আবুল খায়ের
ওষুধ প্রশাসনের যানবাহনও নেই। এদিকে জীবন রক্ষাকারী ওষুধের নামে বিষাক্ত কেমিক্যাল সংমিশ্রণে জীবন ধ্বংসকারী, ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধের প্রকাশ্যে চলছে রমরমা বাণিজ্য। এটা দেখার কেউ নেই। পরীক্ষাগারের অবস্থা আরো শোচনীয়। অত্যাধুনিক পরীক্ষাগার নেই। রবিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ওষুধ প্রশাসনে দৈনন্দিন ফাইল ওয়ার্ক করেই কূল পান না কর্মকর্তারা। ইত্তেফাকের এ বিশেষ প্রতিনিধিকে এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ভাইরে আমাদের রক্ষা করার কোন রাস্তা খুঁজে পাচ্ছি না, ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণের খোঁজ রাখবো কখন। এই জরাজীর্ণ অবস্থার মধ্যেও ওষুধ প্রশাসন নিম্নমান ও ভেজাল ওষুধ তৈরি করার দায়ে এ পর্যন্ত ২৬টি এলোপ্যাথিক ওষুধ কোম্পানির লাইসেন্স সাসপেন্ড করেছে।
১৯৮২ সালে ড্রাগ অর্ডিন্যান্স হলেও গত ২৮ বছরে এর আওতায় বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়নি। এরশাদ সরকার শেষ সময়ে ড্রাগ অর্ডিন্যান্সের বিধিমালা করে গেলেও পরবতর্ী সরকার তা বাতিল করে দেয়। এরপর কোন সরকারই ড্রাগ অর্ডিন্যান্সের অধীনে কোন বিধিমালা প্রণয়ন করেনি। অপরদিকে বাজারজাতকৃত ওষুধের নির্ধারিত মূল্য এমআরপি লেখা থাকে।
এই সকল ওষুধের তালিকা নিয়মানুযায়ী গেজেটে প্রকাশিত হওয়ার কথা থাকলেও স্বাধীনতার পর অদ্যাবধি গেজেটে প্রকাশ করার কোন উদ্যোগ নেয়নি প্রশাসন। যার কারণে ওষুধের মূল্য যার যার ইচ্ছামত বৃদ্ধি করে থাকে। এই সকল ওষুধের গুণগত মান নিয়ে আদালতে মামলা হলে ঐ সকল ওষুধের গেজেট নামের তালিকা না থাকায় মামলার ফলাফল হয় শূন্য। ড্রাগ অর্ডিন্যান্স থাকলে তা তলাহীন ঝুড়ি। এলোপ্যাথিক ওষুধের ২৫৮টি কোম্পানির মধ্যে ২০৪টি উৎপাদন করে আসছে। ওষুধ প্রশাসনের মতে এই ২০৪টি কোম্পানি সচল এবং ২৮টি অচল। ২৮টি কোম্পানির উৎপাদন বন্ধ বলে ওষুধ প্রশাসন সূত্রে বলা হয়। এলোপ্যাথিক কোম্পানির মধ্যে ২০টির ওষুধের গুণগত মান ভাল। এই সকল কোম্পানির ওষুধ শুধু দেশে বাজারজাত চলছে তা নয়, বাংলাদেশের বাইরে ৭২টি দেশে রপ্তানি চলছে নিয়মিত। এই ২০টির বাইরে বাকি সব কোম্পানির ওষুধের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ৯৫ ভাগ ওষুধে ভেজাল ও নিম্নমানের এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এ সকল ওষুধ গ্রামাঞ্চলে দেদারসে বাজারজাত করা হয়। ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরি সূত্রে জানা যায়, এ সকল কোম্পানির উৎপাদিত ওষুধে ৫০০ এমজির স্থলে ২০০ থেকে ৩০০ এমজি থাকে ৯০ ভাগ এবং ৩০০ থেকে ৪০০ এমজি থাকে ৯৯ ভাগ ওষুধে। ওষুধের পরিবর্তে আটা ও ময়দা থাকার প্রমাণ পরীক্ষায় পাওয়া যায়। পরীক্ষাগার থেকে নিম্নমান ও ভেজাল ওষুধের তালিকা পাঠালেও তেমন প্রতিকার হয়নি। প্রশাসনের এক শ্রেণীর কর্মকর্তা নিম্নমান ও ভেজাল ওষুধ উৎপাদনকারী কোম্পানি থেকে নিয়মিত মাসোহারা পেয়ে থাকে। এ কারণে বিনা বাধায় চলছে নিম্নমান ও ভেজাল ওষুধের বাণিজ্য। এ্যালোপ্যাথিক ওষুধের নামিদামি কোম্পানিগুলোর নিজেদের গুণগত মানের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে হোমিওপ্যাথিক, ইউনানী, আয়ুর্বেদিক ও হারবাল ওষুধের গুণগত মান নিয়ন্ত্রণে কোন ব্যবস্থা নেই। ওষুধ প্রশাসন শুধু এ সকল কোম্পানি যে ফমর্ুলায় ওষুধ উৎপাদন করে সেই ফমর্ুলা অনুসরণ করে মাত্র। এলোপ্যাথিক উৎপাদিত ওষুধের গুণগত মান নিয়ন্ত্রণের জনবল নেই এবং টেস্টিং ল্যাবরেটরির জরাজীর্ণ অবস্থা। এই অবস্থায় হোমিওপ্যাথিক, আয়ুর্বেদিক ইউনানী ও হারবালের ওষুধের গুণগত মান দেখার সময় নেই বলে এক কর্মকর্তা জানান। ড্রাগ অধ্যাদেশে এই সকল ওষুধকে স্বীকৃতি দেয়া হয়। সরকারি তালিকাভুক্ত হওয়ায় হোমিওপ্যাথিক, আয়ুর্বেদিক, ইউনানী ও হারবাল কোম্পানির পোয়া বারো। ওষুধের নামে কি সব বাজারজাত করে যাচ্ছে তা আলস্নাহ জানে বলে প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান।
ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল কালাম আজাদ বলেন, সীমিত জনবলের কারণে মাঠ পর্যায় ওষুধের তদারকি নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। অচিরে জনবল নিয়োগ এবং ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরিকে অত্যাধুনিক উন্নীতকরণের চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এমআরপি যুক্ত ওষুধের গেজেট প্রকাশ করা হবে। দ্রুত ওষুধ প্রশাসনের সমস্যা নিরসন হয়ে যাচ্ছে বলে তিনি জানান।