সু স্বা স্থ্যে ব্যা য়া ম

■ ডা. মালিহা শিফা
শরীরকে সুস্থ, সবল ও কর্মক্ষম রাখা, দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো এবং জরা-বার্ধক্যকে দূরে রাখার জন্য ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রমের ভূমিকা অদ্বিতীয়।

ব্যায়াম যেভাবে সুস্থ রাখে
চিকিৎসা বিজ্ঞানীদো মতে, হাঁটা হচ্ছে সুসাস্থ্যের জন্য একটি উত্তম ব্যায়াম। বিগত দুই দশকের গবেষণায় দেখা গেছে শারীরিক পরিশ্রম ব্যায়ামের ফলে কেবল যে জরার ভার লাঘব করা যায় তাই নয়, স্বাস্থ্যের উন্নতি সাধনও করা যায়। ৫৬ থেকে ৮৭ বছর বয়স্ক ২০০ ব্যক্তির মধ্যে এক সমীক্ষায় দেখা যায়, ৬ সপ্তাহ হাঁটা, দৌড়ানো ও অন্যান্য ধরনের খালি হাতে ব্যায়ামের ফলে রক্তচাপ কমে যায়, শ্বাসে অক্সিজেন গ্রহণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ও øায়ু সতেজ হয়। তাছাড়া ব্যায়ামের ফলে বিশ্রামকালীন হƒৎস্পন্দনের মাত্রা কম হয়। হƒৎপিণ্ডের সঙ্কোচন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, হাড়ে ক্যালসিয়াম জমা হওয়ায় বৃদ্ধ ব্যক্তিদের হাড়ের ভঙ্গুরতা হ্রাস পায়। মাংসপেশি ও জোড়ার অচলতাই অস্টিও-আর্থ্রাইটিস রোগ সৃষ্টি হওয়ার মূল কারণ। এসব কারণে ব্যায়াম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মেদবহুলতায় ব্যায়াম
যাদের শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমে গেছে এই পরিস্থিতি সমাধানে ডায়েট ও এক্সারসাইজ কম্বিনেশন সবচেয়ে ভালো। হাঁটা হচ্ছে সবার সেরা ব্যায়াম। শুধু মেদবহুল শরীরেই নয়, স্বাভাবিক আপাত সুস্থ শরীরেও ব্যায়ামের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। এতে মাংসপেশি সতেজ, সবল থাকবে, মন ফুরফুরে থাকবে, উদ্যমতা থাকবে।

ব্যায়াম করার নিয়ম-কানুন
যে কোন বয়সী লোকই ব্যায়াম শুরু করতে পারেন। কিন্তু মধ্যবয়সী কেউ ব্যায়াম শুরু করার আগে বা ব্যায়ামের মাত্রা বৃদ্ধি করার আগে নিুবর্ণিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
১. আপনার ক্ষেত্রে ব্যায়াম করতে কোন বাধা আছে কিনা সেটা জানার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
২. প্রথমেই বেশি মাত্রায় ব্যায়াম শুরু করবেন না। স্বল্পকালীন সময় ব্যায়াম শুরু করে ধীরে ধীরে মাত্রা বাড়াতে খাকুন।
৩. নিয়মিতভাবে কমপক্ষে সপ্তাহে ৩ দিন ৩০ মিনিট সময় ধরে ব্যায়াম করবেন। কিন্তু সামান্য অসুখ হলেও ব্যায়ামে বিরতি দেবেন।
৪. হঠাৎ করে ব্যায়াম শুরু করবেন না বা হঠাৎ করে ব্যায়াম ছাড়বেন না। ব্যায়ামের আগে ও পরে ১০ মিনিট ধীরে হাঁটুন বা হালকা খালিহাতের ব্যায়াম করুন।

তিন ধরনের ব্যায়াম
১. সহনশীলতা বৃদ্ধির জন্য ব্যায়ামÑ রক্ত সঞ্চালন ও শ্বাসতন্ত্রের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
২. শক্তি বৃদ্ধির জন্য ব্যায়ামÑ পেশির শক্তি বৃদ্ধি করে
৩. সম্প্রসারণকারী ব্যায়ামÑ জোড়ার আড়ষ্টতা প্রতিরোধ করা যায়

বয়স্কদের জন্য ব্যায়াম
বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য জোরে হাঁটাই হচ্ছে সহনশীলতা বৃদ্ধির জন্য সবচেয়ে ভালো ব্যায়াম। সাঁতার কাটা নিশ্চল সাইকেল চালানো ইত্যাদিও করা যেতে পারে। এ ধরনের ব্যায়াম একটানা ৩০ মিনিট কাল ধরে সপ্তাহে ৩ থেকে ৫ দিন করতে হবে। পেশির শক্তি বৃদ্ধিকারী ব্যায়াম সপ্তাহে ৩-৪ দিন করতে হয়। এজন্য ১/২ সের ভার উত্তোলন শুরু করা যায়। খালি হাতের বিভিন্ন ব্যায়ামের সাহায্যেও পেশির শক্তি বৃদ্ধি করা যায়।
হঠাৎ করে যেমন ব্যায়াম শুরু করা অনুচিত তেমনি হঠাৎ করে ব্যায়াম ছাড়াও যাবে না। ব্যায়াম শেষ করার পর ১০ মিনিট ধীরে ধীরে হাঁটতে হবে। অর্থাৎ ১০ মিনিট ধীরে হেঁটে ৩০ মিনিট দ্রুত হাঁটতে হবে, তারপর আবার ১০ মিনিট ধীরে হাঁটতে হবে। কিছুদিন ব্যায়াম করে কিছু সুফল পাওয়ার পর ব্যায়াম ছেড়ে দিলে আবার পূর্বাবস্থায় ফিরে যেতে হবে। সেজন্য সপ্তাহে কয়েক দিন নিয়মিতভাবে ব্যায়াম করতে হবে।

লেখক : ডা. মালিহা শিফা
লেকচারার, এনাম মেডিকেল কলেজ

Exit mobile version