কিডনি রোগীরা কীভাবে রোজা রাখবেন?

কিডনি ফেইলিউর বা কিডনি বিকল দুই ধরনের হয়। একটিকে বলা হয় হঠাৎ কিডনি ফেইলিউর এবং অপরটি দীর্ঘমেয়াদি রোগ। এই দীর্ঘমেয়াদি কিডনি সমস্যা ক্রনিক কিডনি রোগ বলা হয়। আর তিন মাসের কম সময় যদি ফেইলিউর থাকে, তাকে হঠাৎ কিডনি ফেইলিউর বা একিউট কিডনি ফেইলিউর বলে। আর দীর্ঘমেয়াদি হলো, যেটা তিন মাসের বেশি সময় ধরে থাকে।

অনেকেই প্রশ্ন করেন কিডনি রোগীরা রোজা রাখতে পারবেন কি না? রোজার মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগীরা রোজা রাখতে পারবেন, তবে তাদের বিশেষ কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ক্রনিক কিডনি রোগের ক্ষেত্রে সাধারণত যারা ষ্টেজ ১, ২, ৩ পর্যন্ত আছেন তাঁরা মোটামুটি স্বাচ্ছন্দ্যেই রোজা রাখতে পারবেন। তবে ইফতারে প্রচুর পরিমাণে পানি বা লবণ জাতীয় খাবার খাওয়ার নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে। সাধারণত ইফতারে আমরা ডাল জাতীয় খাবার যেমন- ছোলা, পেঁয়াজু বা বেসন জাতীয় খাবার বেশি খেয়ে থাকি। সেক্ষেত্রে ডাল বা বিচি জাতীয় খাবারগুলো রোগীকে সম্পূর্ণ পরিহার করে চলতে হবে। এবং রোগির কিডনির অবস্থা অনুযায়ী খাবারের ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ পুষ্টিবিদের সাথে পরামর্শ করে তাঁর জন্য উপযোগী খাবারগুলো নির্ধারণ করে নিতে হবে। সাধারণত এধরনের কিডনি রোগীরা ইফতারিতে দইচিঁড়া খেতে পারেন। মুড়ি খাওয়া যেতে পারে। নুডলস খাওয়া যেতে পারে। সেমাই খাওয়া যেতে পারে। এমনকি ভাত বা রুটিও খেতে পারে।

কিডনি রোগীর একপর্যায়ে ডায়ালাইসিসের প্রয়োজন হয়। ডায়ালাইসিসের রোগীরা রোজা রাখতে পারবেন কি না এটা নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। তবে সাধারণভাবে ডায়ালাইসিসের রোগীও রোজা রাখতে পারবেন। তবে যেদিন ডায়ালাইসিস করা হবে সেদিন না। তার আগের দিন বা পরের দিন রাখতে পারবেন। সেক্ষেত্রে অবশ্যই খাবারদাবারে বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে। পানি কতটুকু খাবেন সেদিকে খেয়াল রাখবেন, লবণ বা পটাশিয়ামযুক্ত খাবার খাওয়ার বিষয়ে খেয়াল রাখবেন এবং তাঁর দেহের যে আমিষের চাহিদা রয়েছে সেটা যেন পূরণ হয় সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। ডায়ালাইসিসের রোগীরা ইফতারিতে ফল হিসেবে আপেল, পেয়ারা, নাশপাতি খেতে পারবেন, তাছাড়া আমিষের চাহিদা পূরণে প্রতিদিনের খাবারে মাছ, মুরগীর মাংস ও ডিম খেতে পারবেন এবং সবজি হিসেবে কাঁকরোল, পেপে, চিচিংগা, ধুন্দল, পটোল ইত্যাদি খেতে পারেন।

মনে রাখতে হবে রোগী ভেদে কিডনির পথ্য নির্ধারণে কিছুটা ভিন্নতা থাকে। কেননা রক্তে ইলেকট্রোলাইটসের পরিমাণ, হিমোগ্লোবিনের মাত্রা, ইউরিয়া ও ইউরিক এসিডের পরিমাণ, রক্ত ও ইউরিনে এলবুমিনের পরিমাণ এবং ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা ভেদে একজন ডায়ালাইসিস রোগীর জন্য পথ্য নির্ধারণ করতে হয়। সে ক্ষেত্রে রোজা রাখতে হলে অবশ্যই একজন ক্লিনিক্যাল ডায়েটেশিয়ানের পরামর্শ নেওয়া একান্ত জরুরি।

পুষ্টিবিদ সাজেদা কাশেম জ্যোতি
ক্লিনিক্যাল ডায়েটিশিয়ান ও নিউট্রিশনিস্ট,
নির্বাহী পরিচালক, বিএডিএন
সাবেক রেনাল পুষ্টিবিদ (সাবেক) গণস্বাস্থ্য ডায়ালাইসিস সেন্টার, ঢাকা

Exit mobile version