চীনে করোনা ভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা সবশেষ ৮১ জনে পৌঁছেছে। প্রাণঘাতী এই সার্স ভাইরাসে অন্তত ২ হাজার ৭৪৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ছড়িয়েছে। ইতোমধ্যে ১৪টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এই ভাইরাস। জরুরি কিছু নির্দেশনা জেনে নেওয়া যাক।
চীন ছাড়াও ইতোমধ্যে হংকং, যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ড, তাইওয়ান, ভিয়েতনাম, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, ম্যাকাউ, নেপাল, ফ্রান্স, মালয়েশিয়া, কানাডায় এ ভাইরাসে সংক্রমিত রোগী শনাক্ত করা গেছে। গত ১৪ দিনের মধ্যে কেউ যদি এসব দেশে ভ্রমণ করে থাকেন তাহলে তাদের জন্য রয়েছে জরুরি কিছু নির্দেশনা।
https://www.youtube.com/watch?v=72N0f5voSyA
এ রোগের বেশ কিছু লক্ষণ রয়েছে। তা হলো- গলা ব্যথা, কাশি, শ্বাসকষ্ট, সর্দি-হাঁচি, জ্বরসহ সার্স ও মার্সের নানা উপসর্গ। প্রাথমিক পর্যায়ে ১ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে ভাইরাসটির সংক্রমণ হয়।
১. যারা এই দেশগুলোর যে কোনো একটিতে ভ্রমণ করেছেন কিংবা শ্বাস-প্রশ্বাস সম্বন্ধীয় জটিলতা ও উল্লিখিত উপসর্গগুলো যদি কারও শরীরে ধরা পড়ে বা বুঝতে পারেন, তাহলে তাদের অবশ্যই বায়ুবাহিত বিচ্ছিন্নতার মধ্যে রাখতে হবে। এ ধরনের কোনো রোগীকে কোনোভাবেই অন্য কোনো মানুষের সংস্পর্শে আসতে দেওয়া যাবে না।
২. যদি আপনার শরীরে সর্দি-কাশি, হাঁচি, ঠান্ডা, শ্বাসকষ্ট অথবা জ্বরের মতো সিভিয়ার অ্যাকুইট রেসপিরেটরি সিনড্রোম (সার্স) বা উল্লিখিত কোনো উপসর্গ লক্ষ্য করেন, তাহলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ও আপনার শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা জরুরি। যত দ্রুত সম্ভব এটা করতে হবে।
৩. আপনার মধ্যে যদি এ ধরনের কোনো লক্ষণ দেখা দেয় তাহলে কোনোভাবেই অন্য কারও সংস্পর্শে যাওয়া যাবে না। এছাড়া আপনার চারপাশের কারও মধ্যে যদি হাঁচি-কাশি, সর্দি কিংবা জ্বর ও শ্বাসকষ্টের মতো এসব লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে তার আশপাশে যাওয়াও আপনার জন্য নিষিদ্ধ।
৪. উপরে যে ১৪টি দেশে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে সেসব দেশ ভ্রমণের পর বাড়িতে ফিরে কারও মধ্যে যদি এসব লক্ষণ দেখা দেয় তাহলে তারা যখন চিকিৎসক কিংবা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য হাসপাতাল-ক্লিনিকে যাবেন তখন আপনি অবশ্যই আপনার চিকিৎসককে ভ্রমণের বিস্তারিত জানাতে ভুলবেন না।
৫. যদি কারও মধ্যে ভাইরাসটিতে সংক্রমিত হওয়ার মতো কোনো লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে আপনাকে অবশ্যই সার্বক্ষণিক মেডিকেল মাস্ক পরে থাকতে হবে। শুধু আক্রান্ত হওয়া ব্যক্তি নয় এ ভাইরাস যাতে আপনাকে সংক্রমিত করতে না পারে, সেজন্যও আপনার মাস্ক পরে জনসম্মুখে চলাচল করা উচিত।
৬. আপনি যখন মাস্ক ব্যবহার করবেন তখন আপনাকে অবশ্যই এটি স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এছাড়া আপনি যে মাস্কটি পরেছেন তা আপনার মুখ এবং নাক পুরোটা ঢেকে ফেলেছে কি না, এটাও নিশ্চিত করতে হবে। যদি এটা খেয়াল না করেন তাহলে মাস্ক পরে থাকলেও ভাইরাসটি আপনাকে সংক্রমিত করতে পারে।
৭. আপনি যদি একটা মাস্ক প্রতিদিন ব্যবহার করতে চান তাহলে সেটাও হবে ভুল। আপনাকে প্রতিদিন নতুন নতুন মাস্ক ব্যবহার করতে হবে, যা ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমায়। এছাড়া প্রতিদিন ঘরে ফিরে মাস্কটি খুলে ফেলার পর অবশ্যই আপনার হাত ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। যাতে করে হাতে কোনো জীবাণু না থাকে।
৮. হাত না পরিষ্কার করে কোনোভাবেই সে হাত দিয়ে অন্য হাত, চোখ, নাক এবং মুখে স্পর্শ করা যাবে না। সাবান কিংবা অন্য যে কোনো জীবাণুনাশক দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অ্যালকোহলভিত্তিক হ্যান্ডওয়াশ ব্যবহার করা এ ক্ষেত্রে উত্তম।
আরও পড়ুন : করোনা ভাইরাস ইস্যুতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি বৈঠক
৯. যেসব স্থানে জনসমাগম বেশি সেসব স্থানে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা এ ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হয়। যদি আপনি জনসমাগম বেশি এসব জায়গায় চলাফেরা করেন তাহলে আপনার ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যাবে। গেলেও সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে সবসময়।
১০. আপনার আশপাশের থাকা কেউ যদি কাশি কিংবা হাঁচি দেয় তাহলে তাদের সংস্পর্শে আসার আগে অবশ্যই আপনার নাক ও মুখ ঢেকে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। বিশেষ করে পরিবারের কোনো সদস্যের মধ্যে কারও লক্ষণগুলো দেখা দিলে পরিবারের অন্যদের সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে।