Site icon স্বাস্থ্য ডটটিভি

খাবারের মাধ্যমে একজিমা প্রতিরোধ কতটা সম্ভব?

একজিমা নামের চর্মরোগের সঙ্গে যারা পরিচিত তাদের এই রোগটি সম্পর্কে বাড়তিভাবে বুঝিয়ে বলার কিছু নেই। ত্বকের নির্দিষ্ট স্থানে ফুসকুড়ি, চুলকানি, লালচে র‍্যাশ ইত্যাদি দেখা দেয় এই চর্মরোগে। সঠিক ব্যবস্থা না নিলে ধীরে ধীরে আক্রান্ত স্থানের পরিমাণ বাড়তে থাকে।

একজিমাকে প্রতিরোধ করার জন্য এবং এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে ময়েশ্চারাইজার, ওষুধ এবং অনেক কিছুই ব্যবহার করতে পারেন আপনি। তবে এসবের পাশাপাশি একজিমার আরেকটি বড় প্রভাবক হিসেবে খাদ্যাভ্যাসও কাজ করে।

আপনার কি একজিমা আছে? কোন খাবারগুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন এই সমস্যার হাত থেকে পরিত্রাণ পেতে?

খাবার কি একজিমা প্রতিরোধে সাহায্য করে?
কিছু খাবার আমাদের শরীরে অ্যালার্জি তৈরি করে এবং একজিমার পরিমাণকে বাড়িয়ে দেয়। সেসব খাবার থেকে দূরে থাকলে একজিমাকে কিছুটা হলেও আয়ত্তে আনা সম্ভব। অন্যদিকে, পরিমাণমতো পানি পান করলেও একজিমার লক্ষণ কম দেখা দেয়। সবমিলিয়ে খাবার এ ক্ষেত্রে বেশ বড় ভূমিকা পালন করে।

ফুড অ্যালার্জি ও একজিমা : সম্পর্কটা কেমন?
ফুড অ্যালার্জি হলো কোনো খাবারের প্রতি আমাদের শরীরের প্রতিক্রিয়া। অনেকসময় কোনো নির্দিষ্ট খাবার খেলে শরীর সেটাতে এমন উপাদান খুঁজে পায় যেটি শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এই ক্ষতিকর উপাদানকে প্রতিরোধ করতেই তখন শরীর নিজ থেকে কিছু পদক্ষেপ নেয়। রোগপ্রতিরোধক ক্ষমতার এই সমস্যার কারণে বমিভাব, অ্যালার্জি ইত্যাদি তৈরি হয়। একজিমা আছে এমন ব্যক্তিদের মধ্যে এই ফুড অ্যালার্জি বেশি দেখতে পাওয়া যায়। একজিমা আছে এমন প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষের মধ্যেই অন্তত একটি খাবারে অ্যালার্জি দেখতে পাওয়া যায়।

২০১৪ সালে জার্নাল অব ইনভেস্টিগেটিভ ডার্মাটোলজিতে প্রকাশিত একটি গবেষণানুসারে, ফুড অ্যালার্জির পেছনে প্রাথমিক ঝুঁকি হিসেবে কাজ করে এটপিক ডার্মেটিটিস। এর কারণ কী? এখনো পরিষ্কারভাবে জানা যায় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ডিম, বাদাম, দুধ, সয়া ইত্যাদির কারণে ফুড অ্যালার্জি তৈরি হয়। যেহেতু এই অ্যালার্জি ও একজিমার ভেতরে সম্পর্ক রয়েছে, তাই অ্যালার্জি দূর করাটা একজিমা প্রতিরোধের ক্ষেত্রে অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারে। আপনার যদি একজিমা থাকে, তাহলে ফুড অ্যালার্জি হচ্ছে এমন খাবার থেকে দূরে থাকুন।

একজিমা প্রতিরোধে কোন খাবারগুলো খাবেন?
একজিমাকে কিছু খাবার নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে। বাকি খাবারগুলো স্বাভাবিকভাবেই আক্রান্ত ব্যক্তি খেতে পারেন। তবে, এমন কিছু খাবার আছে যেগুলো একজিমাকে প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। বিশেষ করে, কিছু খাদ্যাভ্যাস এই কাজটিকে সহজ করে দেয়। সেগুলো হলো-

● প্রচুর পরিমাণ পানি পান করা। এতে ত্বক ভালো থাকে। নানারকম সমস্যাকে অন্যান্য সময়ের চাইতে তুলনামূলক ভালোভাবে প্রতিরোধ করতে পারে।

● সবজির কোনো বিকল্প হয় না। তবে যদি ফরমালিন, কোনো ওষুধ বা কীটনাশক মিশ্রিত সবজি খাওয়া হয় সে ক্ষেত্রে ব্যাপারটি আরও নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে একজন মানুষকে। তাই, প্রক্রিয়াজাত নয় এবং স্বাস্থ্যকর এমন খাবার খেতে চেষ্টা করুন।

● ওমেগা ৩ আছে এমন খাবার বেশি বেশি করে খান। বিশেষ করে, মাছে এই উপাদানটি বেশি থাকে। তাই নিয়মিত মাছ খান।

● একজিমার ক্ষেত্রে গরুর দুধ খেতে মানা করা হলেও আপনি মহিষ, ভেড়া, পাঠা, বাদামের দুধ, সয়া দুধ ইত্যাদি খেতে পারেন।

একজিমা প্রতিরোধে কোন খাবারগুলো খাবেন না?
কিছু খাবার আপনাকে একজিমা প্রতিরোধে সাহায্য করবে। তবে নির্দিষ্ট কিছু খাবার আপনার একজিমার সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। যদিও কোন খাবারটি এ ক্ষেত্রে আপনাকে ট্রিগার করবে তা বলা মুশকিল। এই খাবারটি মানুষভেদে ভিন্ন হয়। কারও একটি খাবারে সমস্যা থাকলে, কারও ক্ষেত্রে দুই বা তিনটি খাবারও একজিমা ও ফুড অ্যালার্জি তৈরি করে। সে ক্ষেত্রে এই খাবারগুলোকে এড়িয়ে চলুন-

● কার্বোহাইড্রেট রয়েছে এমন খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। আর একেবারেই সম্ভব না হলে পরিমাণে খুব কম খান।

● দুধ এবং দুগ্ধজাত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। আপনি যদি সবসময় এই খাবার খেয়ে থাকেন তাহলে কয়েক সপ্তাহের জন্য সেটি বন্ধ রাখুন। দেখুন, এতে আপনার শরীরে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন আসে কি না। যদি আসে, তাহলে দুধ এবং দুগ্ধজাত যে কোনো খাবার খাওয়া থেকে বিরত রাখুন।

● শুধু গরুর দুধ নয়, গরুর মাংস খাওয়া থেকেও বিরত থাকুন।

তবে একই সঙ্গে সাপ্লিমেন্টও খেতে পারেন। এটি একজিমা প্রতিরোধে সাহায্য করে। ওমেগা ৩, ৬ এবং ৯ এ ক্ষেত্রে আপনাকে ভালো ফলাফল দিবে। সঙ্গে রাখতে পারেন ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি এবং ই-এর মতো পুষ্টিকর উপাদানগুলোও।

Exit mobile version