কোন ডায়েটিশিয়ান বা পুষ্টিবিদ ভালো? কাকে দেখাবো? এমন প্রশ্ন হরহামেশাই শুনতে হয়। ডায়েটিশিয়ান বা পুষ্টিবিদ নির্বাচনের বিষয়টি নিয়ে একটু আলোচনা করা যাব।
বাংলাদেশের সকল ডায়েটিশিয়ান রাই খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান বিভাগ ( সরকারি বা বেসরকারি) থেকে অনার্স ও মাস্টার্স করে থাকেন! সিলেবাস, বই পত্র, কারিকুলাম যাই বলেন সবি এক। কেউ বাংলা কেউবা ইংরেজি ফলো করে পড়েন ও পরীক্ষা দেন। কেউ অনেক সিনিয়র অনেকদিন ধরে কাজ করছেন কেউবা আনকোরা নতুন জুনিয়র!!! মাস্টার্স এর পরে আরো প্রফেশনাল কোর্স করে অনেকে আরো অভিজ্ঞতা লাভ করে থাকেন। কাজের ক্ষেত্র টা ভিন্ন হলেও কাজ সবার একি অসুস্থ রোগীর পথ্য ব্যবস্থাপনা, বিভিন্ন বয়সে ব্যবস্থাপনা, খাদ্য ব্যবস্থাপনা, ওজন কম বেশি, বিশেষ রোগে খাদ্য কেমণ হবে, মা গর্ভবতী হলে কি হবে, প্রসুতি মায়ের খাবার ইত্যাদি।
তাহলে পার্থক্য কোথায়?
অবশ্যই আছে! অভিজ্ঞতার ঝুলি অনেক বড় একটা অর্জন! আমরা ডাক্তার বা পুষ্টিবিদ বাছাই এর ক্ষেত্ররে সব সময় অভিজ্ঞ প্রাক্টিশনার কেই খুজি। এরপর আসে কমফোর্ট জোন। অনেকে পছন্দ করেন তার ডায়েটিশিয়ান অনেক সময় নিয়ে দেখুক তাকে। তার কথা শুনুক। অনেকে আবার চান নামকরা কাউকে দিয়ে চার্ট করিয়ে নিতে। একেক জনের পছন্দ তাই ভিন্ন। তাই কম্ফোর্টজোন এক হবে না।
সব ডায়েটিশিয়ান একি বই পড়লেও প্রাক্টিস এর জায়গায় বা কাজের জায়গায় ভিন্নতা থাকবেই। তার মানে কেউ কম জানে কেউ অনেক বেশি জানে তেমন নয়। জুনিয়র রা যেমন আপডেটেড থাকে তেমনি সিনিয়র রা অবশ্যই অভিজ্ঞতার দিক থেকে এগিয়ে থাকেন। কাজের স্টাইল ও ভিন্ন থাকে। কিন্তু মেকানিজম কিন্তু ওই একি। সবাই পুষ্টি উপাদান গুলো বিবেচনা করে ক্যালরি হিসাব করে রোগীর হিস্ট্রি নিয়ে কাউন্সেলিং করে চার্ট দেন।
তাহলে আপনি কাকে বাছাই করবেন?
আমার চেম্বার এ রোগী ফরিদপুর থেকেও আসেন মিরপুর থেকেও আসেন। কোন রোগী দূর থেকে আসলে প্রথমেই আমি তাকে পরামর্শ দেই তিনি চাইলে তার নিকটস্থ কোন হাস্পাতাল বা চেম্বার করেন এমণ ডায়েটিশিয়ান এর থেকে পরামর্শ নিতে পারেন। এতো দূর থেকে আসার প্রয়োজন নাই। যাতায়াত যদি কষ্টকর হয় তাহলে রোগী ফলোআপ এ আসার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে এতে সে পরিশ্রম করে চার্ট মেনে যে সুস্থ হচ্ছিল সেই ধারাবাহিতা টা আর বজায় থাকে না। তাই সেবা নিন আপনার নিকটস্থ হাসপাতাল ক্লিনিক বা সেবা কেন্দ্র থেকে।
এরপরেও অনেকে ২/৩ ডায়েটিশিয়ান কে দেখান এর ভেতর যাকে তার ভালো লাগে তার কাছে ই নিয়মিত যান। এটা তার কম্ফোর্টজোন তাই তিনি দূরে বা কাছে হোক তার ভালো লাগার জন্য সেই ডায়েটিশিয়ান কেই খালি দেখাতে চান তাই এইটা ব্যতিক্রম। এটা আমরা ও করি। যেই ডাক্তার এর থেকে আমরা সেবা নিয়ে থাকি তিনি দূরে গেলে আমরা ও প্রয়োজনে দূরে যাই।
অনেক পপুলার ও অভিজ্ঞ ডায়েটিশিয়ান রা রোগীর সিরিয়ালের প্রেশারে ও সময়ের অভাবে একটু দ্রুত দেখেন। হয়তো বা অন্যদের মতো দীর্ঘ সময় নিয়ে শুনতে বা দেখতে পারেন না তখন রোগীরা এসে আমাদের কাছে কম্প্লেইন করেন। প্রশ্ন করি এতো বড় ডায়েটিশিয়ান এর আন্ডারে না থেকে আমাদের কাছে আসলেন কেন? উত্তর সোজাসাপ্টা থাকে” হা উনি অনেক ভালো কিন্তু আমার ভালো লাগে নি আমি মেনে চলতে পারিনি”। এটাই আসলে একজন মানুষের কম্ফোর্টজোন। প্রতি টা মানুষই স্বতন্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। পুথিগত বিদ্যা এক হলেও প্রয়োগের ক্ষেত্রে ভিন্নতা থাকবেই এটাই স্বাভাবিক। তাই প্রত্যেকের আছে নিজস্ব কিছু স্টাইল!
