পিরিয়ড সম্পর্কিত পাঁচ ভ্রান্ত ধারণা

পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায়

প্রত্যেক মেয়েই পিরিয়ড নামক এই মাসিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে পরিচিত। কারো কারো কাছে এই অভিজ্ঞতা বেশ কষ্টের। তবে আমাদের অনেকেরই এই পিরিয়ড সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা আছে।

আলিসা ভিট্টি একজন পুষ্টিবিদ এবং মহিলাদের হরমোন বিশেষজ্ঞ। ‘উইমেন কোড’ নামে আলিসার একটি বই আছে। যেটি মেয়েদের স্বাস্থ্য নিয়ে লেখা। এই বইয়ে আলিসা ব্যাখ্যা করেন মেয়েদের শারীরিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে যার মধ্যে পিরিয়ড একটি। মূলত পিরিয়ড চলাকালীন শারীরিক সমস্যা এবং হরমোনের ভারসাম্যতা নিয়ে লিখেছেন তিনি।

আলিসা ইনসাইডারকে বলেন, প্রত্যেক মেয়ের তার পিরিয়ডের সাইকেল সম্পর্কে জানা উচিত এবং কিভাবে তা ঠিক করা যায় সে সম্পর্কেও জ্ঞান থাকা দরকার। আসুন এখন জেনে নেওয়া যাক পিরিয়ড সম্পর্কে কিছু ভ্রান্ত ধারণা এবং আসল সত্যিটা কি।

ভ্রান্ত ধারণা : পিরিয়ডের রক্ত নোংরা এবং লজ্জাকর
আলিসা বলেন, ‘আমাদের সংস্কৃতি আমাদেরকে শেখায় যে, পিরিয়ড চলাকালীন একটি মেয়ের শরীর থেকে যে রক্ত বের হয় তা অস্বাস্থ্যকর, নোংরা এবং আমরা কোনো প্যাড বা স্যানিটারি ন্যাপকিন ফেলে দেওয়ার আগে তা ৩ থেকে ৪ বার কাগজ দিয়ে মুড়ে দেই যাতে করে কেউ সেটা দেখতে না পায়। যা একটি প্রবঞ্চক মতদীক্ষা।’

আলিসা এসব প্রচলিত ধারণার বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টি করে ঋতুকালীন লজ্জা এবং নিরবতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে চান। তিনি বলেন, ‘আপনার শরীরে উৎপন্ন হওয়া তরল বা রক্ত প্রতিটি একক প্রজননের জীবনদাতা।’

ভ্রান্ত ধারণা : পিরিয়ড শুরু হওয়ার ব্যথা অনিবার্য
পেশি সংকোচন, মাথাব্যথা, হজমজনীত সমস্যা বা শরীরের অন্যান্য সমস্যা পিরিয়ডের অন্তর্ভুক্ত হবে এমনটা জরুরি নয়। আলিসা বলেন, ‘যখনি আপনি পুরো প্রাণবন্ত একটি সময় শুরু করেন তখনি আপনার পিরিয়ড শুরু হলে তা বেশ অস্বস্তিকর। কিন্তু কোনো কারণে তা যদি হয় সম্পূর্ণ ব্যথামুক্ত এবং খুব সহজ হয় তাহলে আপনাকে ধরে নিতে হবে এটা শরীরের কোনো একটি ভারসাম্য ঠিক করার সংকেত যা ইতিমধ্যে ভুল দিকে চলে গিয়েছে।’

ভ্রান্ত ধারণা : প্রত্যেকটি সমস্যা আলাদা চিকিৎসা করতে হবে
পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে শরীরে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। যেমন চোখের নিচের কালো দাগ বেশি করে বোঝা যায়। এছাড়া ত্বকে ব্রণ দেখা দেয়। এসব সমস্যা হরমোনের কারণে হয় না। তাছাড়া এই সব সমস্যার জন্য হুট করে নানা ধরনের চিকিৎসা শুরু করা উচিত নয়। সাধারণ খাবারের মাধ্যমে এই সমস্যাগুলো এড়ানো সম্ভব।

ভ্রান্ত ধারণা : জন্মনিয়ন্ত্রক পিল সব সমস্যার সমাধান করে দেয়
জন্মনিয়ন্ত্রক পিল হরমোনের ভারসাম্যহীনতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না বরং এটি আরো খারাপ প্রভাব তৈরি করে। এ ব্যাপারে আলিসা বলেন, ‘জন্মনিয়ন্ত্রক পিল সবার জন্য নয়। এটি শুধুমাত্র স্বাস্থ্যবান এবং সাধারণ নিয়মে পিরিয়ড হওয়া মেয়েদের জন্য। কিন্তু এই কথা আমাদের ফার্মেসির বিক্রেতারা আমাদেরকে বলেন না। আর তাই আপনার যদি হরমোন ভারসাম্যহীন জনীত কোনো সমস্যা থেকে থাকে তাহলে এই পিলগুলোর খারাপ প্রভাব পড়তে শুরু করবে আপনার উপর।’

ভ্রান্ত ধারণা : পিরিয়ডের আগের সপ্তাহ থেকে মেয়েদের মুড খারাপ হতে থাকে
আলিসা বলেন, ‘অনেক মেয়ে দাবি করেন তার বাড়িতে দুইটি ওয়ারড্রব। একটি মাসের অর্ধেক অর্থাৎ পিরিয়ডের আগের সপ্তাহ থেকে পিরিয়ডের শেষ পর্যন্ত বাকিটা মাসের অন্য অর্ধেক দিনগুলোর জন্য।’ আলিসার মূল কথা হল, আপনি পুরো মাস জুড়ে প্রাণবন্ত থাকার জন্য তৈরি হয়েছেন, মাসের অর্ধেকটা বাজে অনুভূতি নিয়ে কাটানোর জন্য নয়। মূলত পিরিয়ডের সময়টাতে একটু খারাপ লাগতে পারে তাই বলে এটি কারো জীবন ব্যাহত করতে পারে না।

Exit mobile version