ভেজাল খাদ্য ও ওষুধ নিয়ন্ত্রণে শক্তিশালী নিয়ন্ত্রণ সংস্থা জরুরি

॥ ই-হেলথ২৪ রিপোর্ট ॥  শাক-সবজি, ফলমূল থেকে শুরু করে মাছ-মাংসসহ সব ধরনের প্রক্রিয়াজাত খাবারেও বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্যের মিশ্রণ অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। ফলে দ্রুত বেড়ে চলেছে ক্যান্সারসহ নানা দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা। সেই সঙ্গে রোগ নিরাময়ের জন্য যে ওষুধ তাতেও ভেজালের মহোৎসব।

তাই খাদ্যের মতো স্পর্শকাতর বিষয়টিকে যথেষ্ট বিবেচনায় নিয়ে বিষাক্ত বা ভেজাল খাদ্য ও ওষুধ নিয়ন্ত্রণে খাদ্য ও ওষুধের একক শক্তিশালী নিয়ন্ত্রণ সংস্থা গঠন জরুরি।

গত ১৬ মে বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) ও ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এ অভিমত প্রকাশ করেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৈয়দ রাশিদুল হাসানের সভাপতিত্ব গোলটেবিল বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদের ডিন অধ্যাপক আ ব ম ফারুক।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. এ বি এম শহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ড. নুরুল ইসলাম, খেলাঘরের সাধারণ সম্পাদক ডা. লেলিন চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক খালেদা এদিব, বিসিএসআইআর এর খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক পরিচালক ড. কে এম ফরমুজুল হক প্রমুখ।

মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বলেন, শাক-সবজি, ফলমূল থেকে শুরু করে মাছ-মাংসসহ সব ধরনের প্রক্রিয়াজাত খাবারে বিষাক্ত রাসায়নিকের মিশ্রণ অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠেছে। ফলে দ্রুত বেড়ে চলেছে ক্যান্সারসহ নানা দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা। সেই সঙ্গে রোগ নিরাময়ের জন্য যে ওষুধ তাতেও ভেজালের মহোৎসব। ফলে ওষুধে রোগ নিরাময় না হয়ে রোগ জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে অবশেষে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। এদিকে ভেজাল খাদ্য ও ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণে সুনির্দিষ্টভাবে কোনো প্রতিষ্ঠান না থাকার কারণে নকল-ভেজাল রোধে কোনো যথার্থ ভূমিকা পালন করতে পারছে না।

আরও জানা যায়, ব্যবসায়ীরা দুধ সংরক্ষণে ফরমালিন, শুঁটকি সংরক্ষণে ডিডিটি ও হেপ্টাক্লোর, কৃত্তিম উপায়ে ফল পাকাতে ক্যালসিয়াম কার্বাইড, কপার সালফেট, পটাশের লিকুইড সলিউশনসহ বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করছে ব্যবসায়ীরা। মাছ, মুরগি, গরু মোটাতাজাকরণে হরমোন ব্যবহার করছে। এইসব বিষাক্ত খাদ্যের প্রভাব পড়ছে শিশুসহ সকল বয়সের মানুষের ওপর। শিশুরা কম বয়সেই অস্বাভাবিকভাবে স্থূল হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া শ্বাসকষ্ট, এ্যাজমা, গ্যাস্ট্রিক, লিভার নষ্ট হয়ে যাওয়া, ক্যান্সারসহ নানা রকম ভয়াবহ রোগ আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। সেই সঙ্গে প্রাণরক্ষকারী ওষুধে ভেজালের ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।

বৈঠকে অন্যান্য বক্তারা বলেন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের আওতায় অন্যান্য বিষয়গুলোর সঙ্গে খাদ্য ও ওষুধের মতো স্পর্শকাতর বিষয়টিকে বিবেচনা করা হচ্ছে। ১৯৫৯ সালে যখন বিশুদ্ধ খাদ্য আইনটি করা হয় তখন খাদ্যে ভেজাল মিশানোর শাস্তি ছিল তখনকার প্রেক্ষিতে বেশ কড়া। কিন্তু কালক্রমে টাকার মূল্যমান এবং মানুষের মূল্যবোধ উভয়ই অব্যাহতভাবে নেমে আসার কারণে এই শাস্তির বিধানগুলোর ধার কমে আসতে থাকে। ফলে মানুষ আর আগের মতো শাস্তিতে ভয় পায় না। সেই সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তা যাদের তদারকি করার কথা তাদের ব্যর্থতা এক্ষেত্রে পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটায়। ফলে যতই দিন যাচ্ছে খাদ্যে ভেজাল মেশানোর প্রকৃতি ও মাত্রা ততই বাড়ছে।

তারা আরও বলেন, সৎ খাদ্য উৎপাদক-বিক্রেতা ও খাদ্যের ক্রেতারা এই সমস্যার নিরসন চান, এখন শুধু সরকারকে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। কেননা এভাবে বিষাক্ত-ভেজাল খাদ্যের ব্যাপকতা চলতে থাকলে স্বাস্থ্যহানির ভয়ে আমাদের দেশের উৎপাদকদের খাদ্য থেকে মানুষ একসময় মুখ ফিরিয়ে নেবে। তখন বিদেশি খাদ্য সামগ্রী এসে আমাদের এই বিশাল বাজার দখল করবে। ফলে দেশীয় খাদ্য-শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে, এই পরিস্থিতি কখনো কাম্য হতে পারে না।

এদিকে বিশ্বের সকল উন্নত দেশেই খাদ্য ও ওষুধের মান কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। আমেরিকাসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে ভেজাল রোধে কেন্দ্রীয়ভাবে গড়ে তোলা হয়েছে নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানে রয়েছে স্বায়ত্বশাসন, আর রয়েছে কাজ করার স্বাধীনতা ও অপরাধীদের শাস্তি প্রদানের সুপারিশের ক্ষমতা।

বাংলাদেশেও ভেজাল রোধ অবশ্যই সম্ভব এবং এই কাজে সরকারি ভূমিকা অত্যন্ত জরুরি। তাই খাদ্যের বিষয়টিকে যথেষ্ট বিবেচনায় নিয়ে বিষাক্ত বা ভেজাল খাদ্য ও ওষুধ নিয়ন্ত্রণে খাদ্য ও ওষুধের একক নিয়ন্ত্রণ সংস্থা গঠন অত্যন্ত জরুরি বলে মন্তব্য করেন বক্তারা।

Exit mobile version