জেনে রাখুন, সুস্থ থাকুন

সাপে কাটলে ভুলেও এই প্রচলিত ভুলগুলো করবেন না

Published

on

গ্রামাঞ্চলে সব সময় কমবেশি সাপের আতঙ্ক থাকে। বর্ষা মৌসুমে এটি আরও বেড়ে যায়। এ সময় যাঁরা বনে-পাহাড়ে ঘুরতে যান, তাঁদেরও সাপে কামড়াতে পারে। শহরে বিচ্ছিন্নভাবে সাপে কাটার রোগী পাওয়া যায়। সাপে কাটলে বেশির ভাগ মানুষ ঘাবড়ে যান। ভয় কাজ করলেও এ সময় ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি সামাল দেওয়া দরকার।

সাপে কামড়ালে যা করবেন না
১. সাপে কামড়ালে একটি ভুল ধারণার বশবর্তী হয়ে অনেকে প্রথমেই কামড়ের স্থানে শক্ত বাঁধন বা গিঁট দিয়ে ফেলেন। অনেকে শক্ত দড়ি দিয়ে বাঁধেন। এর পেছনে ধারণা হলো, বিষ এতে ছড়িয়ে পড়তে পারবে না। আসলে এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। বরং এ রকম শক্ত করে বেঁধে ফেলায় জায়গাটিতে রক্ত চলাচলে বাধার সৃষ্টি হয়। আর রক্ত চলাচলের অভাবে টিস্যুতে পচন শুরু হতে পারে।

২. আরেকটি ভুল অনেকে করেন, কামড়ানো স্থানে ব্লেড বা ছুরি দিয়ে কাটাকাটি করেন। তারপর সেখান থেকে চিপে চিপে রক্ত বের করার চেষ্টা করেন। বিষ বের করার জন্য এ রকমটি করেন বলে তাঁরা মনে করেন। এ রকম অস্বাস্থ্যকরভাবে কাটাকাটির কারণে ইনফেকশন হতে পারে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে।

৩. অনেকের ধারণা, আক্রান্ত স্থানে মুখ লাগিয়ে চুষে বিষ বের করলে রোগী ভালো হয়ে যাবেন। এরও কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। সাপের বিষ একবার শরীরে ঢুকে গেলে, রক্ত বা লসিকার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেটি চুষে বের করা সম্ভব নয়। কোনো অবস্থায়ই আক্রান্ত স্থানে মুখ দেওয়া উচিত নয়। বরং যিনি মুখ দেবেন, তাঁর ক্ষতি হবে।

৪. গ্রামাঞ্চলে সাপে কামড়ালে প্রথমেই আক্রান্তকে সাপুড়ে বা ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁরা যেসব চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার করেন, তার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। এতে সঠিক চিকিৎসা নিতে দেরি হয়। ফলে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ে। অনেক সময় দেখা যায়, তাঁরা ভেষজ ওষুধ, লালা, পাথর, উদ্ভিদের বীজ, গোবর ইত্যাদি আক্রান্ত স্থানে ব্যবহার করেন। কেউ কেউ বমি করানোর চেষ্টা করেন। এতে রোগীর অবস্থার কেবল অবনতি হয়।

Advertisement

সাপে কামড়ালে কী করবেন?
১. প্রথমত, আক্রান্ত ব্যক্তিকে আশ্বস্ত করতে হবে। তাকে সাহস দিতে হবে। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, কেবল ভয়ের কারণে সাপে কাটা অনেক রোগী মারা গেছে। যাকে বলে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট। মনে রাখতে হবে, নির্বিষ সাপের কামড়ে মানুষ মারা যায় না, কিন্তু মানসিক আতঙ্কে মারা যেতে পারে। আবার এমনও হতে পারে, বিষধর সাপ শরীরে পর্যাপ্ত বিষ না–ও ঢুকিয়ে দিতে পারে। এ কারণে ভয় না পেয়ে জরুরি চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

২. আক্রান্ত স্থান সাবান দিয়ে আলতোভাবে ধুতে হবে। ভেজা কাপড় দিয়ে আলতোভাবে মুছতে হবে।

৩. আক্রান্ত অঙ্গ অবশ্যই স্থির রাখতে হবে। বেশি নড়াচড়া যেন না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আক্রান্ত অঙ্গ ব্যান্ডেজের মাধ্যমে একটু চাপ দিয়ে পেঁচাতে হবে। ত্বকের সঙ্গে শক্তভাবে লেগে থাকে, যেমন ঘড়ি, অলংকার, তাবিজ, এগুলো রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে। সেগুলো খুলে ফেলতে হবে।

৪. কোন সাপ কামড় দিয়েছে, সেটা জানা জরুরি। কিছু লক্ষণ দেখলে সাপটি বিষধর কি না, বোঝা যায়। অনেক সময় কামড়ানোর পরে আশপাশের মানুষ সাপটিকে মেরে ফেলে। সে ক্ষেত্রে রোগীর সঙ্গে মরা সাপটিও হাসপাতালে নিয়ে আসা উচিত। কারণ, একজন চিকিৎসক সাপের চেহারা দেখে বুঝতে পারেন, সেটি বিষধর কি না। সাপটি মারা গেছে, সেটি নিশ্চিত হয়ে, তারপর সেটি হাত দিয়ে না ধরে লাঠি দিয়ে ধরে নিয়ে আসা উচিত। অনেক সময় আধমরা সাপ যিনি ধরে নিয়ে আসছেন তাঁর ক্ষতি করতে পারে।

৫. রোগীকে আধশোয়া অবস্থায় রাখা ভালো। রোগী শ্বাস না নিলে মুখ দিয়ে শ্বাস দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

Advertisement

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে।

Trending

Exit mobile version