শীতকালের কমন অসুখ সর্দি, জ্বর আর কাশি। সর্দি-জ্বর এগুলো তাড়াতাড়ি ভালো হলেও কাশি সহজে ভালো হতে চায় না। এ সমস্যা আমাদের ভোগায় দীর্ঘদিন। দেখা যায় ২/৩ সপ্তাহ পর্যন্ত এর রেশ থেকেই যায়। তবে অনেক ক্ষেত্রে অ্যালার্জি, অ্যাজমা, শুষ্ক আবহাওয়া ও ধূমপানের কারণেও কাশি হয়ে থাকে।
কাশি হলেই হুট করে এন্টি-বায়োটিক ওষুধ খাওয়া উচিত নয়। ঘরোয়া কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করলেই কাশি থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।
চলুন জেনে নিই কাশি কেন হয় আর ঘরোয়া উপায়ে কিভাবে কাশি দূর করতে পারেন।
কাশি হবার কারণ :
বিভিন্ন কারণেই কাশি হয়ে থাকে। অনেক সময় ফুসফুসে সংক্রমণ, নিউমোনিয়া, যক্ষা ইত্যাদি কারণেও কাশি হয়। এ ক্ষেত্রে কাশি দীর্ঘদিন চলতেই থাকে এবং বুকে ব্যথা হয়ে যায়। দেখা দেয় শ্বাসকষ্টসহ আরও বিভিন্ন সমস্যাও। এমন হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
এছাড়াও আরও নানা কারণে কাশি হয়। যেমন- সাইনাস সমস্যায় নাকের প্রদাহের কারণে দীর্ঘস্থায়ী কাশি হতে পারে। আবার ধূমপানের কারণেও খুসখুসে কাশি হয়। এক্ষেত্রে ওষুধ কোনই কাজে আসবে না যদি ধূমপান না ছাড়া হয়। ধূমপায়ীদের স্মোকার কফ (smoker cough) হয়। তামাক শ্বাস ঝিল্লিকে ক্রমাগত ব্যাহত করে বলেই কাশি উঠে। কাজেই যদি খুসখুসে কাশিতে আক্রান্ত হন তাহলে আজই ধূমপানকে না বলুন।
কাশি দূর করার ঘরোয়া উপায় :
১. মধু : কাশি উপশমে ঘরোয়া চিকিৎসা হিসেবে মধুর জুড়ি নেই। মধু কাশি-কফ কমাতে সাহায্য করে। কখনও কখনও ওষুধের চেয়েও ভালো কাজ করে মধু। মধু কাশি বা ঠান্ডার জন্য আদর্শ ওষুধ হলেও এক বছর বয়সের নীচে শিশুদের মধু খাওয়ানো একেবারেই উচিত নয়।
কীভাবে ব্যবহার করবেন :
ক. এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে ২ টেবিল চামচ মধু, অর্ধেকটা লেবুর রস আর সামান্য আদার রসের মিশ্রণ প্রতিদিন ১/২ বার খেতে হবে। এ মিশ্রণ কফ ও গলা ব্যথা নিয়ন্ত্রণ করে।
খ. গরম দুধের সাথে ২ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে পান করুন। রাতে ঘুমানোর আগে নিয়মিত পান করলে কাশি উপশম হবে।
গ. দিনে ৩ বার করে ১ টেবিল চামচ মধু খেলেও কাশি নিয়ন্ত্রণে আসবে।
ঘ. এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে ১ চা চামচ গোল মরিচের গুঁড়া ও ১ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে খান। দিনে ২ বার খেলে কাশি সেরে যাবে।
২. বাসক পাতা : বাসক পাতা পানিতে সেদ্ধ করে, সেই পানি ছেঁকে নিয়ে কুসুম গরম অবস্থায় খেলে কাশি উপশম হয়। দৈনিক সকালে এই পানি খেতে হবে। বাসক পাতার রস প্রতিদিন সন্ধ্যায় খেলে ভালো। ২-৩ দিনেই এর খুব ভালো ফল পাওয়া যায়। তেতোভাব কমাতে রসের সাথে সামান্য চিনি মেশাতে পারেন।
৩. তুলসী পাতা : তুলসী পাতা থেঁতো করে এতে কয়েক ফোটা মধু মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরী করতে হবে। এই মিশ্রণটি দৈনিক ২/৩ বার খেলে কাশি ভালো হয়।
