“হেপাটাইটিস অপেক্ষা করতে পারে না” জনগণকে সচেতন করতে চমৎকার এই প্রতিপাদ্যে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস। বেসরকারি পরিসংখ্যান বলে হেপাটাইটিস থেকে লিভারের জটিলতায় প্রতি বছর প্রায় ২০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। আমাদের দেশে হেপাটাইটিস প্রতিরোধে সচেতন না হলে ভয়াবহ এ রোগের কবলে যে কেউ পড়তে পারে।
২০৩০ সালের মধ্যে হেপাটাইটিস প্রতিরোধ ও নির্মূলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বেশকিছু লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে, পর্যাপ্ত প্রচারের মাধ্যমে সচেতনতা সৃষ্টি এখন বড় লক্ষ্য ।
হেপাটাইটিস কি?
হেপাটাইটিস হচ্ছে লিভারের প্রদাহ, চিকিৎসা বিজ্ঞানে ৫ ধরনের ভাইরাস জনিত হেপাটাইটিস রয়েছে, এ থেকে ই। হেপাটাইটিস এ এবং ই স্বল্পমেয়াদী ও অপেক্ষাকৃত কম ক্ষতিকর হলেও প্রাণঘাতী হচ্ছে হেপাটাইটিস বি এবং সি এর সংক্রমণ। উদ্বেকের বিষয় হচ্ছে বি এবং সি বহনকারীর ১০ জনের ৯ জন জানেনা যে তারা এই নিরব ঘাতক বহন করছে ও অন্যদের ছড়াচ্ছে, যখন শণাক্ত হয় তখন চিকিৎসা পদ্ধতি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে।
আরও শংকার বিষয় হলো রোগের বিস্তার না ঘটা পর্যন্ত বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কোনও নির্দিষ্ট লক্ষণ ধরা পড়ে না, আর তাই ধারনা করা হয় দেশে প্রায় এক কোটির বেশী মানুষ এ রোগে আক্রান্ত। রোগের মাত্রা বাড়লে শরীর দুর্বল, বমি বমি ভাব, পেটব্যথা, শরীর হলুদ বর্ণ ধারণ করা এবং হলুদ প্রস্রাবের মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে, পরবর্তিতে জটিলতা ভয়ংকর হয়ে সিরোসিস বা ক্যান্সারে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়। বেশীরভাগ ক্রনিক হলেও একিউট হেপাটাইটিস রোগীর সংখ্যাও কম নয় ।
কিভাবে ছড়ায় :
হেপাটাইটিস এ এবং ই ভাইরাস খাদ্য ও পানির মাধ্যমে ছড়ায়, যেখান থেকে জন্ডিস হয় ও চিকিৎসকের পরামর্শে সহজেই সুস্হ্য হওয়া যায়।
কিন্তু জটিল হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস মূলত দূষিত রক্তের মাধ্যমে ছড়ায়, এ ছাড়া শিরাপথে মাদক সেবন, অনিরাপদ অস্ত্রোপচার, কান-নাক ফোঁড়ানো, খতনা ও উলকি বা ট্যাটু আঁকার কাজে অনিরাপদ যন্ত্রপাতির ব্যবহার, কিডনি বিকল হওয়া রোগীর ডায়ালাইসিস করানোর সময়, সেলুন, অনিরাপদ ও অরক্ষিত যৌন মিলন, আক্রান্ত গর্ভবতী থেকে গর্ভজাত শিশুর এরোগে আক্রান্তের সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ, একই টুথব্রাশ, শেভিং রেজার, ব্লেড একাধিক ব্যক্তি ব্যবহার অন্যতম।
দাঁতের চিকিৎসায় অনিরাপদ যন্ত্রপাতির ব্যবহার, যেমনটি দেখা যায় অবৈধ ভুয়া চিকিৎসকদের দ্বারা, জীবাণু মুক্ত করনের সঠিক পদ্ধতি না জেনে চিকিৎসা প্রদানের দুঃসাহস থেকে হেপাটাইটিস সহ সংক্রমিত রোগ ছড়াতে পারে। অন্যদিকে রোগীর ব্যবহৃত যন্ত্রাপাতি দ্বারা অসাবধনতা বশত: চিকিৎসক বা সহকারীদের কোথাও কেঁটে গেলেও একই অবস্হা হতে পারে।
সতর্কতা :
হেপাটাইটিস চিকিৎসার বিভিন্ন চমকপ্রদ বিজ্ঞাপনে অবৈজ্ঞানিক পথে অপচিকিৎসার স্বিকার হয়ে জীবন হারানোর সংখ্যা কিন্তু নিছক কম নয়, আবার ঝাড় ফুঁ তেও অনেকে বিশ্বাসী। হেপাটোলজিস্ট চিকিৎসকগণ বলেন হেপাটাইটিস বি অনিরাময় যোগ্য তবে সঠিক সময়ে রোগ শণাক্ত হলে সেটা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্হা আছে। রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে এ রোগ শণাক্ত হয় ও সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসক দ্বারা চিকিৎসা পেলে সম্ভাব্য জটিলতা এড়ানো সম্ভব। আমাদের দেশে এখন লিভারের চিকিৎসা অনেকটাই অধূনিক। এ রোগ প্রতিরোধে ভ্যাকসিন পাওয়া যায়, চিকিক্টসকের পরামর্শে গ্রহণ করা যেতে পারে। ব্যক্তিগত সচেতনতা পারে নীরব ঘাতক হেপাটাইটিসকে নিয়ন্ত্রণ করতে।
ডা: মো: আসাফুজ্জোহা রাজ
প্রতিষ্ঠাতা, রাজ ডেন্টাল সেন্টার, কলাবাগান, ঢাকা।
মোবাইল: ০১৯১১৩৮৭২৯১