জন্মনিরোধক পিল সেবনে কি নারীদের ওজন বাড়ে?

অপরিকল্পিত গর্ভধারণে এড়াতে অনেক নারীই জন্মনিরোধক পিল সেবন করে থাকেন। তবে এই পদ্ধতি নিয়ে অনেকের মনেই কিছু ভ্রান্ত আশঙ্কা রয়ে গেছে। অনেকে মনে করেন গর্ভনিরোধক বড়ি খেলে মোটা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে, গর্ভপাতের মতো সমস্যাও দেখা দেয়। কিন্তু সব ধারণাই কি আদৌ সত্য? সেগুলো একটু ভালোমতো জেনে নেয়া প্রয়োজন।

নারীদের গর্ভনিরোধক ট্যাবলেট বা কনট্রাসেপ্টিভ পিল সম্পর্কে সবচেয়ে প্রচলিত ধারণা হল, এই ধরনের ট্যাবলেট খেলে মোটা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু সত্যিই কি সেরকম কিছু হয়? আসুন, জেনে নিই ডাক্তাররা কী বলছেন?

এই বিষয়ক পূর্ববর্তী কিছু গবেষণা অনুযায়ী, জন্মনিরোধক পিল সেবনের ফলে নারীদের শারীরিক ওজন বাড়লেও সেটা গতানুগতিক স্বাভাবিক ওজনবৃদ্ধি নয়। বরং জন্মনিরোধক পিল খাওয়ার পর শরীরে তরল ধরে রাখার কারণেই এই ওজন বেড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে।

ভারতের ব্যাঙ্গালোরের ইন্দিরানগরের মাদারহুড হসপিটালসের প্রসূতি বিশেষজ্ঞ, গাইনোকোলজিস্ট এবং ল্যাপারোস্কোপিক সার্জন ড. আশা হিরেমাথ বলেন, “জন্মনিরোধক পিল সেবনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে নারীদের ওজন বেড়ে যাওয়া একটি স্বাভাবিক ঘটনা। হরমোনজনিত গর্ভনিরোধক শুরু করার পর যে কারোর শরীরে বাড়তি ওজন অনুভূত হতে পারে। তবে সেটি চর্বি জমে যাওয়ার জন্য না, বরং শরীরে একটি অস্থায়ী তরল ধারণের কারণে। গর্ভনিরোধক পিল একবার আপনার শরীরের সঙ্গে সামঞ্জস্য হয়ে গেলে ওজন আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।”

হরমোনাল গর্ভনিরোধক কী?
ড. আশা হিরেমাথ বলেন, জন্মনিরোধক পিলগুলো প্রোজেস্টিন সমৃদ্ধ, যা প্রোজেস্টেরনের একটি কৃত্রিম রূপ। এক্ষেত্রে বলে রাখা ভালো যে প্রোজেস্টেরন হলো নারীদেহের হরমোনের একটি অপরিহার্য রূপ।”

তিনি বলেন, “জন্মনিরোধক পিলে থাকা প্রোজেস্টিন ক্ষুধা বাড়াতে সহায়ক; যার ফলে নারীরা বাড়তি খাবার খেয়ে থাকেন। শরীরে তরল ধরে রাখার কারণে ওজন বেড়ে যাওয়ার যে ঘটনা ঘটে, সেটিতে ভূমিকা রাখে জন্মনিরোধক পিলে থাকা উচ্চ মাত্রার ইস্ট্রোজেন।”

ড. আশা হিরেমাথ আরও বলেন, “অন্যদিকে, কয়েকটি জন্মনিরোধক পিলে খুব অল্প পরিমাণে ইস্ট্রোজেন থাকে। কম ইস্ট্রোজেনের মাত্রা অনিয়ন্ত্রিত ওজনবৃদ্ধির একটি সুনির্দিষ্ট কারণ।”

খাবার এবং কার্যকলাপের মাধ্যমে কি ওজন বৃদ্ধি প্রতিরোধ সম্ভব?
ড. আশা হিরেমাথ বলেন, “জন্মনিরোধক পিল সেবনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে নারীদের ওজন বেড়ে যাওয়া একটি স্বাভাবিক ঘটনা হলেও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে সেবন শুরুর পর প্রতিদিন কমপক্ষে আধা ঘণ্টার জন্য ব্যায়াম করা যেতে পারে। সুযোগ পেলেই দৈনিক হাঁটার পরিমাণ বাড়ানোর অভ্যাস করুন।”

এ চিকিৎসক আরও বলেন, “কম চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত খাবার আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করবে। তাই জন্মনিরোধক পিল সেবনের সময়ে খাদ্য তালিকায় পুষ্টিকর ফল, সবজি, ডিম, বাদামের মতো পুষ্টিকর এবং প্রোটিন জাতীয় খাবার বেশি রাখুন।”

কখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত?
ড. আশা হিরেমাথ বলেন, “সাধারণত জন্মনিরোধক পিল সেবনের ফলে শারীরিক ওজন বাড়ে না। তাছাড়া, শরীরভেদে বিভিন্ন নারীর মধ্যে জন্মনিরোধক পিল সেবনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া একেক রকম হয়ে থাকে। কেউ জন্মনিরোধক পিল সেবন শুরু করলে ধীরে ধীরে সেটি শরীরের সঙ্গে সেটি মানিয়ে নেবে।”

এই চিকিৎসক আরও বলেন, “যদি কেউ অনিয়ন্ত্রিত ওজন বৃদ্ধির সম্মুখীন হন এবং তা কয়েক মাস টানা চলতে থাকে, তাহলে কালবিলম্ব না করে গাইনোকোলজিস্টের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। যদি জন্মনিরোধক পিল কারও শরীরের জন্য উপযুক্ত না হয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেটি পরিবর্তন করা উচিত।”

এছাড়া, জন্মনিরোধক পিল সেবনের ফলে শারীরিক সমস্যা দেখা দিলে সেটি উপেক্ষা না করার এবং নিজের মনমতো ওষুধ না খাওয়ার আহ্বানও জানান তিনি।

Exit mobile version