এবার আসি বিশেষজ্ঞ কারা?
একেক বিষয় এ একেক জন অভিজ্ঞ থাকে কেউ ভালো অবেসিটি পেশেন্ট দেখেন। কেউ শিশু দের পুষ্টি নিয়ে ভালো কাজ করেন। কেউ বা হার্টের পেশেন্ট। কেউ শুধু কিডনি পেশেন্ট। তার মানে এই নয় তারা অন্য কোন রোগী কে এসেস করে তাকে চার্ট দিতে পারবেন না। সব বিষয় এ পারদর্শিতা অর্জন করেই তার পর একজন ডায়েটিশিয়ান মাঠে নামেন ঢাল তলোয়ার নিয়ে। ডাক্তারি বিদ্যার মতো একজন নিউট্রিশনিস্ট কেও কিন্তু প্রতিনিয়ত পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হয়। আপডেট বিষয় গুলো জানতে হয়। এভাবেই একেক জন বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠেন।
এখন আপনি চাইলে আপনার এলাকার কোন ভালো ডায়েটিশিয়ান কে দিয়ে সহজেই খাবার সংক্রান্ত যে কোন সমস্যার সমাধান করে নিতে পারেন। যদি মনে হয় বিশেষজ্ঞ কাউকে দেখাবেন তাহলে একটু খোজ নিয়ে যান। এখন ডায়েটিশিয়ান মহল সরব। ফেসবুক, টিভি, এম্নকি আপনার জানালার পর্দা খুল্লেও দেখতে পারবেন সেবার এই বাহক কে।
চার্ট দরকার নাই। মনে অনেক প্রশ্ন? ঠিক আছে ডায়েটিশিয়ান এর চেম্বার এ যান! আপনার কি কি জানার আছে শুনে আসুন। পাশের বাসার ভাবীকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলে হয়তো এই সব খাবার নিয়ে সমস্যার উত্তর পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাবি দিবেন সাথে এক কাপ দুধ চা চিনি সহ, তার উপর আবার ওনার দেয়া পরামর্শের গ্যারান্টি কিন্তু নাই । তার চেয়ে ডায়েটিশিয়ান এর কাছে যান রঙ চা বা গ্রীন টি দিলেও সাথে যেই পরামর্শ দিবে তাতে লাইফ রিস্ক নাই। আর এই রকম পরামর্শ দেয়ার জন্য ৯০ ভাগ ই ভিজিট নেন না।
অনেকে আছেন একেক বার একেক ডায়েটিশিয়ান কে দেখান। এটি একটি ভুল প্রক্রিয়া। এতে আপনি নিজের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলবেন। চেষ্টা করবেন একজনের পরামর্শ থেকে ধৈর্য সহকারে চিকিৎসা নিতে। যে কোন চিকিৎসায় সবর গুরুত্বপূর্ণ।
এতো কথার সারমর্ম যদি করতে চাই তাহলে বলতে হয় ৫ টি বিষয় –
১. কাছাকাছি এরিয়া
২. নতুন / অভিজ্ঞ
৩. নিয়মিত সেবা নেয়া
৪. ধৈর্য রাখা
৫. সমস্যার ধরন বুঝে বাছাই।
লেখক: সুমাইয়া সিরাজী, নিউট্রিশনিস্ট এন্ড স্পেশাল এডুকেটর