স্বাস্থ্যকর আহারে নির্বিঘ্ন রোজা

সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য সুষম আহার প্রয়োজন। এজন্য প্রতিদিনই যাতে সুষম খাবার খাওয়া হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। রমজান মাসে অনেকেই এই সত্যটি ভুলে যান। তাদের ধারণা থাকে যে, সারা দিন উপবাস করতে হয়। তাই বেশি বেশি খাবার খাওয়া উচিত। আসলে তা নয়। যত বেশি খাবার খাওয়া হবে, ততই এর কুফল ভোগ করতে হবে। প্রয়োজনের তুলনায় ইফতার বা সেহরিতে বেশি খাবার খেলে ক্ষুধার ভাব বেশি হয়। কিন্তু যদি পরিমিত পরিমাণে খাওয়া হয়, তাহলে ক্ষুধা অনুভূত কম হয়। এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে। শুধু পেট খালি থাকার জন্যই ক্ষুধার ভাব হয় না। বিশেষজ্ঞদের মতে, পাকস্থলিতে চর্বির উপস্থিতিই এর কারণ। পেটে চর্বির স্তর বেশি থাকলেই ক্ষুধার ভাব বেশি টের পাওয়া যায়। অপরদিকে চর্বি কম থাকলে ক্ষুধাও কম লাগে। আসলে চর্বিযুক্ত খাবারই ক্ষুধাবোধ বাড়িয়ে দেয়। উপবাস করার সময় দেহে ফ্যাটি এসিডের মাত্রা বেড়ে যায়। এ ফ্যাটি এসিড আসে আমরা যেসব খাবার খাই তার চর্বির অংশ থেকে। অর্থাৎ ক্ষুধার সঙ্গে চর্বির একটি নিবিড় যোগসূত্র রয়েছে। খাবার বেশি বেশি খেলে ওজনাধিক্য, গ্যাসট্রাইটিস, বদহজম, ডায়াবেটিস ইত্যাদি হতে পারে।

রমজানের সময় তিনবার খাবার খাওয়া হয়। যেমনÑ ইফতার, সন্ধ্যা রাতে ও সেহরিতে। অন্যান্য দিনের পাঁচ বেলার খাবার এ তিনবারে খেতে হয়।

ইফতার
রোজার প্রধান আকর্ষণ হল ইফতার। সারাদিনের উপবাসের পর সামর্থ্য অনুযায়ী মানুষ ইফতারের আয়োজন করে থাকে। এ ইফতার হওয়া উচিত পুষ্টিকর, স্বাস্থ্যসম্মত ও রুচিকর। শরবত ইফতারের প্রথম আহার। সারাদিন রোজা রাখার ফলে মানুষের দেহে পানিশূন্যতা এবং প্রস্রাবে সংক্রমণ দেখা দেয়। দেখা যায় আমরা ক্ষুধায় যতটা না কাতর হই, তার চেয়ে বেশি হই পিপাসায়। গরমের দিনে পিপাসা আরও প্রবল হয়। বোধকরি এ থেকেই ইফতারের প্রথম খাবার হিসেবে শরবতের প্রচলন হয়েছে। বিভিন্নভাবে শরবত তৈরি করা যায়। যেমনÑ ফলের রস, ইসুবগুলের ভুসি, তোকমা, দুধ, দই, বেল, লেবু, তেঁতুল ইত্যাদি দিয়ে। অনেকে আবার চিড়া ভিজিয়ে মিহি করেও শরবতের মতো করে খান। যদি কারও ডায়াবেটিস থাকে, তাহলে শরবতে চিনি ও গুড় বাদ দিতে হবে। তারা বিকল্প চিনি দিয়েও শরবত করে খেতে পারেন। এছাড়া ডাবের পানিও ইফতারে সংযোজন করা যাবে। ইফতারে সাধারণত খাওয়া হয় ছোলা, মুড়ি, পেঁয়াজু, শাকের বড়া, আলুর চপ, বেগুনি, ফ্রায়েড রাইস, নরম খিচুড়ি, চিড়া, নুডুলস, ফল, হালিম, জিলাপি ইত্যাদি। দেখা যাচ্ছে মুড়ি ও ফল ছাড়া বাকি সবই ক্যালরিবহুল। এ কারণে প্রতিদিন আট-দশটি পদ না খেয়ে চার-পাঁচটি পদ দিয়ে ইফতার করতে পারেন। তা না হলে শুধু ইফতারিতেই সবটুকু ক্যালরি গ্রহণ করা হয়ে যাবে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে এর বেশিও হতে পারে।
যদি কারও কিডনির সমস্যা থাকে কিন্তু রোজা রাখতে চান তাদের ক্ষেত্রে ডালের তৈরি সব খাবারই বাদ দিতে হবে। তারা মুড়ি, চিড়া এবং চালের গুঁড়া ময়দা, সাগু, সুজি ইত্যাদি দিয়ে তৈরি করা নাস্তা খেতে পারেন। ওজন বেশি থাকলে যতটা সম্ভব কম তেলের ইফতারিই প্রয়োজন। যাদের আলসার আছে বা গ্যাসট্রাইটিসের সমস্যা আছে, তাদের শক্ত খাবার এবং ডুবো তেলে ভাজা খাবার বাদ দিতে হবে। তাদের উচিত হবে নরম খাবার যেমনÑ চিড়া, নরম খিচুড়ি, ঘুগনি, নুডুলস এ ধরনের খাবার খাওয়া।

সন্ধ্যা রাত ও সেহরির খাবার
এরপর আসে সন্ধ্যা রাত ও সেহরির খাবার। সন্ধ্যা রাতের খাবারের পরিমাণ হবে অন্য দিনের রাতের খাবারের সমপরিমাণ। আর সেহরির খাবার হবে অন্য দিনের দুপুরের খাবারের সমপরিমাণ। তবে সেহরিতে খুব গুরুপাক ও অতিভোজন রোজা রাখায় ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। কারণ অতিভোজনে অনেক সময় ডায়রিয়া, পেটব্যথা, বমি, মাথা ধরা ইত্যাদি দেখা যায়। মোটকথা, রোজায় যাই খাওয়া হোক না কেন, সেগুলো হতে হবে জলীয়, সহজপাচ্য, হালকা মশলাযুক্ত ও সুষম। তবে দোকানের কেনা ইফতারির চেয়ে বাড়ির তৈরি ইফতারি অনেক বেশি সাশ্রয়ী ও স্বাস্থ্যকর। শেষ কথা স্বাস্থ্যকর আহার করুন, নির্বিঘেœ রোজা রাখুন।

আখতারুন নাহার আলো
প্রধান পুষ্টি কর্মকর্তা, বারডেম হাসপাতাল

Exit mobile version