Site icon স্বাস্থ্য ডটটিভি

আল্ট্রাসনোগ্রাফি কেন প্রয়োজন, কখন করতে হয়

অধিকাংশ গর্ভবতী মায়েরা গর্ভাবস্থার ৮ থেকে ৯ মাসের দিকে আসেন আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে। এতো দেরিতে কেন আসলেন প্রশ্ন করলে বেশিরভাগেরই উত্তর- ‘কি বাবু সেটা তো এখনই ভালো বুঝা যাবে।’ আবার নিয়মিত ফলোআপে আসা রোগীকে যদি ৩ মাসের সময় বলি একটা আল্ট্রাসনো করে ফেলেন। উত্তর আসবে – এখন না। ৭/৮ মাসের সময় করাবো।

বিষয়টি এমন হয়ে দাড়িয়েছে আল্ট্রাসনোগ্রামের একমাত্র লক্ষ্য গর্ভের সন্তানের লিঙ্গ জানা। কিন্তু সত্যিই কি তাই? রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে আল্ট্রাসনোগ্রাফি এমন এক প্রযুক্তি, যেটার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ডাক্তার পর্দার (স্ক্রিন) ছবি বিশ্লেষন করে রোগ নির্ণয় কিংবা গর্ভস্থ শিশুর অবস্থা বা অবস্থান নির্দেশ করতে সক্ষম হন।

এই প্রযুক্তির মাধ্যমে গর্ভস্থ শিশুর লিঙ্গ নির্ধারণ, গঠন-প্রকৃতিসহ বিভিন্ন বিষয় জানা যায়। গর্ভকালীন যেকোনো জরুরী পরিস্থিতিতে আল্ট্রাসনোগ্রাফি একজন চিকিৎসকের জন্য সর্বোত্তম ও নির্ভরযোগ্য ডাক্তারি পরীক্ষা পদ্ধতি। আল্ট্রাসনোগ্রাফির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অন্যান্য রেডিওলজিকাল পরীক্ষার তুলনায় কম এবং এটা বেশ নিরাপদও বটে।

অনেকে প্রশ্ন করেন চিকিৎসকার যে কয়েকবার আল্ট্রাসনোগ্রাম করায়, তার কি প্রকৃতপক্ষেই দরকার আছে? নাকি সব টাকা খাওয়ার ধান্দা? আসুন জেনে নেই গর্ভকালীন সময়ে আল্ট্রাসনোগ্রাম করার উদ্দেশ্য। অন্তত ৩ বার আল্ট্রাসনোগ্রাম করা উচিত।

প্রথম আল্ট্রাসনোগ্রাম করাতে হবে ৩মাসের মধ্যে। দ্বিতীয় মাসে করানোই সবচেয়ে ভালো। এসময় আমরা জানতে পারবো-
* রোগী আসলেই গর্ভবতী কিনা।
* অনেক সময় দেখা যায় প্রস্রাব টেস্টে পজিটিভ দেখালেও আসলে গর্ভে সন্তান নেই। অনেক সময়ই শুধুমাত্র বাচ্চার থলি আসে কিন্তু বাচ্চা থাকেনা।
* বাচ্চা জরায়ুতে আছে নাকি অন্য কোথাও। জরায়ুতে না থেকে অন্য কোথাও থাকাকে বলে এক্টপিক প্রেগন্যান্সি। এ ক্ষেত্রেও প্রস্রাব টেস্ট পজিটিভ আসে। কিন্তু বাচ্চা বেশিদিন বাঁচে না।
* বাচ্চা কি গর্ভে একটি নাকি একের অধিক
* অনেকে মাসিকের তারিখ মনে রাখতে পারেনা। এসময়ই বাচ্চার বয়স জানা যায়।
* মায়ের জরায়ুতে কোন সমস্যা আছে কিনা। সমস্যা থাকলে অনেক সময় গর্ভপাত হয়ে যায়।

দ্বিতীয়বার করাতে হবে ৫ম মাসে। এসময় জানা যাবে-
* বাচ্চার কোন জন্মগত ত্রুটি আছে কিনা। আগে থেকে জানা থাকলে সে অনুযায়ী বাচ্চার ডেলিভারির পরপরই চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যায়।
* প্লাসেন্টা যেটা অনেকেই ফুল নামে জানে তার অবস্থান কোথায়। প্লাসেন্টার অবস্থানের উপর ডেলিভারি কতটা নিরাপদ হবে বুঝা যায়। অনেক মা ই ডেলিভারির পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মারা যায়। তার কারণ হলো আগে থেকে প্লাসেন্টার অবস্থান না জেনে ব্যবস্থা নিতে না পারা।
* ডেলিভারির ডেট কবে তা জানা যায়।
* বাচ্চা জীবিত কিনা

তৃতীয় বা শেষবার করতে হয় ৮/৯ মাসে। এ সময় জানা যায়-
~ বাচ্চার ওজন
~ জরায়ুতে পানি কতটা আছে। পানি কম থাকলে বাচ্চা প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও অক্সিজেন পায়না।এতে বাচ্চার নির্দিষ্ট ডেলিভারির তারিখ পর্যন্ত বেচে থাকা কঠিন। তাই বলে অতিরিক্ত পানি থাকাও ভালোনা।
~প্লাসেন্টাতে কোন সমস্যা আছে কিনা
~ বাচ্চার পজিশন। সাধারণত মাথা নিচের দিকে থাকলে নরমাল ডেলিভারি করা সহজ।
দয়া করে শুধুমাত্র গর্ভের সন্তান ছেলে না মেয়ে জানার জন্য আল্ট্রাসনোগ্রাম করাবেন না। আল্লাহ যা দিয়েছেন তা তো আর বদলাতে পারবেন না। বরং যা জানতে পারলে মা ও সন্তানের সুস্থ থাকা আরেকটু নিশ্চিত করতে পারবেন তা জানুন।
মায়ের যত্ন নিন। একজন সুস্থ মাই জন্ম দিবেন একজন সুস্থ বাচ্চা।

আরও জেনে রাখুন
মোটকথা হলো, আল্ট্রাসনোগ্রাম করানোর আগে রোগীকে কখনো ভরা পেট কিংবা খালি পেট, কখনো পূর্ণ মূত্রথলি কিংবা শূন্য মূত্রথলি অবস্থায় থাকতে হয়। প্রয়োজনে কখনো আবার সারারাত খালি পেটে অবস্থায় রেখেও আল্ট্রাসনোগ্রাম করানোর প্রয়োজন হতে পারে।

এজন্য যেটা করবেন, তা হলো আগে থেকেই ডাক্তারের কাছ থেকে ক্লিয়ারলি শুনে নেবেন সবকিছু। যাতে ঠিক সময়ে যেয়ে কোনো সমস্যা তৈরী না হয়। আল্ট্রাসনোগ্রাম করানোর সময় আরো যে ব্যপারে আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে, সেটা হলো আপনার পোষাক। আল্ট্রাসনোগ্রাম করানোর সময় আপনার জন্য উত্তম হবে আরামাদায়ক ও সুতি পোশাক পরা।

ডা. আফরোজা শারমিন
কনসালটেন্ট, সনোলজিস্ট
মেডিনোভা হেলথ সার্ভিস, মিরপুর

Exit mobile version