৪. আদা : আদা ছোট ছোট টুকরা করে তার সাথে লবণ মিশিয়ে নিয়ে কিছুক্ষণ পর পর খেতে হবে। এই পদ্ধতি কাশি দূর করতে বেশ কার্যকরী। তাছাড়া আদা চা করে খেলেও কাশিতে উপকার পাবেন।
৫. গরম দুধে হলুদের মিশ্রণ : দুধকে গরম করে এর মধ্যে অল্প হলুদ মেশাতে হবে। এই হলুদমিশ্রিত দুধ কাশি দূর করতে বেশ উপকারী। হলুদ আমাদের সর্দি কাশি দূর করতে সাহায্য করে।
৬. লবঙ্গ : কাশি হলে মুখে একটা লবঙ্গ রেখে মাঝেমধ্যে একটু চাপ দিয়ে রস বের করে গিলে ফেলুন। লবঙ্গের রস গলায় আরাম দেবে, জীবাণু দূর করবে।
৭. মেন্থল ক্যান্ডি : মেন্থল দিয়ে তৈরী ক্যান্ডি বা চকোলেট কাশির জন্য উপকারী। এসব ক্যান্ডি শক্ত কফ নরম করে গলা থেকে কফ বের করতে ও কাশি কমাতে পারে।
৮. গার্গল করা : গার্গল করলে কাশি ও গলা ব্যথা দুই-ই কমে। এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে আধা চা চামচ লবণ মিশিয়ে ১০/১৫ মিনিট ধরে গার্গল করুন। বিরতি দিয়ে দিয়ে কয়েকবার করুন। এটি কাশি কমাতে বেশ কার্যকর ঘরোয়া পদ্ধতি।
এছাড়াও কাশি হলে ঠান্ডা পানির পরিবর্তে চেষ্টা করুন গরম পানি পান করার। কাশি হলে গরম পানিতে গোসল করুন। এটা শরীর থেকে কাশির জীবাণুগুলোকে বের করে দেয়।
এসব পদ্ধতি অনুসরণ করার পরও যদি কাশি না কমে তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
শীতে ত্বকের থাক যত্নে
দেখতে দেখতে বছর ঘুরে ফিরে এল শীতের আমেজ। হিম হিম ঠান্ডা হাওয়ার দাপটে এই সময় ত্বক হয়ে ওঠে রুক্ষ, শুষ্ক, টানটান। শীতের দাপুটে বাতাস, ধুলাবালু, ঠান্ডা, কাশি আর শীতপোশাক নিয়ে টালমাটাল সময়ে আর ব্যস্ত জীবনে ত্বকের দিকে খেয়াল রাখা হয় কমই। আর এ সুযোগেই আমাদের ত্বকের যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে যায়। তাই এ সময় ত্বক রুক্ষ ও অনুজ্জ্বল হয়ে যাওয়া রোধ করতে চাইলে দরকার একটু বাড়তি যত্নের। নিয়মিত যত্নে শীতেও ত্বক থাকবে মসৃণ, ঝলমলে, দ্যুতি ছড়ানো স্বাস্থ্যোজ্জ্বল।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগের অধ্যাপক নার্গিস আখতার জানান, শীতে ত্বকের শুষ্কতা রোধ করতে জলপাই তেল, লোশন বা ভ্যাসলিন মাখতে হবে। তাতে ত্বক আর্দ্রতা ধরে রাখবে। পানি, পানিজাতীয় খাবার, ফল ও ফলের রস, সতেজ শাকসবজি ও ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খেতে হবে প্রচুর পরিমাণে। কফির বদলে চা পান করা উত্তম। সবুজ চা খেতে পারলে খুবই ভালো, তবে লাল চায়ে আদা বা লেবু মিশিয়ে খেলেও সেটা ত্বকের জন্য উপকারী। শীতে ভারী পশমি কাপড় জড়ানোর আগে অবশ্যই পাতলা ফুলহাতা সুতি পোশাকের ওপর সেগুলো পরতে পারলে খুব ভালো। হাত–পায়ে মোজা জড়াতে পারলে ত্বক থাকবে আরামে। অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাব থেকে বাঁচতে ছাতা ব্যবহার করা সবচেয়ে ভালো, তবে শীতকালেও বাইরে বের হওয়ার অন্তত ৩০ মিনিট আগে সানস্ক্রিন ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে ত্বকে যেটিই ব্যবহার করুন না কেন, কালো হয়ে যাওয়া, ফুসকুড়ি, চুলকানো, লাল হয়ে যাওয়াসহ যেকোনো ধরনের সমস্যা হলেই দ্রুত সেটির ব্যবহার বন্ধ করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
