জেনে রাখুন, সুস্থ থাকুন

চিকিত্সকের কাছে যাওয়ার আগে…

রোগী দেখা শেষ। সমস্যা শুনে ব্যবস্থাপত্র লিখে দিয়েছেন চিকিত্সক। রোগী চলেও গেছে কক্ষের বাইরে। নতুন রোগী ঢুকে কেবল বসেছে চেয়ারে। এ সময় পুরোনো ওই রোগী আবার দরজার ফাঁক দিয়ে মাথা গলিয়ে লজ্জিত গলায় বলল, ‘সরি ডক্টর, একটা কথা বলতে ভুলে গিয়েছিলাম…।’ ঘটনা বিরল নয়। বরং প্রতিদিনই চিকিত্সকেরা এ ধরনের ঘটনার মুখোমুখি হচ্ছেন। রোগী হিসেবে আপনিও […]

Published

on

রোগী দেখা শেষ। সমস্যা শুনে ব্যবস্থাপত্র লিখে দিয়েছেন চিকিত্সক। রোগী চলেও গেছে কক্ষের বাইরে। নতুন রোগী ঢুকে কেবল বসেছে চেয়ারে। এ সময় পুরোনো ওই রোগী আবার দরজার ফাঁক দিয়ে মাথা গলিয়ে লজ্জিত গলায় বলল, ‘সরি ডক্টর, একটা কথা বলতে ভুলে গিয়েছিলাম…।’

ঘটনা বিরল নয়। বরং প্রতিদিনই চিকিত্সকেরা এ ধরনের ঘটনার মুখোমুখি হচ্ছেন। রোগী হিসেবে আপনিও নিশ্চয় এ পরিস্থিতিতে পড়েছেন। চিকিত্সকের কাছ থেকে ব্যবস্থাপত্র নিয়ে বের হয়ে এসেছেন অথবা হয়তো বাড়িই ফিরে এসেছেন। আপনার মনে পড়ল, ‘ওহো, সবচেয়ে জরুরি কথাটাই তো বলা হলো না’ বা ‘আহ্হা, ওই কথাটিও তো জানানো উচিত ছিল’।

ফলে চিকিত্সকের পরামর্শ নিয়ে আপনি খুব একটা সন্তুষ্ট হতে পারলেন না।
একটু প্রস্তুতি নিলেই কিন্তু এ ধরনের সমস্যা এড়ানো যায়। চিকিত্সকের কাছে পরামর্শের জন্য যাওয়ার আগে কিছুটা প্রস্তুত হয়ে নিন, যাতে তাঁর কাছ থেকে সর্বোচ্চ উপকারটা আপনি নিয়ে আসতে পারেন।

সমস্যার তালিকা তৈরি করুন
চিকিত্সকের কাছে যাওয়ার আগে আপনি তাঁকে কী কী বলতে চান বা তিনি আপনার কাছে কী কী জানতে চাইবেন, এর উত্তরের একটি তালিকা তৈরি করে ফেলুন। যেমন—আপনি হয়তো মাথাব্যথার জন্য পরামর্শ নিতে চাইছেন।

সে ক্ষেত্রে আপনার চিকিত্সক জানতে চাইবেন, মাথাব্যথা কত দিন ধরে হচ্ছে, কোন সময়ে বেশি হচ্ছে, কোন সময় শুরু হয়, কতক্ষণ ধরে ব্যথা থাকছে, এই ব্যথা আপনার জীবনাচরণের ওপর কীভাবে প্রভাব ফেলছে ইত্যাদি। মনে রাখবেন, নির্দিষ্ট বিষয়গুলোর একটি তালিকা যত সংক্ষিপ্ত ও কম কথায় গোছানো হয়, ততই ভালো।

Advertisement

সঙ্গে নিন পুরোনো ব্যবস্থাপত্র ও রিপোর্ট
আপনি হয়তো একই সমস্যার জন্য বা ভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী কোনো রোগের জন্য চিকিত্সকের পরামর্শ নিয়েছিলেন। এখন চিকিত্সকের কাছে যাওয়ার আগে সেসব চিকিত্সার ব্যবস্থাপত্র, গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাগজপত্র সঙ্গে নিন। দীর্ঘস্থায়ী রোগ যেমন—উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস প্রভৃতির ক্ষেত্রে এগুলো গুরুত্বপূর্ণ। আপনার চিকিত্সা-সংশ্লিষ্ট সব কাগজপত্রের একটি করে ফটোকপি নিজের কাছে রাখুন।

জেনে রাখুন আপনার বংশ-লতিকা
কোনো কোনো রোগের সঙ্গে জেনেটিক কারণ সম্পর্কযুক্ত। রোগের ভবিষ্যত্ ও চিকিত্সা পরিকল্পনার জন্য এ বিষয়টি জানা জরুরি।

