রোজায় ওষুধ সেবনের নিয়ম ও সময়

কিছু ওষুধ আছে, যা অনেক রোগীকে সারা বছরই সেবন করতে হয়। এসব ওষুধ রোজায় সেবনের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করে নিতে হবে। কিছু ওষুধের নিয়ম থাকে এ রকম—খাবার গ্রহণের আগে বা পরে কিংবা দিনে তিনবার। অ্যান্টিবায়োটিকের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ের ব্যাপারও থাকে। তাই রোজার সময় দিনে একবার বা দুইবার ব্যবহার করতে হয়—এমন অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়। যদি আপনার প্রেসক্রিপশনে অ্যান্টিবায়োটিক থাকে তবে ডাক্তারের কাছ থেকে ওষুধটি সেবনের সময় ভালো করে জেনে নিতে হবে।

খাওয়ার আগে সেবন করতে হয় এমন ওষুধ
ইফতারের সময় পানি বা শরবত মুখে দিয়ে একটি ওষুধ সেবন করতে হয়। তার কিছু সময় পর ইফতারের অন্যান্য খাবার খেতে হয়। আরেকটি ওষুধ সেহরি খাওয়ার কিছু সময় আগে সেবন করতে হয়।

যদি এ ধরনের ওষুধ তিনবার খেতে হয় তবে ইফতারের সঙ্গে সঙ্গে, রাতের খাবারের আগে ও সেহরির আগে সেবন করতে হয়।

যদি একবেলা এ ধরনের ওষুধ সেবন করতে হয়, তবে সেহরির আগে বা ইফতারের সময় সেবন করুন।

যে ওষুধ খাওয়ার পরে সেবন করতে হয়
ইফতারের পর, রাতের খাবারের পর ও সেহরির পরপর খাওয়া যায়। যদি এ ধরনের ওষুধ দিনে তিনবার সেবন করতে হয়, তবে ওপরের তিন আহারের পর তা সেবন করা যায়।

দুইবার সেবন করতে হয় এমন ওষুধের ক্ষেত্রে ইফতারের পর ও সেহরির পর সেবন করা ভালো। একবার সেবন করতে হলে ইফতার বা সেহরির পর সেবন করলেই চলবে।

মনে রাখা ভালো
♦ ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তি রোজা রাখতে চাইলে রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকতে হবে। যাদের রক্তে চিনির মাত্রা অনিয়ন্ত্রিত, বিশেষ করে যাদের হাইপোগ্লাইসেমিয়া বা চিনির মাত্রা অতি কমে যাওয়ার প্রবণতা আছে, তাদের রোজা না রাখাই ভালো। তবে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার এমন কিছু ওষুধ আছে, যা হাইপোগ্লাইসেমিয়া থেকে রক্ষা করে। এ ধরনের রোগীরা রোজা রাখতে চাইলে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে ওষুধ ব্যবহার করতে পারেন।
♦ পানিস্বল্পতা হলে মাইগ্রেনের তীব্রতা বাড়ে; তাই এ ধরনের রোগীদের যেন রোজায় পানির ঘাটতি না হয় সেটা বিশেষভাবে লক্ষ রাখতে হবে।
♦ কানের পর্দা ছেঁড়া থাকলে কানের ড্রপ রোজা রেখে ব্যবহার না করাই ভালো।
♦ রোজা রেখে অ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশন নেওয়া যায়। তবে শক্তি বাড়ায় এমন কিছু দেওয়া যাবে না।
♦ রোজা রেখে দাঁত তোলাসহ অন্যান্য ডেন্টাল চিকিৎসা করা যায়। তবে কোনো কিছু যেন গলার অভ্যন্তরে চলে না যায়।

যেসব ওষুধ রোজা অবস্থায় প্রয়োগ করা যায় না

♦ জেনারেল অ্যানেসথেশিয়া বা পুরোপুরি অজ্ঞান করার ওষুধ
♦ তরল যেকোনো ওষুধ, যা মুখে সেবনযোগ্য
♦ ক্যাপসুল বা ট্যাবলেট
♦ পানি মেশানো আছে এমন ইনহেলার
♦ নাকের ড্রপ—যদি গলার ভেতরে যায়

যেসব ওষুধ রোজা অবস্থায় প্রয়োগ করা যায়
♦ লোকাল অ্যানেসথেশিয়া বা স্থানিক অবচেতনকারী ওষুধ, যেমন দাঁতের চিকিৎসায় ব্যবহৃত অ্যানেসথেশিয়া
♦ গিলে খেতে হয় না এমন কিছু ওষুধ (জিহ্বার নিচে ব্যবহৃত জীবন রক্ষাকারী নাইট্রোগ্লিসারিন)
♦ জীবন রক্ষাকারী ইনজেকশন, ইনসুলিন
♦ ক্রিম, লোশন ও ত্বকের বাহ্যিক অংশে ব্যবহৃত ওষুধ

ডা. ফাহিম আহমেদ রূপম

Exit mobile version