Vaseline Veer
এ তো গেল বিশেষজ্ঞের মতামত। শীতে ত্বকের যত্নের কিছু কথা জানালেন রূপবিশেষজ্ঞ। ত্বকের ধরন অনুযায়ী শীতে কোন ধরনের ত্বকে কেমন যত্ন নেওয়া উচিত, জানতে চেয়েছিলাম বিন্দিয়া এক্সক্লুসিভ বিউটি কেয়ারের রূপ বিশেষজ্ঞ শারমিন কচির কাছে। তিনি জানান ধরন অনুসারে ত্বক পরিচর্যার কিছু উপায়।
শুষ্ক ত্বকের যত্ন
শুষ্ক ত্বক শীতে আরও বেশি রুক্ষ, শুষ্ক হয়ে পড়ে। এ ধরনের ত্বকের জন্য ভিটামিন ই তেল আধা চামচ আর আধা চামচ গ্লিসারিন মিশিয়ে প্রতিদিন লাগাতে পারেন। ত্বকে পুষ্টি জোগাতে ডিমের কুসুম, ১ চা-চামচ মধু, আধা চামচ জলপাই তেল ও পরিমাণমতো গোলাপজল মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুই দিন ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন
যাঁদের ত্বক বেশি তৈলাক্ত, তাঁরা ক্লিনজিং ও ময়েশ্চারাইজিংয়ের ক্ষেত্রে তেলমুক্ত (অয়েল ফ্রি) পণ্য ব্যবহার করুন। ক্লিনজিং ও টোনিংয়ের পর লেটুসপাতার রস, মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে লাগাতে পারেন। ঘরোয়া ময়েশ্চারাইজার হিসেবে টমেটোর রস খুব ভালো কাজ করে। আনারস, আপেল, পাকা পেঁপের সঙ্গে মধু মিশিয়ে প্যাক ব্যবহার করতে পারেন অনায়াসেই।
মিশ্র ত্বকের যত্ন
প্রতিদিন হালকা ক্লিনজার ব্যবহার করতে হবে মিশ্র ত্বকের অধিকারীদের। তবে ত্বকের শুষ্ক জায়গাগুলো অবশ্যই ময়েশ্চারাইজার লাগাবেন। সেদ্ধ করা মিষ্টিকুমড়া চটকে তার সঙ্গে মধু ও দুধ পরিমাণমতো মিশিয়ে ২০ মিনিট রেখে তারপর ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন। এ প্যাকটি সপ্তাহে তিন দিন ব্যবহার করলে উপকার পাবেন।
টিপস
* গোসলের পর এবং প্রতিবার মুখ ধোয়ার পর ত্বক ভেজা থাকতেই ময়েশ্চারাইজার বা লোশন ব্যবহার করা উচিত। এতে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকবে। পাশাপাশি স্নিগ্ধ সতেজতা ফুটে উঠবে চেহারায়।
* শীতকালে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে মাঝেমধ্যে মুখে পানির ঝাপটা দেওয়া ভালো। তাহলে ত্বক সহজে শুষ্ক হয়ে যাবে না।
* অতিরিক্ত গরম পানি ত্বকের কোষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এর ফলে ত্বকের আর্দ্রতা নষ্ট হয়। গোসলের সময় আরাম অনুভব হলেও অতিরিক্ত গরম পানি দিয়ে মুখ, মাথা ধোয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
* কখনোই ঠোঁট শুকনা অনুভব করলে জিব দিয়ে ভেজানো উচিত নয়। ঠোঁট নরম রাখতে গ্লিসারিন ব্যবহার করা যেতে পারে। কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েল মধুর সঙ্গে মিশিয়ে ঠোঁটে লাগালে ঠোঁট কখনোই ফেটে যাবে না। ঘুমের সময় লিপজেল অথবা পেট্রোলিয়াম জেলি লাগালেও নরম থাকবে ঠোঁট।
* জলপাই তেল ব্যবহার করা যেতে পারে। জলপাই তেলবা ময়েশ্চারাইজার পুরো মুখে ভালো করে মালিশ করে ঘুমিয়ে পড়বেন, এতে ত্বক পরিষ্কার হবে এবং সকালে দেখবেন ত্বক হয়ে উঠবে প্রাণবন্ত।