॥ ই-হেলথ২৪ প্রতিনিধি॥ সাধারণ আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে জীবনরক্ষাকারী অতি প্রয়োজনী ওষধের। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে ওষুধের দাম। সিলেটে দেশীয় ওষুধের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের দাম বৃদ্ধির ফলে কাঁচামাল আমদানি ও উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ার দোহাই দিয়ে শীর্ষ কোম্পানিগুলো নিত্যপ্রয়োজনীয় ওষুধের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে।
ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও সরবরাহ কম হওয়ায় ইচ্ছামাফিক বেশি দামে ওষুধ বিক্রি করছে বিক্রেতারা। শিগগির দাম বৃদ্ধি পাবে এমন আগাম খবরে একশ্রেণীর ওষুধ ব্যবসায়ী নিত্যপ্রয়োজনীয় ও বহুল প্রচলিত ওষুধের মজুদদারিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। বড় বড় ব্যবসায়ী বেশি মুনাফার আশায় বর্তমান মূল্যে আগাম চালান কেটে রাখছে।
গত তিন মাসেরও কম সময়ের ব্যবধানে নিত্যপ্রয়োজনীয় ও অত্যাবশ্যক বহু ওষুধের দাম বৃদ্ধির নিশ্চিত তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া সম্প্রতি দাম বেড়েছে কিংবা নিকট ভবিষ্যতে দাম বৃদ্ধি পাবে এমন ওষুধের আগাম খবরেরও তথ্য পাওয়া গেছে।
সিলেটের চৌহাট্টা, বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, আম্বরখানাসহ শহরের অনেক এলাকার বিভিন্ন খুচরা ওষুধ বিক্রেতা ফার্র্মেসিতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রয়োজনীয় অত্যাবশ্যক নিত্যব্যবহার্য বিভিন্ন ধরনের ওষুধ কিনতে গিয়ে বেশি দাম শুনে হোঁচট খাচ্ছে ক্রেতারা। তারা জানিয়েছে, কিছুদিন আগেও যে দামে ওষুধ কিনেছে, এখন গিয়ে আর সেই দামে ওষুধ পাচ্ছে না। এ নিয়ে ওষুধ বিক্রেতাদের সঙ্গে তাদের প্রতিদিনই কথা কাটাকাটি ও ঝগড়া-বিবাদ হচ্ছে।
ফার্মেসির মালিক-কর্মচারীরা তাদের মুখের ওপর বলছে, ‘এখন যে দামে পাচ্ছেন, কিছুদিন পর এই দামেও পাবেন না, এরই মধ্যে কোম্পানি দাম বৃদ্ধির আগাম নোটিশ দিয়ে গেছে। দেশের ওষুধের বাজার দেখভাল করার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর। অথচ ওষুধের দাম বৃদ্ধির ব্যাপারে তারা ক্রেতাদের আগাম কোনো তথ্য জানাচ্ছে না।
একজন ওষুধ শিল্প বিশেষজ্ঞ বলেন, ওষুধের বাজারের ওপর কার্যত অধিদফতরের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। বর্তমানে বাজারে হাজার হাজার ব্র্যান্ডের ওষুধের ছড়াছড়ি। এগুলো দেখভাল করতে যে জনবল প্রয়োজন, তা অধিদফতরে নেই। ফলে কোন ওষুধের দাম কতটা বাড়ছে তার কোনো খবর তাদের কাছে নেই। দুবছরেরও বেশি সময় আগে ঢাকঢোল পিটিয়ে ওষুধ প্রশাসন পরিদফতরকে অধিদফতর করা হলেও এখনো তা সাইনবোর্ড সর্বস্বই রয়ে গেছে।
শীর্ষস্থানীয় ওষুধ কোম্পানি স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের গ্যাস্ট্রিকের অ্যান্টাসিড সিরাপ এক লাফে ৩২ থেকে ৬৫ টাকা, অ্যান্টাসিড প্লাস সিরাপ ৫৫ টাকা হয়ে গেছে। এক পাতা সেডিল মাত্র কিছু দিন আগে ৬ টাকায় বিক্রি হলেও এখন দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে ১৪ টাকা।
বেক্সিমকো কোম্পানির যেসব ওষুধের দাম বৃদ্ধির আগাম নোটিশ দেওয়া হয়েছে সেগুলো হল_ প্রডেক্স সিরাপ, ফ্ল্যামিড ডিএস সিরাপ, স্পুলিট সিরাপ, জাইমেট ট্যাবলেট, এরোস্টোবিট-এম, অ্যান্টাসিড ম্যাক্স, জেট্রিল শূন্য দশমিক ৫, জেট্রিল ২ এমজি, ইমোনিয়াম ইনজেকশন, ইমোনিয়াম ট্যাবলেট, ফ্লুসিয়াম ৫ এমজি, ফ্লুসিয়াম ১০ এমজি, ফ্লুবেক্স ও জোলাক্স শূন্য দশমিক ৫ এমজি।
