জেনে রাখুন, সুস্থ থাকুন

গর্ভাবস্থায় যে রক্তপাত ঝুঁকির কারণ হতে পারে

Published

on

গর্ভাবস্থায় রক্তক্ষরণ যে কোনো গর্ভবতী মায়ের জন্য বেশ ভয়ের ব্যাপার। নানা কারণে গর্ভাবস্থায় মাসিকের রাস্তায় রক্তক্ষরণ হতে পারে। গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন সময় রক্তপাত হতে পারে। পুরো গর্ভাবস্থাকে তিন ভাগে ভাগ করলে প্রথম তিন মাস, মাঝের তিন মাস ও শেষের তিন মাসের যে কোনো সময় রক্তক্ষরণ হতে পারে। পুরো গর্ভকালে কোনো গর্ভবতী নারীর এক ফোঁটা রক্তপাত হলেও তা গর্ভকালীন রক্তপাতজনিত সমস্যা। এটি একটি বিশেষ স্বাস্থ্য সমস্যা, যা হতে পারে গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাস, মাঝের তিন মাস বা একেবারে শেষ সময়ে বা সন্তান ডেলিভারির সময়েও। তবে সময়মতো সঠিক চিকিৎসা নিলে জটিলতা এড়ানো যায়।

গর্ভাবস্থায় রক্তক্ষরণের উপসর্গ
❏ হঠাৎ রক্তপাত তা সামান্যও হতে পারে বা বেশিও হতে পারে।
❏ ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
❏ ব্যথা ও রক্তপাত একসঙ্গেও হতে পারে।

পরীক্ষানীরিক্ষা ও চিকিৎসা পদ্ধতি
গর্ভাবস্থায় সামান্য রক্তপাত হওয়াকে কখনো অবহেলা করা যাবে না। এর রয়েছে যথাযথ প্রতিকার ও চিকিৎসা। তবে মনে রাখুন, গর্ভকালীন রক্তপাত মানেই কিন্তু অ্যাবরশন বা মিসক্যারেজ নয়।

চিকিৎসার প্রথম ধাপে রোগীর ইতিহাস জানা হয় তার প্রথম চেকআপটা কবে হয়েছিল? মাসিকের তারিখ সঠিক ছিল কি না? আগের কোনো আল্ট্রাসনোগ্রাম আছে কি না, যাতে গর্ভস্থ সন্তানের সঠিক বয়স অনুমান করা যায়।

রক্তপাত ঘটার পর চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে প্রথমে আল্ট্রাসনোগ্রাম করা হয়। এর মাধ্যমে গর্ভস্থ সন্তান জীবিত নাকি মৃত সেটা জানা যাবে।

Advertisement

জীবিত সন্তান গর্ভে থাকার পরও রক্তপাত হতে পারে, যাকে বলে ‘থ্রেটেন্ড মিসক্যারেজ’। এসব ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা দিয়ে রক্তপাত বন্ধ করা যায় এবং সুস্থ শিশু ভূমিষ্ঠ করা যায়। আল্ট্রাসনোগ্রাম ছাড়াও রক্ত পরীক্ষা করে দেখা হয় গর্ভস্থ সন্তান ঠিক রয়েছে কি না। অনেকের জরায়ু মুখে ধারণক্ষমতা কম থাকে। সেসব ক্ষেত্রে সহায়ক চিকিৎসা হিসেবে সেলাই করে দিতে হয়। পাশাপাশি অন্যান্য ওষুধও দিতে হয়। গর্ভাবস্থার ছয় বা সাত মাস পর রক্তপাত হলে অনেকে বেশ ঘাবড়ে যান। এসব ক্ষেত্রে ঘাবড়ানোর কিছু নেই; বরং সঠিক চিকিৎসা দিয়ে গর্ভস্থ সন্তানকে রক্ষা করা যায়। আবার ডেলিভারির কাছাকাছি সময়ে রক্তপাত হলেও চিকিৎসা দেওয়া যায়।

ঝুঁকিসমূহ
অনেক সময় আঘাত বা পানি বেশি থাকার কারণে প্লাসেন্টা বা গর্ভফুল সময়ের আগেই জরায়ু থেকে সরে আসে। এটা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়, যাকে বলে ‘প্লাসেন্টাল অ্যাবরাপশন’। আবার অনেক ক্ষেত্রে গর্ভফুল জরায়ুর মুখের ওপর বা জরায়ু মুখের খুব কাছাকাছি ইমপ্লান্টেড হয়ে থাকে। একে বলে ‘প্লাসেন্টা প্রিভিয়া’, যা মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ একটি বিষয় বটে। এর অবশ্য তেমন কোনো কারণও থাকে না। ওই সময় এসব রোগীকে হাই রিস্ক প্রেগন্যান্সির রোগী হিসেবে শনাক্ত করে চিকিৎসা করা হয়। যথেষ্ট বিশ্রামের পরামর্শ দেওয়া হয়। পরিস্থিতি মোকাবেলা করে নিরাপদ ডেলিভারির জন্য এ সময় তিন থেকে চারজন রক্তদাতা রেডি করে রাখতে হয়।

যেসব সতর্কতা পালন জরুরি
গর্ভাবস্থায় একটু একটু রক্তপাত হলে অনেকে তেমন পাত্তা দেন না বা বিষয়টিকে হালকা মনে করে এড়িয়ে যান। এটা কিন্তু ঠিক নয়। মনে রাখতে হবে, পুরো গর্ভাবস্থায় এক ফোঁটা রক্ত যাওয়াও স্বাভাবিক নয়। তাই সামান্য রক্ত গেলে বা আপনা-আপনি রক্ত যাওয়া বন্ধ হয়ে গেলেও চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

ঝুঁকি প্রতিরোধে করণীয়
গর্ভাবস্থায় রক্তপাত এড়াতে কিছু করণীয় হলো :

❏ গর্ভাবস্থায় পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে।
❏ ভারী কাজ করা যাবে না।
❏ দুশ্চিন্তামুক্ত ও সদা হাসিখুশি থাকতে হবে।
❏ তলপেটে আঘাত, চাপ লাগা বা এমন কোনো কাজ করা যাবে না।
❏ দূরবর্তী স্থানে বা ঝুঁকিপূর্ণ ভ্রমণ করা যাবে না।
❏ সহবাস থেকে বিরত থাকাই শ্রেয়।
❏ থাইরয়েড, ডায়াবেটিস, ইনফেকশন ইত্যাদি থাকলে তার চিকিৎসা নিতে হবে।
❏ নিয়মিত চেকআপ করাতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে।

Advertisement

সবার প্রত্যাশা থাকে, একটি সুস্থ সন্তান জন্মদানের। কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি কারো কাম্য নয়। তাই গর্ভাবস্থায় রক্তপাত বিষয়ে সদা সতর্ক থাকুন। এ রকম পরিস্থিতি দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

Trending

Exit mobile version