কোরবানির বর্জ্য পরিষ্কারে কী করবেন

কোরবানির বর্জ্য পরিষ্কারে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি নিতে হবে ব্যক্তিগত উদ্যোগও-এমনটা বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশের পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের নেতা এবং প্রিভেনটিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, “কোরবানির সময় যে বিপুল পরিমাণ বর্জ্য তৈরি হবে তা শুধুমাত্র কর্তৃপক্ষের ঘাড়ে চাপালেই চলবে না। ব্যক্তি পর্যায়েও কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে।” সুত্র: বিবিসি বাংলা।

তিনি বলেন, এককভাবে, যৌথভাবে বা সমন্বিতভাবে যদি নাগরিকরা বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় অংশ নিতে পারে তাহলে পুরো নগরী বর্জ্যে ডুবে যাবে না।

“এরআগে আমরা দেখেছি, অনেক নাগরিকই কোরবানির পরে বর্জ্যটা যেকোন স্থানে রেখে চলে যায়। এতে একদিকে যেমন নাগরিক সেবা বিঘ্নিত হয়, তেমনি নগর কর্তৃপক্ষ এটা পরিষ্কার করতে সময় নেয়। ফলে সেখান থেকে দুর্গন্ধ এবং রোগজীবাণু ছড়ায়,” তিনি বলেন।

রাজধানী ভাটারার নূরের চালা এলাকার বাসিন্দা আক্তার জাহান শিল্পী বলেন, কোরবানির বর্জ্য পরিষ্কার করতে ঈদের আগেই নিজেদের মতো করে ব্যবস্থা নিয়েছেন তারা।

তিনি বলেন, “কোরবানি হয়ে যাওয়ার পরে যে বর্জ্যগুলো তৈরি হবে ওগুলো যাতে সাথে সাথে ব্লিচিং পাউডার ও অন্যান্য পরিষ্কারক দ্রব্য ব্যবহার করে পরিষ্কার করা হয় সে নির্দেশ এই ভবনের পরিচ্ছন্ন কর্মীদের দেয়া আছে। কোন বর্জ্য থাকবে না।

তিনি জানান, কোরবানির বর্জ্য সাধারণত পুরো সোসাইটির পক্ষ থেকে নিজে দায়িত্ব নিয়েই পরিষ্কার করে থাকেন তিনি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যক্তি পর্যায়ে বর্জ্য অপসারণের ক্ষেত্রে সচেতনতার পাশাপাশি কিছু পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। তারা যেসব উদ্যোগের কথা বলেছেন তার মধ্যে রয়েছে-

প্রথমত, যারা নিজেদের বাড়িতে বা লনে কোরবানি করবেন, তাদেরকে অবশ্যই নিজ দায়িত্বে বর্জ্য পরিষ্কার করতে হবে।

ডা. লেনিন বলেন, অনেকেই কোরবানির পর বর্জ্য নিজের বাড়ির সামনে রেখে চলে যান। সেখানে এটা পচে গন্ধ ছড়ায় এবং মশা-মাছির চারণক্ষেত্রে পরিণত হয়। যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের জন্য অপেক্ষা না করে নিজেদেরই উদ্যোগী হতে হবে বলে তিনি মনে করেন।

দ্বিতীয়ত, এককভাবে কোরবানি না করে, মহল্লা ভিত্তিক একটি নির্ধারিত স্থানে কোরবানি করা যেতে পারে। এতে নির্দিষ্ট জায়গা থেকে সম্মিলিতভাবে বর্জ্য অপসারণও সহজ হয়।

তৃতীয়ত, কোরবানির পর একই ভবনের বেশ কয়েকটি পরিবার মিলে একটি সোসাইটির বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। যেমন, সবাই মিলে বর্জ্য অপসারণের জন্য লোক ঠিক করা যেতে পারে যারা কোরবানির পর পরই বর্জ্য সরিয়ে নিয়ে যাবে। এতে বর্জ্য অপসারণ দ্রুততর হয় বলে পরিবেশের উপর তেমন প্রভাব পড়ে না।

চতুর্থত, জবাই কৃত পশুর গোবর ও উচ্ছিষ্ট আলাদা করে খোলা ভাবে না ফেলে সেগুলো ব্যাগে ভরে নির্ধারিত স্থান যেমন নিকটস্থ ডাস্টবিন বা কন্টেইনারে ফেলতে হবে। সেখান থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ বর্জ্য সহজেই সরিয়ে নিতে পারে।

পঞ্চমত, পশু জবাইয়ের স্থানে কোরবানির পর পশুর রক্ত জীবাণুনাশক পানি দিয়ে ধুয়ে দিয়ে ব্লিচিং ছিটিয়ে দিতে হবে। যাতে করে দুর্গন্ধ বা জমে থাকা পানিতে মশা ডিম পারতে না পারে।

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণের সিটি কর্পোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমোডোর মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন জানান, কোরবানির বর্জ্য পরিষ্কারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

তিনি জানান, “২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এলাকা থেকে পরিষ্কার করে একে স্বাস্থ্যকর, পরিচ্ছন্ন ও দুর্গন্ধমুক্ত পরিবেশ নাগরিকদের ফিরিয়ে দিতে সব ধরণের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।”

এসব কার্যক্রম নগর ভবনে স্থাপিত কেন্দ্রীয় লাইভ মনিটরিং সেল থেকে সব সময় নজরদারি করা হচ্ছে।

তিনি জানান, “আমাদের একটা কন্ট্রোল রুম আছে যেটার নম্বর ০২৯৫৫৬০১৪। এই নম্বরে ফোন করলে যে কেউ সিটি কর্পোরেশনের সাথে যোগাযোগ করে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সহায়তা পেতে পারে।

Exit mobile version