জ্বরঠোসা: কারণ ও মুক্তির উপায় কী?

অনেকেই হয়তো জানেন না, জ্বরঠোসা সংক্রামক। আজ আমরা জানবো জ্বরঠোসা কী এবং কিভাবে এর ঘরোয়া চিকিৎসা করা যায়।

জ্বরঠোসা কী?

ঠোঁট ও ঠোঁটের চারপাশে সৃষ্ট ক্ষুদ্র ফুসকুড়িকে জ্বরঠোসা বলে। কেউ কেউ এটাকে জ্বসারি নামে চিনেন আবার কেও ঢাকেন জ্বরঠুঁটো। সিলেটে এই রোগ জ্বরন্ডা, জরন্ডা বা জ্বরেন্ডা নামেই বেশি পরিচিত। ইংরেজিতে একে বলে কোল্ড সোর (English: Cold sore) ।

সাধারণত এই ফুসকুড়িগুলি পুঞ্জাকারে সৃষ্টি হয়। ফুসকুড়িগুলি ফেটে যাওয়ার পর ক্ষত স্থানের উপর শক্ত আবরণ তৈরি হয়ে থাকে। দুই সপ্তাহের মধ্যেই জ্বরঠোসা কমে/সেরে যায়। জ্বর ঠোসায় আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শের (যেমন চুম্বন) মাধ্যমে এই রোগ আরেক ব্যক্তিতে ছড়িয়ে পড়ে।

জ্বরঠোসা হওয়ার কারণ কী?

# হার্পিস সিমপ্লেক্স ভাইরাসের (এইচ-এস-ভি-১)[English: herpes simplex virus (HSV-1)] কারণে ব্যক্তি জ্বরঠোসায় আক্রান্ত হয়ে থাকে। এই ভাইরাসটি জেনিটাল হার্পিস (genital herpes)
# সৃষ্টিকারী এইচ-এস-ভি-২ ভাইরাসের সাথে সম্পর্কযুক্ত। এই দুটি ভাইরাস মুখগহ্বর ও যৌনাঙ্গকে আক্রান্ত করে।
# হার্পিস ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষতস্থান থেকে এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটতে পারে।
# আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত বাসনপত্র, শেভিং রেজার এবং তোয়ালের মাধ্যমেও এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটতে পারে।
# আক্রান্ত ব্যক্তির ফুসকুড়ি থেকে তরল ক্ষরণের সময় জ্বরঠোসা সবচেয়ে বেশি সংক্রামক অবস্থায় থাকে, তবে আক্রান্ত ব্যক্তির ত্বকে কোনো ফুসকুড়ি না থাকলেও তার শরীর থেকে # # জ্বরঠোসার ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটতে পারে।
# শরীরে ইনফেকশন সৃষ্টির পর এই ভাইরাস ত্বকের স্নায়ু কোষের মধ্যে সুপ্তাবস্থায় থেকে যায়, এবং পরবর্তীতে আবারও আক্রান্ত স্থান বা তার পাশে ইনফেকশন সৃষ্টি করতে পারে।
# বিভিন্ন কারণে এই ভাইরাস আবারও সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে, যেমনঃ জ্বর, রজঃস্রাব, শারীরিক বা মানসিক চাপ, ক্লান্তি, রোদ লাগা ইত্যাদি।

জ্বরঠোসার লক্ষণগুলো কী?

জ্বরঠোসায় আক্রান্ত ব্যাক্তিদের মধ্যে সাধারণত নিম্নলিখিত লক্ষনগুলো দেখতে পাওয়া যায়ঃ

>ত্বকে লাল লাল ফুসকুড়ির(English: skin rash) সৃষ্টি হয়
>ঠোটে কালশিটে দেখা যায়
>মুখের আলসার হতে পারে
>জ্বর
>ঠোট ফুলে যায়
>ত্বকে ক্ষতের সৃষ্টি হয়
>গলা ব্যথা হয়
>যোনিতে চুলকানি ভাব দেখা দেয়
>যোনি স্রাব হয়
>ত্বকে চুলকানি হয়
>ত্বক ফুলে যায়
>হাতে পায়ে পানি আসে

কোন কোন বিষয়গুলো জ্বরঠোসার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ?

সমগ্র বিশ্বের প্রায় ৯০% প্রাপ্তবয়স্কের শরীরেই জ্বরঠোসা সৃষ্টিকারী ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়। এমনকি যাদের শরীরে এর ইনফেকশনের কোনো লক্ষণ পাওয়া যায় না, তাদের শরীরেও এই ভাইরাসের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। যেসব ব্যক্তির ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল (রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা) তাদের শরীরে এই ভাইরাসজনিত সমস্যা বেশি দেখা দেয়।

যে সব রোগ ও চিকিৎসা জ্বরঠোসার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে সেগুলি হলঃ

>এইচ-আই-ভি/এইডস
>এ্যাকজিমা
>তীব্রভাবে দগ্ধ/পুড়ে যাইয়া।
>ক্যানসারের চিকিৎসায় ব্যবহৃৎ কেমোথেরাপি।

জ্বরঠোসায় আক্রান্ত হওয়ার পর কোন পর্যায়ে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিৎ?

যদি জ্বরঠোসার লক্ষণ ৭ দিনের মধ্যে প্রশমিত না হয়, তাহলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিৎ। যদি আক্রান্ত স্থানে চুলকানি, ব্যথা, লাল লাল ভাব থেকে যায় বা বৃদ্ধি পায়; যদি জ্বর হয়, বা আক্রান্ত স্থান ফুলে ওঠে তাহলেও চিকিৎসকের পরামর্শ প্রয়োজন।

জ্বরঠোসা কিভাবে নিরাময় করা সম্ভব?

জ্বরঠোসা নিরাময়ের কোনো উপায় নেই, তবে এর লক্ষণগুলিকে কমিয়ে রাখা যেতে পারে।

জ্বরঠোসায় আক্রান্ত স্থানে কি প্রয়োগ করা যেতে পারে?

কিছু ভাইরাসরোধী ঔষধ ব্যবহার করে জ্বরঠোসার ভাইরাসের সংক্রমণ কমানো যেতে পারে। যেমন- লেমন বাম ক্রিম (lemon balm cream)। প্রাথমিক অবস্থায় লাইসিন (lysine) ১০০০মিগ্রা দিনে তিনবার গ্রহণ করলে জ্বরঠোসা দ্রুত সেরে যায়। এছাড়া ডার্মাটলোজিস্ট লেজার চিকিৎসা করার পরামর্শও দিতে পারেন।

হেলথ টিপস্‌

জ্বরঠোসার লক্ষণ উপশমের জন্য নিম্নে লিখিত বিষয়গুলি অনুসরণ করা যেতে পারেঃ

>ডকোস্যানল (English: Docosanol) – চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াও এই ক্রিমটি ব্যবহার করা যেতে পারে। এই ক্রিমটি বারবার ব্যবহার করতে হবে। এটি ব্যবহার করলে জ্বরঠোসা স্বাভাবিক সময়ের পূর্বে সেরে যায়।
>শুষ্ককারী পদার্থ – অ্যালকোহলের মতো শুষ্ককারী পদার্থ প্রয়োগ করলে এটি দ্রুত সেরে যেতে পারে।
>বরফ বা ঠান্ডা পানি – ফুসকুড়ির উপর বরফ প্রয়োগ করলে বা ফুসকুড়িগুলি ঠান্ডা পানিতে ভেজানো কাপড় দিয়ে মুছে ফেললে উপকার পাওয়া যেতে পারে।

Exit mobile version