প্রায়ই চিকিত্সকেরা জিজ্ঞেস করে থাকেন, আপনার আত্মীয়ের মধ্যে কেউ ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ কিংবা ক্যানসার রোগাক্রান্ত ছিলেন কি না। এ তথ্যগুলো মা-বাবা বা নিকটাত্মীয়ের কাছ থেকে আগেভাগেই জেনে নিন।

পোশাক হতে হবে উপযোগী
অনেক ক্ষেত্রেই শারীরিক পরীক্ষার প্রয়োজন পড়ে থাকে। এ ব্যাপারেও পূর্বপ্রস্তুতি প্রয়োজন। ঢিলেঢালা পোশাক পরুন, যাতে সহজেই চিকিত্সক আপনাকে পরীক্ষা করতে পারেন। দ্রুত খোলা ও পরা যায়, এমন পোশাক পরে যাওয়াই ভালো। ফুলহাতা বা আঁটসাঁট জামা পরলে রক্তচাপ মাপার ক্ষেত্রে অনেক সময় অসুবিধা হয়।

সঙ্গে নিন নিকটজনকে
কোনো বন্ধু বা আত্মীয়কে সঙ্গে নিন। চিকিত্সকের সঙ্গে কথা বলার সময় ভুলে যাওয়া কোনো বিষয় মনে করিয়ে দিতে বা কোনো বিষয় চিকিত্সকের কাছ থেকে ভালোভাবে বুঝে নিতে বন্ধু বা আত্মীয়ের সাহায্য নিতে পারেন। চিকিত্সকের কাছে যাওয়া এবং তাঁর সঙ্গে কথা বলাটাই অনেকের কাছে উদ্বেগ-উত্কণ্ঠার বিষয়। নিকটজনের সঙ্গ ওই উদ্বেগ অনেকখানিই প্রশমিত করে রাখতে পারে। খেয়াল রাখবেন, যাঁকে সঙ্গে নিচ্ছেন, তিনি যেন আপনার ঘনিষ্ঠ এবং আপনার রোগ সম্পর্কে সম্যক ওয়াকিবহাল থাকেন।

Advertisement

একটা গোপন কথা ছিল বলবার…
হোক তিনি চিকিত্সক, তবুও তো আপনার কাছে একদমই অপরিচিত একজন মানুষ। অপরিচিত একজন মানুষের সামনে নিঃসংকোচে সব কথা বলা আসলেই বেশ কঠিন। মনে রাখবেন, আপনার সুষ্ঠু চিকিত্সার স্বার্থে কোনো তথ্যই গোপন করা উচিত নয়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, রোগী তার ধূমপান বা মদপানের বিষয়টি গোপন করে যেতে চায় বা বিষয়টি তত গুরুতর নয় বলে দেখাতে চায়। এ বিষয়টি একদমই অনুচিত। চিকিত্সককে আপনি খুশি করতে যাচ্ছেন না, যাচ্ছেন আপনার সমস্যার সমাধান জানার জন্য। এ ক্ষেত্রে ‘ডাক্তার কী মনে করবেন’ ভেবে অস্বাস্থ্যকর জীবনাচরণের কথা গোপন রাখা উচিত নয়।

ভালো করে বুঝে নিন পরামর্শ
আপনার চিকিত্সক আপনাকে কী পরামর্শ দিচ্ছেন, তা ভালো করে শুনে নিন। বুঝতে না পারলে আবার জিজ্ঞেস করুন। নতুন কোনো পরামর্শপত্র দেওয়া হলে—ওষুধের নাম, কখন কীভাবে খেতে হবে ভালো করে বুঝে নিন।

আপনার রোগ সম্পর্কে জানুন
এই যুগে আপনার অসুখ সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য চিকিত্সকই একমাত্র মাধ্যম নন। অনেক ব্যস্ত চিকিত্সকের চেম্বারে সহকারী থাকেন। চিকিত্সকের ব্যস্ততা বেশি হলে তাঁর সহকারীর কাছ থেকে আপনার রোগ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করুন।

ইন্টারনেটের মাধ্যমেও আপনি রোগসংক্রান্ত তথ্যাবলি জানতে পারেন। তবে এ ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। হাজারো তথ্যের ভিড়ে আপনি বিভ্রান্ত হতে পারেন। এ জন্য চিকিত্সা-সংশ্লিষ্টদের পরামর্শমতো এবং নির্ভরযোগ্য ওয়েবসাইটে দেখুন। দিন বদলে যাচ্ছে, আপনিও নিশ্চয়ই আধুনিক হয়ে উঠছেন জীবনের সর্বক্ষেত্রে। এখানেই বা আপনি পিছিয়ে থাকবেন কেন? আপনি রোগী? তো হয়ে উঠুন স্মার্ট রোগী! চিকিত্সকের কাছ থেকে আদায় করে নিন সর্বোচ্চ সহায়তা।

Advertisement

Trending

Exit mobile version