গবেষণা নেই। যদিও জনস্বাস্থ্যবিদদের অনেকে মনে করেন, ডেলটা ধরনের কারণে এসব পরিবর্তন এসেছে।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, নারীর মৃত্যু বেড়ে যাওয়ার সুনির্দিষ্ট কারণ আছে কি না, তা বলার জন্য গবেষণার প্রয়োজন। তবে ধারণা করা যায়, ডেলটা ধরন ছড়িয়ে পড়ায় নারীর মৃত্যু বেড়েছে। কারণ, করোনাভাইরাসের এই ধরন ব্যাপকভাবে ছড়িয়েছে। আগে দেখা যেত পরিবারের একজন আক্রান্ত হলেও অন্যরা হয়তো আক্রান্ত হতেন না। কিন্তু এবার বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পরিবারের সবাইকে একসঙ্গে আক্রান্ত হতে দেখা যাচ্ছে। নারীরা আগের চেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। রোগী বাড়লে আনুপাতিক হারে মৃত্যুও বাড়ে।
রোগী শনাক্তের হার সামান্য বেড়েছে
গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রোববার সকাল ৮টা থেকে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে মোট ৩৩ হাজার ১৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ৬ হাজার ৯৫৯ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়। পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ছিল ২১ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ।
আগের দিনের তুলনায় গতকাল রোগী শনাক্তের হার সামান্য বেড়েছে। আগের দিন রোগী শনাক্তের হার ছিল ২০ দশমিক ২৫ শতাংশ। দুই সপ্তাহ পর পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হারের টানা নিম্নমুখী প্রবণতায় গতকাল ছেদ পড়ল। চলতি মাসের শুরু থেকে দেশে করোনার সংক্রমণে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা দেয়। ১ থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনই ক্রমে শনাক্তের হার কমছিল।
গতকাল পর্যন্ত দেশে মোট ১৪ লাখ ২৫ হাজার ৮৬১ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১৩ লাখ ১ হাজার ৯৬৬ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ২৪ হাজার ৩৪৯ জনের।