ডায়াবেটিসের বহুল ব্যবহূত মেটফরমিন গ্রুপের ওষুধ কোম্পানিভেদে ৫০টির প্রতি বক্সের হিসাবে দাম ২০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। প্যাসিফিক কোম্পানির মেটফো ৫০০ এমজির দাম ১৩০ থেকে ১৫০, ৫০০ এক্সআর ২৫০ থেকে ৩০০, ৮৫০ এমজি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা হয়েছে।
ড্রাগ ইন্টারন্যাশনালের ওরামেট ৫০০ এমজি ২০০ থেকে ৩০০, ৮৫০ এমজি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা হয়েছে। স্কয়ারের কমেট ৫০০ এমজি ২৫০ থেকে ৩০০ ও ৮৫০ এমজি ১৭৫ থেকে ২২৫ টাকা। এরিস্টোফার্মার গ্লুকোমেট ৫০০ এমজি ২০০ থেকে ৩০০, ৮৫০ এমজি ১৭৫ থেকে ২০০ টাকা হয়েছে।
ব্যথানাশকের মধ্যে রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালসের নেপ্রোক্সসিন গ্রুপের নেপ্রোসিন নামের ওষুধের দাম বেড়েছে। ইনডোমেথাসিন গ্রুপের অপসোনিন কোম্পানির তৈরি ইনডোমেট ২৫ এমজির প্রতি বক্স ৬০ থেকে ১০০ টাকা, ৭৫ এমজি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা, এরিস্টোফার্মার রিউমাক্যাপ ২৫ এমজি ৬০ থেকে ১০০ টাকা, ৭৫ এমজি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। বেক্সিমকোর রিবক্স ৬০ এমজি ১৮০ থেকে ২১০ টাকা, ৯০ এমজি ২৭০ থেকে ৩৬০ টাকা, ১২০ এমজির ৩৬০ থেকে ৪২০ টাকা হয়েছে।
ডেল্টা ফার্মার ইটো ৬০ এমজি ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ টাকা, ৯০ এমজি ২৭০ থেকে ৩৬০ টাকা, ১২০ এমজি ৩৬০ থেকে ৪২০ টাকা হয়েছে। গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ ৫০টির বক্সে বেক্সিমকোর অপটন ২০ এমজি ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, ৪০ এমজি ২১০ থেকে ২৪০ টাকা। রেনেটার মেক্সপ্রো (১০০টির বক্স) ২০ এমজি ৪০০ থেকে ৫৪০ এমজি (৩০টির বক্স) ২১০ থেকে ২৪০ টাকা হয়।
পপুলারের প্রোগাট ২০ এমজি (১০০টির বক্স) ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, ৪০ এমজি (৩০টির) ২১০ থেকে ২৪০ টাকা হয়েছে। ইনসেপটার পেনটোনিক্স (৫০টির বক্স) ২০ এমজি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা, ৪০ এমজি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, পপুলারের পেনটোগাট (১০০টির বক্স) ২০ এমজি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, ৪০ এমজি (৫০টির বক্স) ২০০ থেকে ২৫০ টাকা হয়েছে।
স্কয়ারের অ্যান্টাসিড (২০০টির বক্স) ১০৬ থেকে ২১০ টাকা, অ্যান্টাসিড প্লাস ট্যাবলেট (২০০টির বক্স) ২০০ থেকে ৩০০ টাকা, অ্যান্টাসিড সিরাপ ৩২ থেকে ৫০ টাকা ও অ্যান্টাসিড প্লাস সিরাপ ৩৫ থেকে ৬৫ টাকা করা হয়েছে। এরিস্টোফার্মার এবোলাক সিরাপ (১০০ এমএল) প্রতিটি ১০০ থেকে ১২০ টাকা, একমির মিল্ক অব ম্যাগনেশিয়া ১৮ থেকে ২৮ টাকা, বায়োফার্মার লেকটু ১০০ থেকে ১২০ টাকা।
এরিস্টোফার্মার কর্টিসল আইড্রপ ৯০ টাকা থেকে ১০০ টাকা, এজেড আইড্রপ ১১০ থেকে ১২০ টাকা, সাইপোরিন আইড্রপ ১৯০ থেকে ২১০ টাকা, ব্রডিল ১৬ থেকে ২৩ টাকা, স্কয়ারের সালটোলিন ১৬ থেকে ২৩ টাকা, গ্ল্যাক্সোর বেনটোলিন ১৬ থেকে ২৩ টাকা করা হয়। এলাট্রল ১৬ টাকা থেকে ২০ টাকা করা হয়।
ইনসেপটার কেলবিমেক্স প্লাস (৩০টির কৌটা) ৯০ থেকে ১২০ টাকা, বায়োফার্মার অর্থোক্যাল ডি ৯০ থেকে ১২০ টাকা করা হয়। অ্যান্টিসেপটিক সলিউশন জেশন কোম্পানির পভিসেপ (১০০ এমএল) ৩৪ থেকে ৪৪ টাকা।
ডায়াবেটিস রোগীদের চিনির পরিবর্তে স্কয়ারের জিরোক্যাল নামের সাচেট তিনদফায় দাম বেড়েছে। বছরখানেক আগে দাম ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। পরবর্তী সময়ে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা এবং বর্তমানে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা করা হয়েছে। এসএমসির ওরস্যালাইন (২০টির বক্স) বছরখানেক আগে দাম ছিল ৬০ টাকা। বর্তমানে দাম বৃদ্ধি করে ৯১ টাকা করা হয়েছে।